হয়ত এ পোস্টটা পড়ে কেউ হাসবেন অথবা কেউ গালি দিবেন আমার মূর্খতার জন্য। কিন্তু আমার কারনে এক বুলবুলি বাচ্চা পাখি মারা গেল কষ্ট পেয়ে,আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কয়েকদিন আগে এক বুলবুলি মা পাখি তার বাসা বানিয়েছিল আমাদের জানালার কাছাকাছি গাছে। সেখানে পরে ২টা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল তা দেওয়ার পর। সবসময় দেখতাম কীভাবে বাচ্চাদের সে খাওয়াতো। কিন্তু পরেরদিন সকালে ঐখানে কাউকে পাইনা, ভেবেছিলাম মরে গেছে বাচ্চা দুটো, কিন্তু পরে দেখি একটা বাচ্চা জানালার গ্রিলে বসে আছে,তখন সুযোগ পেয়ে তাকে ধরেছি, ভেবেছিলাম আরেকটা বাচ্চা মারা গেছে , এটাকে পেলে বড় করে ছেড়ে দিব,এটা উড়তে পারতনা,পায়েও সমস্যা ছিল একটু,তাই অনেকবার যেতে চেলেও যেতে দেয়নি এটা ভেবে যে না উড়তে পারলে নিচের‌ প্রানীরা খেয়ে ফেলবে। কিন্তু তাকে খাঁচায় বারান্দায় রাখতাম ,তার মা ১ম দিন তেমন কিছু না খাওয়ালেও আমি রুটি ভিজিয়ে খাওয়াতাম, মাছের টুকরো খাওয়াতাম।২য় দিন প্রথম থেকেই তার মা তাকে খাওয়াতো খাঁচার উপরে ওঠে এবং সেইদিন অনেক সুস্থ ছিল, কিন্তু ৩য় দিন তার মা তাকে একবারও খাওয়াতে আসে নাই, খাবার নিয়ে আসতো , কিন্তু তাকে না দিয়ে উড়ে যেতো।তখন‌ দেখলাম তার আরেক বাচ্চা বেঁচে আছে এবং ভালোভাবেই আছে,উড়তেও পারে,দেখতেও অনেক শক্তিশালী।এটা দেখে আমার নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছিল। মা না খাওয়ানোয় বাচচাটা খুবই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল,তাই তাকে আমরা কিছু খাওয়েছি, কিন্তু অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।তেমন রেসপন্স করেনা,পরে থাকে। পরে কাল‌ রাত ৯টার সময় ড্রপার দিয়ে তাকে পানি খাইয়েছিলাম, কিন্তু তখন পাখি খেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে গেছে আর নিজের মাথা, ঠোঁট নিচে ফেলে রাখছিল 😭। মনে হয় আবার ড্রপার দিয়ে খাওয়ানো ঠিক হয়নি,একটু বেশি পানি পড়ে গিয়েছিল, এজন্য হয়তো তখন একেবারেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুক্ষণ পর মারা যায়। সে আমার পোষা প্রথম প্রানী ছিল। অনেক কষ্ট লাগতেছে আর কান্না আসছে যে আমার ভুলে আমার পাখিটাকে মরতে হলো 😭।অথচ আমি চেয়েছিলাম তাকে ঠিক করে পরে ছেড়ে দিতে। এখন যখন‌ই কোনো‌ বুলবুলি পাখির আওয়াজ শুনি তখন‌ই তার নিষ্পাপ চেহারা, তার শ্রুতিমধুর কিচিরমিচির আওয়াজ, তারে খাওয়ানোর সময় তার মুখ হা করে থাকা,তার মা আসলে তার চঞ্চলতা, তার মৃত চেহারার কথা মনে পড়ে, কান্না এসে যায়।এমনকি সে আমাকে একবারও কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেনি। কিন্তু তাকে খাওয়ানোর সময় বুঝা গেছিল সে অনেক অসহায়, শেষবার যখন‌ ড্রপার দিয়ে তখন তার চেহারা দেখেই বুঝেছি সে অনেক কান্না করছে। ঐ বাচ্চাটাকে না ধরলে সেও তার ভাইয়ের মতো সুন্দর জীবন‌ কাটাতে পারতো,অথচ আমার কাছে থাকায় বন্দী হয়ে কষ্ট করে মরতে হয়েছে,এটা ভেবে নিজের উপর ঘৃনা হয়। কেন আমি তারে ধরে তার জীবন শেষ করে দিলাম।😭তাদের তো জান্নাত জাহান্নাম নেই। ভেবেছিলাম হয়তো আরেক বাচ্চা মারা গেছে,তাই তারে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, যেহেতু মা কিছু করতে পারেনি, কিন্তু পরে বুঝলাম ওই বাচ্চাটা জীবিত  ও হেল্থ আরো ভালো,তখন কিরকম যে লাগছে,বুঝানোর মতো না,আগে জানলে ধরতাম না। কিন্তু তার সাথে ইমোশনাল এটাচ হয়ে গেছিলাম,তাকে পরিবারের সদস্য ভাবছিলাম। আমার প্রত্যেক মুহুর্তে‌ই তার নিষ্পাপ শিশু চেহারার কথা ভেবে বুক ভারি হয়ে যায়,আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগছে যে আমার ভুলের কারনে সে মারা গেল। প্রথমত তাকে ধরে স্বাধীন জীবন থেকে বঞ্চিত করেছি,খাঁচায় রেখেছি,তাকে ঠিকমতো খাওয়াই নাই,শেষে হয়তো বেশি পানি দিয়েছিলাম ড্রপার দিয়ে,যার কারনে হয়তো তখন আরো আগে মারা গেছে। কষ্ট পেয়ে পেয়ে মরলো সে। আমি কোনোভাবেই তার স্মৃতি ভুলতে পারছিনা , বিশেষ করে তখন অন্য বুলবুলি পাখির আওয়াজ শুনি,কারন বাসার আশেপাশেই তারা শব্দ করে।তার শ্রুতিমধুর আওয়াজ,নিষ্পাপ কিউঠ চেহারা, আচরণ কোনো কিছুই ভুলতে পারছি না।সে এখন মৃত যেখানে তার ভাই এত ভালো জীবন কাটাচ্ছে 🙂। আমি এই কষ্ট থেকে বের হতে পারছিনা,আর‌ প্রতিনিয়ত কান্না বের হচ্ছে আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে আমি একটা পাখির বাচ্চার মতো নিষ্পাপ একটা প্রানীকে মেরে ফেলবো। তাকে না ধরলে সে এখন‌ তার ভাইয়ের সাথে স্বাধীন জীবন কাটাতে পারতো😭। মনে হয়না‌ এই কষ্ট জীবনেও ভুলতে পারবো :) আর বাড়ির আশেপাশের পাখির আওয়াজ বিশেষ করে বুলবুলি পাখির বাচ্চার আওয়াজ তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কোনোভাবেই মানতে পারছিনা যে আমার কারনে নিষ্পাপ বাচ্চাটা মারা গেল। কি করতে পারি?😔


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে