মাথার ত্বকের চুলকানি কি?
মাথা যেহেতু আছে, কাজেই তা চুলকাবেই। মাথার ত্বকে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা এবং অভিযোগ। কিন্তু ক্রমাগত নখ দিয়ে মাথার ত্বক চুলকে যাওয়া দারুণ বিরক্তির কাজ। তা ছাড়া করোটির ত্বকে চুলকানো বেশ স্পর্শকাতর বিষয়। যন্ত্রণাদায়ক তো বটেই। অতি চুলকানিতে ক্ষত তৈরি হতে পারে। বেশি বেশি চুলকানি হওয়া এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় 'ইচ-ক্র্যাচ লুপ'।

প্রথমে চুলকালে বেশ আরাম লাগে। কিন্তু তা খুব দ্রুত ভোগাতে শুরু করবে। একসময় ব্যথা শুরু হবে। মাঝে মাঝে আরামবোধের কারণ হলো, চুলকালে ব্যথা সৃষ্টি হয়। তখন মস্তিষ্ক সেই ব্যথা সারাতে সেরোটোনিন হরমোন নিঃস্বরণ করে। তখন কিছুটা ভালো লাগে। কিন্তু এটা বেশিক্ষণ থাকে না। সাধারণত দেহের অন্যান্য অংশের ত্বকে চুলকানি কিছুটা আরাম দিলেও মাথার চুলকানি মোটেও ভালো অনুভূতি দেয় না। এতে ত্বকে সংক্রমণ, চুলের ক্ষতি, ব্যথা, লালচে ভাব আসা এবং চুল উঠে যাওয়ার মতো বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়। একবার চুলকানি শুরু হলে তা থামানো অনেক কঠিন।

মাথার ত্বকের চুলকানির প্রধান সংযুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
মাথার ত্বকে চুলকানি নিজেই একটা উপসর্গ। এটির সঙ্গে অন্যান্য যে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হতে পারে, সেগুলি হল:

  • মাথার ত্বকে প্রদাহ।
  • খুশকি।
  • উকুনের উপস্থিতি।
  • লাল ঘা এর ছোপ।
  • স্কেলিং।
  • পুঁজ বা কঠিন আবরণ।


মাথার ত্বকের চুলকানির প্রধান কারণগুলি কি?
মাথার ত্বকে চুলকানি একটি উপসর্গ যা নিম্নলিখিত অবস্থাগুলির দ্বারা ঘটতে পারে:

  • ডার্মাটোলজিক, যা ত্বক থেকে হয় যেমন চাঁদির ছত্রাক সংক্রমণ, সরাইসিস, একজিমা এবং অন্যান্য।
  • মাথার উকুন।
  • নিউরোপ্যাথিক, অন্তর্বাহ স্নায়ু ফাইবারের অসুখ থেকে এটি হয়।
  • নিয়মানুগ রোগ, যা সারা শরীরকে প্রভাবিত করে যেমন লুপাস।
  • সাইকোজেনিক/সাইকোসোমাটিক যা মানসিক এবং মনোদৈহিক (শারীরিক অসুস্থতা যা মানসিক ফ্যাক্টর দ্বারা সৃষ্ট বা বৃদ্ধি পায়) রোগের সাথে জড়িত।


মাথার ত্বকের চুলকানির সমস্যার কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা যায়?
অন্তর্নিহিত অবস্থা যার ফলে মাথার ত্বকের চুলকানি হয়, সেই অবস্থার নির্ণয় করার জন্য আদ্যক্ষর এসসিএএলএলপি (SCALLP) দরকারী। পাঁচটি পদক্ষেপ দ্বারা মাথার খুলির চামড়ার সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা হয়। পদক্ষেপগুলি হল:

  • শুনুন: রোগীর ইতিহাস মন দিয়ে শুনুন।
  • দেখুন: ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলির সম্পূর্ণ শারীরিক মূল্যায়ন করতে হবে।
  • স্পর্শ: টেক্সচার অনুভব করার জন্য মাথার ত্বকে স্পর্শ করুন।
  • বড় করে দেখুন: মাইক্রোস্কোপ দ্বারা মাথার ত্বকের পর্যবেক্ষণ।
  • স্যাম্পল সংগ্রহ: কিছু ক্ষেত্রে, নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য একটি টিস্যু স্যাম্পল সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের দ্বারা পরীক্ষা করা হতে পারে।


মাথার ত্বকে চুলকানির চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
যখন এই সমস্যা ফলিকিউলাইটিস বা শুষ্ক ত্বক বা ব্রণর কারণে হয়, তখন টেট্রাসাইক্লিন (ডাইঅক্সিসাইক্লিন, মিনোসাইক্লিন), পিএআর-২ অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টগনিস্টের মত ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

  • যখন এই সমস্যা সোরাইসিস বা সেবোরহিক ডার্মাটাইটিসের কারণে হয় তখন অ্যান্টি-হিস্টামিন ব্যবহার করা হয়।
  • মাথার ত্বকে দাদের চিকিৎসা করার জন্য অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ সুপারিশ করা হয়।
  • মাথার ত্বকে একজিমা এবং সোরাইসিসের ক্ষেত্রে লোকাল স্টেরয়েড ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
  • নিউরোপ্যাথিক চুলকানির ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য টপিক্যাল ক্যাননাবিনয়েড রিসেপ্টর অ্যাগনিস্টস ব্যবহার করা হয়।
  • মাথার উকুনের জন্য টপিক্যাল পারমিথ্রিন ধারণকারী শ্যাম্পু বা দ্রবণ প্রয়োজন হয় যা উকুন এবং তাদের ডিম মারতে সাহায্য করে। এটা কিছুদিন টানা ব্যবহারের ভালো ফল পাওয়া যায়।


মাথা চুলকানোর প্রতিকারঃ
মাথার ত্বক বেশি চুলকালে তা থেকে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চুলকানোর সমস্যার মূল কারণ হতে পারে শ্যাম্পু। শ্যাম্পু যদি মাথার ত্বক শুষ্ক করে ফেলে তাহলে এখনি বদলে ফেলতে হবে পুরাতনটি। বেছে নিতে পারেন বেবি শ্যাম্পু।
এছাড়াও রয়েছে আরও কিছু সমাধান।

  • ঠাণ্ডা পানি: গরম পানি মাথার ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল ধুয়ে ফেলে। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও মাথা চুলকানোর সমস্যা হয়। তাই চুল ধুতে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে সমস্যা হলে কুসুম গরম পানি (অল্প পরিমাণ গরম পানি, ঠাণ্ডা পানি বেশি) দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে মাথার ত্বকের চুলকানি কমে আসবে।
  • পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস: সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সুস্থ ত্বকের জন্যেও পুষ্টিকর খাবার দরকার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, বি, সি এবং প্রচুর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাও জরুরি। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
  • লেবুর রস: চুলের জন্য লেবু অত্যন্ত উপকারী। তবে সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা জরুরি। তাজা লেবুর রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে কয়েক মিনিট অপেক্ষার পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। তাছাড়া টক দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • নারকেল বা অলিভ অয়েল: মাথার তালুর ত্বক যদি খুব শুষ্ক হয়ে যায়, তা হলে অনেক সময় চুলকায়। সেক্ষেত্রে কাজে দেবে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন নারকেল বা অলিভ অয়েলের ম্যাসাজ। চুলে তেল মাখার ঘণ্টাখানেক পর হালকা কোনও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন।
  • অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরার পাতার মাঝের নরম শাঁসটুকু বের করে নিন। তার পর আঙুল দিয়ে মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। তার পর ঠান্ডা পানিতে মাথা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু’বার এই ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে