কেমন দেখতে হবে এসব উড়ন্ত যান?

সিনেমায় দেখা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনির উড়ন্ত যানের মত না হলেও তার কাছাকাছি কিছু তো বটেই।

বাণিজ্যিক বিমানের চেয়ে আকারে অনেক ছোট। বেশিরভাগই ডিজাইন করা হয়েছে ডানার বদলে হেলিকপ্টারের মত ঘূর্ণায়মান পাখা বা রোটার দিয়ে, যাতে গাড়িগুলো খাড়াভাবে আকাশে উঠতে বা নামতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা হল এই উড়ন্ত গাড়িগুলোর নক্সা তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে তারা দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, বিশেষ করে যানজটের শহরগুলোতে মানুষ যাতে দ্রুত তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।


তবে এই মুহূর্তে আকাশ যানের বাজার কতটা আশাব্যঞ্জক তা বলা মুশকিল। যদিও বেশ কয়েকটি নতুন গজানো প্রতিষ্ঠান পাল্লা দিয়ে বাণিজ্যিক আকাশ-যান, উড়ন্ত মোটরবাইক এবং ব্যক্তিগত উড়ন্ত ট্যাক্সি তৈরির কাজে নেমে পড়েছে।

উদ্যোক্তাদের অর্থ সহায়তা দানকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি গাড়ি ও বিমান সংস্থাগুলো এই সম্ভাবনাময় শিল্পে লগ্নি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ধারণা ২০৪০ সাল নাগাদ এটা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্প হয়ে উঠতে পারে।

এমনকি উবার কোম্পানিও এই উড়ন্ত ট্যাক্সি সেবায় তাদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। আকাশ পথে 'উবার এলিভেট' নাম দিয়ে তারা ব্যবসা করার ছক কাটছে।

ইতোমধ্যে, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আকাশ পথে পরিবহন ব্যবস্থার নতুন নিয়মনীতি ও নিরাপত্তার মান কী হবে তার রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু করেছে।

জার্মান ভিত্তিক কোম্পানি ভলোকপ্টার তাদের ভলোসিটি মডেলের বিদ্যুতশক্তি চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিকে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী এই যান আগামীতে পাইলট বিহীন উড়তে পারবে।

শুরুর দিকে ভলোসিটির পাইলট চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিতে বসতে পারবেন মাত্র একজন যাত্রী। ফলে এই রাইডের জন্য ভাড়া পড়বে একটু বেশি।

কিন্তু তারা আশা করছে যাত্রীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হলে তারা স্বয়ং-চালিত মডেল বের করবে, যেখানে চালকের প্রয়োজন হবে না। এই যান চলবে বিদ্যুতশক্তিতে, গাড়ির কোন ডানা থাকবে না। নয়টি ব্যাটারি থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতশক্তি দিয়ে গাড়ি চলবে।

বিমান ওঠানামার জন্য যেমন বিমানবন্দর বা এয়ারপোর্ট থাকে, এইসব উড়ন্ত ট্যাক্সি ওঠানামার জন্য বড় বড় শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে ভার্টিপোর্ট। এই ট্যাক্সি যেহেতু খাড়াভাবে (ভার্টিকালি) আকাশে উঠবে, তাই এই ওঠানামার বন্দরগুলোর নাম তারা দিতে চাইছেন ভার্টিপোর্ট।

ভলোসিটি বাণিজ্যিকভাবে তাদের উড়ান শুরু করবে ২০২২ সালে।


শখের খেলনা নয়

প্রাথমিক পর্যায়ে একটা উড়ানে একটা টিকেটের দাম পড়বে ৩৫০ ডলার (২৭০ পাউন্ড)। কিন্তু ভলোকপ্টার কোম্পানির ফেবিয়ান নেস্টমান বলছেন তাদের লক্ষ্য হল ক্রমশ এই খরচ প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। উবার কোম্পানিতে যেমন উবার ব্ল্যাক নামে বেশি অর্থের বিনিময়ে উন্নত সেবার ব্যবস্থা আছে, তারা সেই মডেলের পরিষেবার কথা ভাবছেন।

"তবে এটা ধনীদের জন্য একটা শখের খেলনা হোক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা হবে বড় শহরে বাস করা যে কোন মানুষের জন্য সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার অংশ," বলছেন মি. নেস্টমান। "প্রত্যেকের যেমন হেঁটে, গাড়ি করে বা সাইকেলে চড়ে যাতায়াতের সুযোগ আছে, তেমনি আকাশপথে যাতায়াতেরও সুযোগ তাদের থাকবে।"

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের আকাশ যান তৈরির জন্য বর্তমান গাড়ি নির্মাতাদের সাথে অংশীদার হিসাবে কাজ শুরু করেছে।

যেমন জাপানে স্কাই-ড্রাইভ নামে নতুন একটি স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের পূর্ণ বিদ্যুত-চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য টয়োটা কোম্পানির সাথে একজোটে কাজ করছে। বলা হচ্ছে তাদের উড়ন্ত ট্যাক্সি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র বিদ্যুত-চালিত যান যা সোজাসুজি খাড়াভাবে আকাশে উঠতে ও নামতে পারবে।

সংস্থাটি এই গ্রীষ্ম মৌসুমে বিমান চলাচল ক্ষেত্রের আশেপাশে তাদের একটি যান সফলভাবে কয়েক মিনিটের জন্য উড়িয়েছে। সেটিতে চালক ছিল।

"ভোক্তাদের দিক থেকে চাহিদা আছে। কিন্তু যানজট মুক্ত বিকল্প পরিবহন এখনও মানুষকে দেয়া হয়নি," বলছেন স্কাই-ড্রাইভের মুখপাত্র তাকাকো ওয়াদা।

"স্কাই-ড্রাইভ ভোক্তাদের চাহিদা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি দুটোই বিবেচনায় নিয়ে তাদের উড়ন্ত যান তৈরি করছে।"



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে