বন্ধ্যাত্ব কি?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সফল না হন তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি কোনো দম্পতি বাচ্চা ধারণ করতে অসফল হন বা সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কেউ সফল না হন তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, একটি মহিলা গর্ভবতী হলেও অনেক জটিলতার সন্মুখিন হন, যেমন ঘন ঘন গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসব করা, যা বন্ধ্যাত্বের আয়ত্তেই পরে।
দেখা যায় দম্পতিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং একই সংখ্যক স্বামীদের শারীরিক সমস্যা থাকে। বাকি ১০ ভাগ ক্ষেত্রে দুজনেরই সমস্যা থাকে। কিন্তু ১০ ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা অজানা থেকে যায়।
বন্ধ্যাত্বের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
কিছু লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো যা আপনার উর্বরতার অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করে, তার মধ্যে রয়েছেঃ
- অনিয়মিত মাসিক চক্র
- তীব্র শ্রোণীর ব্যথা
- এক বছরের ধরে চেষ্টা করার পরও গর্ভধারণ না করতে পারা, আপনার বয়স ৩৫ অথবা ৪০ বছরের বেশি হওয়া অথবা কোনও গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করে নিয়মিত যৌন সঙ্গম করার পরেও গর্ভ ধারণে সক্ষম না হওয়া।
- ঘন ঘন গর্ভপাত করানো বা গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকা।
- এক বছর বা এর বেশি সময় ধরে কোন রকম জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ছাড়া সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে অবশ্যই যে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর অধিক থাকলে ৬ মাস চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরী।
বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণগুলো কি কি?
বন্ধ্যাত্বের কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে।
যেসব কারণে নারীদের বন্ধ্যাত্ব হয়ঃ
- প্রেগন্যান্সির জন্য জরুরি পলিসিস্টিক ওভারি, যার মাধ্যমে একটা করে ওভাম আসার কথা, সেটা আসে না।
- জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।
- জন্মগত সমস্যার কারণে হয়ত ডিম আসছে না, তার টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো।
- আরও কিছু অসুখ আছে, যেমন: ওভারিয়ান চকলেট সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে।
- হরমোনের কারণেও হতে পারে। যেমন থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে।
- আর যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে। সেজন্য বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
পুরুষের যেসব কারণে বন্ধ্যত্ব হয়ঃ
জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ফজল নাসের বলছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যান। কেননা সন্তান না হলে শুরুতেই স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়।
পুরুষদের বন্ধ্যত্বের মূল কারণগুলো:
- একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। তার নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অণ্ডকোষ, কোন কারণে সেটি তৈরিই হয়নি।
- অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে।
- আবার শুক্রাণুর পরিমান ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
- এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও 'সিক্রেশন' হতে হবে।
- প্রজনন অঙ্গে কোন ধরনের আঘাত
- অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা
- প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা
- ডায়াবেটিস
- ছোটবেলায় মাম্পস
- এমনকি মাথায় চুল গজানোর ঔষধও পুরুষদের সন্তান ধারণের অক্ষমতার উৎস।
বন্ধ্যাত্ব কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সমস্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো বিবেচনা করার পর ডাক্তার বন্ধ্যাত্ব নির্ণয় করতে পারেন, দম্পতির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মেডিকেল ইতিহাস নেবেন, শারীরিক পরীক্ষা করবেন, এবং সন্দেহজনক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলির উপদেশ দেবেন:
- রক্ত পরীক্ষাগুলো
- প্রোজেস্টেরন পরীক্ষা (মহিলাদের মাসিক চক্রের 23 দিনের আশেপাশে)
- ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (এফএসএইচ/FSH)
- অ্যান্টি-মুলেরিয়ান হরমোন (এএমএইচ/AMH)
- থাইরয়েডের ক্রিয়ার পরীক্ষা
- প্রল্যাক্টিন মাত্রার পরীক্ষা
- ওভারিয়ান রিসার্ভ নির্ণায়ক পরীক্ষা
- প্রস্রাব পরীক্ষা
- ইমেজিং পরীক্ষা এবং পদ্ধতি
- আলট্রাসাউন্ড
- হিস্টেরোসালপিঙ্গোগ্রাফি
- সোনোহিস্টেরোগ্রাফি
- হিস্টেরোস্কোপি
- ল্যাপারোস্কোপি
- সিমেন (বীর্য) পরীক্ষা
বন্ধ্যাত্বের জন্য ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসার কার্যবিধির মধ্যে রয়েছে-
- যৌনসহবাসের শিক্ষা।
- বিভিন্ন ওষুধ যা ডিম্বের উন্নতি এবং ডিম্বস্ফোটন সংঘটিত করে, যার মধ্যে রয়েছে গোনাডোট্রোপিন ইনজেকশন এবং ক্লোমিফিন সাইট্রেট পিলস।
- সচল শুক্রাণুর উচ্চ একাগ্রতা অর্জনের জন্য ইনসেমিনেশন, এবং ওয়াশিং-এর দ্বারা সার্ভিক্সের বাইপাস করতে এটি তৈরি করা হয় এবং এটি সরাসরি জরায়ুসংক্রান্ত গহ্বরে স্থাপন করা হয়
- ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ/IVF) যেখানে ডিম শুক্রাণুর দ্বারা শরীরের বাইরে ফার্টিলাইজড বা উর্বর করা হয়।
- সারোগেসি যেখানে একটি তৃতীয় ব্যক্তি শুক্রাণু বা ডিম্ব দান করে বা একটি মহিলা ভ্রণটিকে বহন করতে সক্ষম।
- সার্জারির মধ্যে রয়েছে অ্যাবডমিনাল মায়োমেক্টমি ব্যবহার করে ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস সরিয়ে ফেলা।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ
মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা:
- মেয়েদের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে।
- ক্যালরি খাওয়া কমাতে হবে।
- ঘরে রান্না খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
- ব্যায়াম করতে হবে।
- শরীরের স্বাভাবিক ওজন রক্ষা করতে হবে।
- জীবনাচারণ পরিবর্তন করতে হবে।
- দিনে ঘুমানো, রাতে জেগে থাকার মত অভ্যাস বদলাতে হবে।
- বয়স থাকতে বাচ্চা নিতে হবে।