উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড কি?
ট্রাইগ্লিসারাইড একধরনের লিপিড যা আপনার রক্তপ্রবাহে দেখা যায়। ট্রাইগ্লিসেরাইড এক ধরনের এস্টার জাতীয় জৈব যৌগ যা গ্লিসারল এবং তিনটি স্নেহজ অম্ল (ফ্যাটি অ্যাসিড) অণু নিয়ে গঠিত। খাদ্যতালিকার অধিকাংশ চর্বিজাতীয় পদার্থগুলিই হল ট্রাইগ্লিসারাইড, যেগুলি প্রাথমিকভাবে ফ্যাট বা চর্বি কোষে জমা হয় এবং পরে মুক্ত হয়ে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। খাদ্যগ্রহণের পরে শর্করা বা মেদ পদার্থ থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত শক্তি বা ক্যালরি মানুষের যকৃতে ট্রাইগ্লিসেরাইডে রূপান্তরিত হয় এবং এগুলি মেদকলার উপাদান হিসেবে জমা থাকে। মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপাদিত হলে রক্তেও এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। রক্তপ্রবাহে ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চমাত্রা, যা হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া নামেও পরিচিত, শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হতে পারে। রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসেরাইড থাকলে হৃদরোগ, সন্ন্যাসরোগ (স্ট্রোক), ধমনীপ্রাচীর কঠিনীভবন (আর্থেরোস্ক্লেরোসিস), ইত্যাদি হতে পারে। মার্কিন হৃৎপিণ্ড সংস্থা (American Heart Association) হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা একশত মিগ্রা/ডেসিলিটার (১.১ মিলিমোল/লিটার) বা তার কম রাখতে সুপারিশ করেছে।

উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সাধারণত, উচ্চ মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইডের নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না।
যদিও, তারা নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন:

  • আর্টেরিওস্কেলেরোসিস - রক্তবাহক ধমনীগুলিকে সংকীর্ণ এবং কঠিন করে তোলে।
  • করোনারি হার্ট ডিজিজ - হৃৎপিন্ডের রক্তবাহক ধমনীগুলিকে কঠিন এবং সংকীর্ণ করে তোলে।
  • স্ট্রোক - মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
  • প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেটি গুরুতর পেটে ব্যথার কারণ হয়।


উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের প্রধান কারণগুলি কি কি?
উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড একাধিক কারণে বা অন্তর্নিহিত অবস্থার কারণে হতে পারে। যেমন:

  • স্থূলতা।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
  • থাইরয়েডের কম সক্রিয়তা।
  • লিভার এবং কিডনির রোগ।
  • জিনগত প্রভাব।
  • প্রাত্যহিকভাবে যতটা ক্যালরি ব্যবহার হয় তার থেকে অতিরিক্ত ক্যালরির খাদ্যগ্রহণ।
  • অলস জীবনযাপন।
  • অত্যধিক মদ্যপান।
  • ধূমপান।
  • ওষুধ, যেমন ডায়রিটিক্স (যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়), স্টেরয়েডস, জন্ম নিরোধক ওষুধ এবং ইমিউনোসাপ্রেসেন্টস (রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা নিবারক ওষুধ)।
  • যেসব মহিলা হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি বেশি।


উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?

  • চিকিৎসাগত ইতিহাস এবং অন্যান্য পরীক্ষাগুলির দ্বারা ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা নির্ণয় করা হয়।
  • আপনার রক্ত প্রবাহে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা সনাক্ত করার জন্য লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • রক্তের নমুনা সংগ্রহের আগে ডাক্তার ৮ থেকে ১২ ঘন্টা উপোশের নির্দেশ দেবেন। কারণ আহারের পরে রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের মাত্রা সাময়িকভাবে বেশি থাকে।
  • উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রার চিকিৎসায় অন্তর্নিহিত কারণগুলির মোকাবিলা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য রাখা হয়।
  • হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে একজনের সঠিক ওজন বজায় রাখা উচিত এবং যে কোন অন্তর্নিহিত কিডনি বা লিভারের রোগের চিকিৎসা করা উচিত।
  • ডাক্তার নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ যেমন স্টয়াটিন, নিয়াসিন বা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সম্পূরক হিসাবে সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।


নিজের যত্ন নেওয়া:

  • ধূমপান বা মদ্যপান এড়িয়ে চলা।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ।
  • নিয়মিত হাঁটতে যাওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরচর্চা করা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে