ঘামাচি কি?
হিট ব়্যাশ, চলতি ভাষায় যাকে আমরা ঘামাচি বলি, তা হলো এক ধরনের চর্মরোগ। এটি ত্বকের এমন একটি অবস্থা যার ফলে চামড়াতে চুলকানি হয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল ছোপ দেখা দেয়। দেহের ঘর্মগ্রন্থিগুলোর মুখ যখন ময়লা ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য আটকে যায়, তখন ঘাম বের হতে না পেরে সেখানে আটকে গিয়ে ঘামাচি হয়। সাধারণত বছরের যে মাসগুলিতে প্রচণ্ড গরম থাকে এবং শরীরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি ঘাম হয়, সে সময় ঘামাচি হয় এবং সাধারণত ত্বকের এই সমস্যা খুব অস্বস্তিকর।

ঘামাচির প্রকারভেদ:
এটি সাধারনত ৩ ধরনের হয়। সেগুলো হলো-

  • মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা (Miliaria Cristalina): এই ধরনের ঘামাচি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে থাকে। এর তেমন কোন উপসর্গ দেখা যায় না। ত্বকের এপিডারমিস থেকে এই ঘামাচি হয়ে থাকে।
  • মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা (Miliaria Profunda): এই ধরনের ঘামাচি অনেকটা মিলিয়ারিয়া ঘামাচির মতই। এটিরও তেমন কোন উপসর্গ থাকে না অর্থাৎ মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডাও স্বাভাবিক প্রকৃতির ঘামাচি। মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা ত্বকের এপিডারমিস থেকে হয়।
  • মিলিয়ারিয়া রুব্রা (Miliaria Rubra): মিলিয়ারিয়া রুব্রা হলেই মূলত আমরা ঘামাচির যন্ত্রণা ভোগ করি। যখন অতিরিক্ত ধূলো-ময়লা জমে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে ঘর্মনালীও আবদ্ধ হয়ে যায়, তখন ঘামাচিকে মিলিয়ারিয়া রুব্রার হিসেবে ধরা হয়। ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি বা পানি ফোটা থাকলে বুঝতে হবে তা মিলিয়ারিয়া রুব্রার টাইপ ঘামাচি। এই ঘামাচি হলে ত্বক চুলকানো বা জ্বালা হবার সমস্যা হয়। ত্বকের গভীর থেকে অর্থাৎ ডারমিস থেকে এই ঘামাচি হয়।


ঘামাচির লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ঘামাচির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি শরীরে পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে এবং সহজেই তা চেনা যায়।

এই উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • চামড়ার উপর লাল ছোপ ফুটে ওঠা।
  • খুব ছোটো ছোটো ফোস্কার মতো ওঠা।
  • ত্বকে প্রচণ্ড চুলকুনি হয়।
  • গায়ের জামা কাপড় চামড়ার সঙ্গে ঘষা লাগলে খুব অস্বস্তিবোধ হয়।
  • ত্বক রুক্ষ হয়ে ওঠা এবং খসখসে হওয়া।
  • এই ধরণের উপসর্গগুলি সাধারণত ঘাড়-গলা, কাঁধ, বুক এবং পিঠে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ঘামাচি কনুইয়ের ভাঁজে এবং কুঁচকিতেও হয়।


ঘামাচির প্রধান কারণগুলি কি কি?
আমাদের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির সাথে এক ধরনের জীবাণু মিশে থাকে। এই জীবাণুর নাম স্টেফ এপিডারমাইডিস। এই জীবাণু ত্বকের লোমকূপের সঙ্গে লুকিয়ে থাকা ঘামগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় প্রতিনিয়ত শরীরে ঘাম তৈরি হতে থাকে। কিন্তু ঘামগ্রন্থির মুখ বন্ধ থাকায় সেই ঘাম বের হতে পারে না। আর তার ফলে চামড়া চুলকোতে শুরু করে এবং ছোটো ছোটো লাল ফুসকুড়ি ওঠে এবং জায়গাটা লাল হয়ে যায়।

