শিক্ষক ও শিক্ষার দুরাবস্থা
মোঃ শাহাদৎ হোসেন


শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। শিক্ষক যারা এই মেরুদন্ড গড়েন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত করুন। খুব সল্প বেতনে তাদের যে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তা অবর্ণনীয় ,দুঃখজনক ও অমানবিক । ফলে ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষকদের এহেন অবস্থায় মেধাবীরা স্বেচ্ছায় এ মহান পেশায় আসতে চায় না। বিভিন্ন কারণে শিক্ষার উৎকর্য সাধন হচ্ছে না, গুনগত মান নিয়ে থেকে যাচ্ছে নানা প্রশ্ন।
আমাদের দেশে শিক্ষকদের সম্মানী যথাপোযুক্ত নয়। একজন বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকের বেতনের কথাই ধরা যাক, তার বেতন শুরুর স্কেল ১২৫০০/- টাকা (সর্বসাকুল্যে ১২৭৫০/- টাকা)। ফলে গড়ে দৈনিক উপার্জন ৪২৫/- টাকা এবং তা দৈনিক গড় ব্যয় যা বর্তমানে যে কোন ধরনের একজন সাধারণ গ্রেডের শ্রমিকের বেতনের চেয়ে কম। এই টাকায় নিজে ও পরিবারের সদস্যদের ব্যয়ভার বহন করা কোনভাবে সম্ভব নয়। পুষ্টিকর খাদ্য তালিকার কথা তারা কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন, নিজে ও নিজের পরিবারকে তার ব্যবস্থা করতে পারবেন না। এ অপুষ্টিতে ভোগা, রুগ্ন, হতাশাগ্রস্ত শিক্ষক যদি মেরুদন্ড সোজা করে না দাঁড়িয়ে দৈনিক ৫-৭টি ক্লাশ যথাযথভাবে পরিচালনা না করতে পারেন, তবে অদুর ভবিষ্যতে জাতীর মেরুদন্ড আর সোজা থাকবে কী করে। হতাশাগ্রস্ত ,অভূক্ত শিক্ষক কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের নীতিকথা, সুশিক্ষা আশা করা দুরাশা মাত্র। বর্তমান কালে শিক্ষকের শাসনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের করা হয়েছে সাক্ষী গোপাল, উল্টো ছাত্রের স্ট্যাম্পের আঘাতেই মৃত্যু হয় শিক্ষকের। শিক্ষক যদি শাসন করতে না পারেন সোহাগ কী করে করবেন, কী করেই বা সুশিক্ষা দিবেন। পরিবাবরে মা বাবা কর্মব্যস্ত তারাও শাসন করতে পারে না, শিক্ষকও পারে না তাহলে শাসনটা করবে কে, পুলিশ না প্রশাসন। ফলে বেড়ে যাচ্ছে কিশোর গ্যাং, অবক্ষয় হচ্ছে সমাজের। বদলির পদ্ধতি না থাকা অনেক শিক্ষককে চাকুরি করতে হয় ঘর বাড়ি ও পরিবার ছেড়ে শত শত কিলোমিটার দূরে । কখনো হতে ম্যানেজিং কমিটি অথবা প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক হেনেস্থা। শিক্ষককে কান ধরে উঠা বসা, জুতার মালা পড়ানোর মত জঘন্য ঘটনা ঘটে। পরিবার শত শত কিলোমিটার দূরে থেকে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া,পরিবহণ ব্যয়,কর্মস্থলের পাসে অবস্থান ব্যয় , পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষন, এসব যেন অসাধ্য সাধন হয়ে যাচ্ছে । ফলে এ পেশায় এসে কোনমতে জীবন ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখে শিক্ষক নিবন্ধন পরিক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে অনেক ধৈর্য ,অর্থ ,সময় ও পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যোগদান করে, এমপিও সহ সকল পদে পদে হয়রানি হয়েও অবশেষে তা ধরে রাখতে পারছেন না অনেক মেধাবী শিক্ষকরা কেবল হিসাব না মেলা বেতনের কারনে, এর চেয়ে হতাশার আর দুঃখের কী হতে পারে।
আজকাল সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ শেষে বেকারত্ব বাড়ছে। যদি প্রতিটি পর্যায়ে কর্মমুখী কোন বিষয় যুক্ত থাকত এবং ব্যবহারিকভাবে তা সম্পন্ন করত তাহলে বিশেষ কোন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানে সহায়ক হত। পাসের হার বাড়ার সাথে শিক্ষার গুনগত মান আরও বৃদ্ধির প্রয়োজন ।
জাতীর মেরুদন্ড শক্ত করতে হলে সরকারি বেসকারি, স্বায়ত্বশাসিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা)সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের বৈষম্যদূর করে যৌক্তিক সম্মানি নির্ধারণ করা, শিক্ষাকে কর্মমুখী করা। শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, সুলভে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী , অভিভাবক সবার কল্যাণ নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা খাতে আরও ব্যয় বৃদ্ধি করে সকল প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ এর মাধ্যমে শিক্ষাকে সার্বজনীন করা ও অগ্রাধিকার দেওয়া।
, শিক্ষক- দোসাইদ অধন্য কুমার স্কুল এন্ড কলেজ, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা ।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে