তেঁতুল আমাদের দেশের বসন্তকালের টকজাতীয় ফল হলেও সারা বছর পাওয়া যায়। অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। তেঁতুল দেহে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী। তেঁতুল দিয়ে কবিরাজি, আয়ূর্বেদীয়, হোমিও ও এলোপ্যাথিক ঔষধ তৈরি করা হয়। পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি।

তেঁতুলে খাদ্যশক্তির পরিমাণ নারিকেল ও খেজুর ছাড়া সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি। তেঁতুলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি আছে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক পরিমাণে আছে, এ তেঁতুল যেসব রোগের জন্য উপকারী তা হলো স্কার্ভি রোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, শরীর জ্বালা করা প্রভৃতি রোগে তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়, মেদভুঁড়ি কমায় ও পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। তেঁতুল খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে বেশি খেলে রক্তের চাপ কমে যেতে পারে। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী তেঁতুলে বিদ্যমান পুষ্টিমান উল্লেখ করা হলো।

পুষ্টি উপাদান ঃ- পাকা তেঁতুল, কাঁচা তেঁতুল ও বিলাতি তেঁতুল

১। জলীয় অংশ (গ্রাম) - ২০.৯, ৮৩.৬, ৭৯.২

২। মোট খনিজ পদার্থ (গ্রাম) - ২.৯ , ১.২, ০.৭

৩। আঁশ (গ্রাম) - ৫.৬ –১.০

৪। খাদ্যশক্তি (কিলোক্যালরি) - ২৮৩, ৬২ , ৭৮

৫। আমিষ (গ্রাম) - ৩.১ ১ - ১ ২.৭

৬। চর্বি (গ্রাম) - ০.১ ০ - ২ .০৪

৭। শর্করা (গ্রাম) - ৬৬, ৪ ১৩, ৯ ১৬

৮। ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) - ১৭০, ২৪ , ১৪

৯। আয়রন (মিলিগ্রাম) - ১০.৯ – ১.০

১০। ক্যারোটিন (মাইক্রোগ্রাম) - ৬০

১১। ভিটামিন বি১ (মিলিগ্রাম) – ০.০১ - ০.২২

১২। ভিটামিন বি ২ (মিলিগ্রাম) - ০.০৭, ০.০২ , ০.০৩

১৩। ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) - ৩, ,৬, ১০৮

তথ্য থেকে দেখা যায় পাকা তেঁতুল সবচেয়ে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। তবে এই পুষ্টিমান তেঁতুলের উৎপাদনের স্থান, জাত ও জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। আরও রয়েছে -

১। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়। তেঁতুল গাছের ছাল, ফুল, পাতা, বিচি ও ফল সবই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুল বীজের শাঁস পুরনো পেটের অসুখে উপকারী। তেঁতুল পাতার রস কৃমিনাশক ও চোখ ওঠা সারায়। মুখে ঘা বা ক্ষত হলে পাকা তেঁতুল জলে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।

২। বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা ও রক্তের প্রকোপে তেঁতুল উপকারী। কাঁচা তেঁতুল বায়ুনাশক। কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে। তেঁতুল গাছের শুকনো বাকলের প্রলেপ,ক্ষতস্থানে লাগালে তা ভালো হয়। পুরনো তেঁতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে পাশাপাশি তেঁতুলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে