ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মুসলিম নারীদের জন্য শাড়ি একটি অনন্য সম্পদ।
এই নারী সুলভ পোশাকী অলংকারটি যথাস্থানে সঠিক ব্যবহারের দ্বারা তারা খুব সহজেই এটিকে চক্ষু শীতলকারী ও প্রশান্তিদায়ক স্ত্রী সুলভ পোশাক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতো।
প্রাইভেসী মেইন্টেন করে স্বামীর জন্য শাড়ি পরে সাজ-সজ্জা করে একে আল্লাহ্'র সন্তুষ্টি অর্জন করার বিশেষ মাধ্যমে পরিণত করতে পারতো!
কিন্তু তা না করে তারা শাড়িকে পরিণত করলো ট্র্যাডিশনাল ও
ফেস্টিভ উপলক্ষ্য কেন্দ্রীক আকর্ষণীয় সৌন্দর্য চর্চার অনুষঙ্গ হিসেবে, যেখানে এই সৌন্দর্য অবলোকনের উপযুক্ততম ব্যক্তিটির অধিকারের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপটুকুও না করে দুনিয়ার বাকি সবার জন্য শাড়ি পরা আকর্ষণীয় প্রলুব্ধকর রূপটিকে অবলোকন করার ব্যবস্থা করা হল!
অনেকেই হয়তো এসব চিন্তা না করে নিছক একটা পোশাক হিসেবেই শাড়ি পরেন।
কিন্তু তাদেরকে বুঝতে হবে যে শাড়ি নিছকই সাড়ে বারো হাত লম্বা একটা বস্ত্রই শুধু নয়।
কিছু কিছু পোষাকের বিশেষত শাড়ির একটা নিজস্ব Avatar statement রয়েছে।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ থেকে নিয়ে প্রথম আলোর নকশাসহ বিভিন্ন পত্রিকার লাইফস্টাইল ও ফ্যাশন বিষয়ক ফিচারগুলোতে শাড়ির নিরন্তর বন্দনা,,, বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের রোমান্টিক নায়িকা চরিত্রের রূপায়নে শাড়ি পরানো, অনলাইন-অফলাইনের বিভিন্ন পরিমণ্ডলে শাড়ির ব্যাপারে **পুরুষদের** কৌতুহলী ও আসক্ত দৃষ্টি, ভাবাবেগ ও মন্তব্য ইত্যাদি প্রমাণ করে শাড়ি নিছক সাড়ে বারো হাত লম্বা একটা পোশাক নয়। সময়ের ব্যবধানে বিবর্তিত, বিকশিত ও প্রজ্জ্বলিত বিপরীতমুখী আকর্ষণের অনুঘটক!
বিভিন্ন পরিধান রীতিতে দেহকে আবৃত রেখেও সবকিছু প্রকাশ করে দেয়ার স্কোপটা শাড়িতেই সবচেয়ে বেশি---এই ম্যাসেজটাকেই আকাশ সংস্কৃতি তথা মিশ্র সংস্কৃতির এই যুগে বিলবোর্ড, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, টিভি সংবাদ উপস্থাপনা ও নাটক-সিনেমায় শাড়ি পরিহিত নারীর উপস্থিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।
তাই চোখ বন্ধ করে যতই মার্জিত, শালীন, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ধারক-বাহক হওয়ার তকমা শাড়ীতে লাগানো হোক, সূক্ষদর্শী ও অনুভূতি সম্পন্ন একজন নারী বাস্তবতাকে ধামা-চাপা দিয়ে কিংবা বুঝেও না বুঝার ভান করে এড়িয়ে গিয়ে যেতে পারেননা!!!
নারীদের জন্য শাড়ি এমন একটা পোশাক যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। শাড়ি পরে প্রকৃত পর্দা কখনোই হয়না।
শাড়ি একটা আকর্ষণীয় সাজ-সজ্জার পোশাক।
হিজাবের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ্ তাআলা গোপনীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করার কথা বলেছেন। আর সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে নারীরা সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতেই শাড়ি পরে। এসব অনুষ্ঠানগুলোতে ১০০ জনের মাঝে এমন ১ জন মহিলা/মেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে কিনা হিজাবের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সাদামাটা ও মোটা কাপড়ের শাড়িকে হিজাব পালনের নীতিমালা মেনে পরিধান করেছে। তবে এমন অনেককেই দেখতে পাওয়া যায় যারা শ্যাম ও কূল দুই-ই রাখতে গিয়ে ফেস্টিভ লুক ও সাজ-সজ্জার উদ্দেশ্যে শাড়ি পরেন এবং সেটার মধ্যেই আক্ষরিকভাবে হিজাবটুকুও পালন হওয়ার মিথ্যা শান্তনা খোঁজার চেষ্টা করে থাকেন! বাস্তবতা একথাই বলে যে শাড়ির সার্থকতা সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার মাঝে। আর সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা প্রকাশ এবং হিজাব পালন- এই দুইয়ের মাঝে সত্যনিষ্ঠ সমণ্বয় আদৌ সম্ভব নয়।
তবে *পর্দা বা হিজাব রক্ষার বিবেচনায়* যেগুলো শাড়ির *নেতিবাচক দিক* সেগুলোই *শাড়ির পরম প্রশংসনীয় ও কাংখিত দিক* হিসেবে বিবেচিত হতে পারে *যদি নারীরা ঘরের গণ্ডিতে স্বামীর জন্য সাজ-সজ্জার উদ্দেশ্যে শাড়ি পরেন* ।
কিন্তু এই দিকটিকে বিবেচনায় না এনে কারো কারো প্রচেষ্টা,,, বোরকা ছাড়াও শুধু শাড়ি পরে কিভাবে হিজাব করা ও ঘরের বাইরে বিচরণ করা সম্ভব (!) সেটা নিয়ে ওকালতি করে যাওয়া।
আবার অনেকেই পর্দা রক্ষায় শাড়ির নেতিবাচক দিকগুলোর কারণে শাড়িকে *সম্পূর্ন পরিত্যাজ্য বিবেচনা করে বসেন* ।
অথচ *বাসায় স্বামীর জন্য সাজসজ্জা ও আকর্ষণীয় সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে* *শাড়ি একটা আদর্শ পোশাক* হতে পারে। আমাদের দেশের নারীদের শাড়ির ব্যাপারে সহজাত নারীসুলভ দুর্বলতা বা সখ রয়েছে।
আল্লাহ্'র হুকুম আর আনুগত্যের সীমারেখায় নারীরা তাদের এই সহজাত নারীসুলভ শখ আর আহ্লাদকে জলাঞ্জলী না দিয়ে পরম সার্থকতায় রূপ দিতে পারেন যদি তারা ঘরে প্রাইভেসী বজায় রেখে স্বামীর জন্য সাজসজ্জার উদ্দেশ্যে শাড়ি পরেন।
এতে একদিকে স্ত্রীরা ঈবাদাতের নেকী পাবেন। দাম্পত্য জীবনও মধুময় হয়ে উঠবে।