আমি অতিতে ইসলাম ভাল করে বুঝতাম না। তখন একটি মেয়েকে আমি পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলি এবং গোপনে আমারা স্বামী স্ত্রী এর মত চলতে থাকি। কিন্তু এখন আমি আল্লাহর রহমতে ইসলাম বুঝা শুরু করেছি এবং জানতে পারিছি যে বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করা ইসলাম সমর্থন করে না। আর আমি এখন পরিবারকেও আমার বিয়ের বিষয়ে জানাতে পারছি না। কারন তারা আমার এই বিয়ে মেনে নিবেন না। এখন আমি কি করবো? আমি কি এখনো মেয়েটির সাথে সম্পর্ক আগের মতো চালিয়ে যাবো নাকি এখন আমর উচিত মেয়েটি থেকে দূরে থাকা?

 


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

একজন পুরুষ চাইলে পরিবারের সম্মতি না নিয়ে বিয়ে করতে পারে তবে নারীরা তা পারেনা ৷ যদি বিয়ের বয়স হবার পরেও নারীর অভিভাবকরা তাকে বিয়ে না দেয় তখন সে তার অন্য আত্মীয় বা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের অভিহিত করে বিয়ে করবে ৷

আপনাদের দুজনর স্বামী স্ত্রীর মতো থাকা বা আচরন এখন বৈধ নয় ৷ আপনাদের বিয়ে শুদ্ধ হয়নি ৷ স্ত্রীর পরিবার থেকে সম্মতি নিয়ে বা তার কোন অভিভাবক নিয়ে এসে বিয়ে করতে হবে ৷

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Sakib Ahmed

Call

যদিও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক সমঝদার স্বাক্ষীর সামনে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র ও পাত্রীর একজন প্রস্তাব দিলে এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নিলে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। হানাফি ফেকাহ মতে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি আবশ্যক নয়, তবে যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রকে বিয়ে করে, যার কারণে মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে বাবা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারে। যদি কুফুতে বিবাহ করে, তাহলে বাবা এ অধিকার পায় না। আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে রুশদ আন্দালুসী রহ. বলেন,

اختلف العلماء هل الولاية شرط من شروط صحة النكاح أم ليست بشرط؟ فذهب مالك إلى أنه لا يكون النكاح إلا بولي…  وبه قال الشافعي وقال أبو حنيفة وزفر والشعبي والزهري: إذا عقدت المرأة نكاحها بغير ولي وكان كفؤا جاز وفرق داود بين البكر والثيب فقال باشتراط الولي في البكر وعدم اشتراطه في الثيب

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবক শর্ত কি শর্ত নয় এই বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মালেক রহ.-এর মতে অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হবে না।  এমন মতই পোষণ করেছেন ইমাম শাফেয়ী রহ.। ইমাম আবু হানীফা, যুফার, শা’বী ও যুহরী রহ. বলেছেন, যদি মহিলা অভিভাবক ছাড়া বিবাহ করে আর স্বামী যদি তার কুফু (সর্বদিক দিয়ে যোগ্য) হয় তাহলে জায়েয হবে। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ২/৮)

এক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছেই দলিল আছে। হানাফি মাযহাবেরও আছে। যার কারণে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ বলেন,

المسألة اجتهادية .. . .فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا،فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها

অর্থাৎ, এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা..সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাযহাবের উপর নির্ভর করে ওলী (অভিবাবক) ছাড়া বিবাহবে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, (বাংলাদেশ) পাকিস্তান ইত্যাদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হবে । বাতিল করতে বলা হবে না।

দুই. হানাফি মাযহাবের কয়েকটি দলিল নিম্নে পেশ করা হল–

১. আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ

অর্থাৎ, মহিলারা নিজেদের ব্যাপারে (বিয়ের ক্ষেত্রে) নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে তোমাদের কোনো গুনাহ নেই। ( সূরা বাকারা ২৩৪)

. অন্য এক আয়াতে তালাক সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে তাআলা বলেছেন, فَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অর্থাৎ তোমরা তাদেরকে তাদের স্বামীদেরকে বিবাহ করা থেকে বাধা দিবে না। (সূরা বাকারা ২৩২)

. আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন,

الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا

মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। (মুয়াত্তা মালিক ৮৮৮, সহীহ মুসলিম ১৪২১, মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ ২০৯৮, সুনানে দারেমী ২২৩৪, সুনানে তিরমিজী ১১০৮, সুনানে নাসায়ী ৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী ৩৫৭৬)

৪. সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল ﷺ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল ﷺ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল ﷺ মেয়েটিকে বললেন,

لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ

এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও। (সুনানে সাঈদ বিন মানসূর ৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া ৫৪১)

৫. বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

 جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَتْ: إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا،فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي،وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ

জনৈক মহিলা নবীজী ﷺ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল ﷺ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ ১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী ৩৫৫৫)

উল্লেখিত  দলিলসমুহ ছাড়াও আরো এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকের হস্তক্ষেপ কার্যকর হবে না। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

Call

চালিয়ে যান।কোন ভাবেই মেয়েটিরসাথে প্রতারণাকরা যাবে না।  

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