কীভাবে ঘামাচি নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
ঘামাচি খুব সাধারণ ব্যাপার এবং সাধারণত এর ফলে শরীরে কোনও রকম জটিলতা দেখা দেয় না। ঘামাচির উপসর্গ কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে এবং সাধারণত কোনও রকম চিকিৎসা ছাড়াই ত্বক থেকে নির্মূল হয়ে যায়। যাইহোক, ঘামাচির সমস্যা যেহেতু বেশ অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে অনেক ক্ষেত্রেই, তাই চিকিৎসক ঘামচির সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে ও ত্বককে প্রশমিত করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। রোমকূপে যদি সংক্রমণ হয়, সেক্ষেত্রে আলাদা করে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

ঘামাচি প্রতিরোধক ব্যবস্থা:

  • ত্বক বা চামড়ায় যাতে ঠিকমতো হাওয়া লাগে, তার জন্য ঢিলেঢালা পোশাক পড়ুন।
  • ঠাণ্ডা এবং শুকনো পরিবেশে থাকুন।
  • শারীরিক কসরৎ বা ব্যায়ামের পরেই গোসল করে নিন।
  • ত্বকের জ্বালাভাব আটকাতে নরম জামা-কাপড় পড়ুন।
  • ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকার নেওয়া যেতে পারে যেমন, ঠাণ্ডা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের পাশাপাশি ঘামাচি হওয়া জায়গাটা ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে চুলকুনির থেকে উপশম পাওয়া যায়।


ঘামাচি হলে ভুলেও যা করবেন নাঃ

  • ভুল করেও নখ দিয়ে ঘামাচি চুলকাবেন না।
  • অতিরিক্ত খারাপ অবস্থা হলে কোন রকম প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। তবে স্টেরয়েড মলম বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
  • ঘামচি হলে নাইলনের কোনো কাপড় পরা থেকে বিরত থাকুন।
  • ঘর কখনো স্যাঁতস্যাঁতে রাখবেন না। সব সময় ঘর রাখুন আলো বাতাসসমৃদ্ধ!


ঘামাচি থেকে মুক্তির কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ঃ

  • বরফঃ ঘামাচিতে উপকার পেতে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যে সব স্থানে ঘামাচি আছে, সেখানে বরফ ঘষা। ঠাণ্ডা পানিও ভালো আরাম দেয় ঘামাচিতে।
  • নিমপাতাঃ ত্বকের যে কোনো সমস্যার সমাধান যেন নিমপাতা ছাড়া হয়ই না। ঘামাচির ক্ষেত্রেও তাই! কারণ, নিমপাতায় আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল (Anti-bacterial) উপাদান যা ঘামাচি নিরাময়ে সাহায্য করে। তাই, নিমপাতার পেস্ট শরীরে লাগিয়ে তা সম্পূর্ণ শুকাতে হবে। এভাবে ৪ থেকে ৫ বার দিনে ব্যবহার করতে পারলেই ঘামাচিকে বলা যাবে টা টা বাই বাই!
  • লেবুর রসঃ লেবুর রসে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ঘামাচি দূর করতে বেশ কার্যকরী। ঘামাচিতে উপকার পেতে দিনে ৩/৪ গ্লাস লেবুর রস মিশ্রিত পানি পান করুন।
  • অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল ঘামাচিতে অনেক আরাম দেয়। কয়েক দিন শরীরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে ঘামাচি ভালো হয়ে যায়। সেজন্য অ্যালোভেরা পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল বের করে তা শরীরে প্রলেপ মেখে নিতে হবে। জেল আপনা-আপনি শুকিয়ে গেলে পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • ফিটকিরিঃ পানি পরিশোধনে বা সেভিং লোশন-এর বিকল্প হিসেবে ফিটকিরি ব্যবহৃত হয় তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ঘামাচিতে ফিটকিরি! একথা কি সবার জানা আছে? হ্যাঁ ঘামচিতে ফিটকিরি মিশ্রিত পানি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
  • লাউঃ আমরা জানি লাউ এমনিতেই ঠাণ্ডা একটি সবজি। ঘামাচির জন্য লাউ আগুনে ঝলসে নিয়ে তা থেকে রস বের করে কিছুদিন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে