বয়স্ক পিতা-মাতার প্রতি প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সক্ষম ও সামর্থ্যবান সন্তানের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য নিহিত। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার দেখভাল তথা ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেন। 


এই আইনে, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বলতে সক্ষম ও সামর্থ্যবান প্রত্যেক পুত্র বা কন্যা সন্তান কর্তৃক বৃদ্ধ পিতা-মাতার খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বোঝায়। 

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ প্রসঙ্গে ৩ ধারায় বলা হয়েছে, 

# সক্ষম ও সামর্থ্যবান প্রত্যেক পুত্র বা কন্যা সন্তানের তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে; 

# কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে, সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করবে; 

# প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে; 

# কোন সন্তান বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না; 

# প্রত্যেক সন্তান তার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর নিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে; 

# পিতা-মাতা সন্তান হতে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে; 

# এবং পিতা-মাতা সন্তান হতে পৃথকভাবে বসবাস করলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তান তার দৈনন্দিন আয়-রোজগার, বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় থেকে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমত, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করবে। 


এমনকি প্রত্যেক সন্তানকে তাদের পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী এবং নানা-নানীকে ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য করা যাবে এবং এই ভরণপোষণ ধারা – ৩ মতে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ হিসাবে গণ্য হবে। 


এই আইনের ধারা ৫(১) অনুসারে, কোনো সন্তান পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করলে, তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান বা অসহযোগিতা করলে, তিনি ধারা ৫(১) এ উল্লেখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবে। 


এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য; এবং ১ম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বিচারযোগ্য হবে। তবে কোন আদালত অপরাধে সংশ্লিষ্ট সন্তানের পিতা বা মাতার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন না।



~ Russell Biswas 

Advocate,

Judges’ Court, Chittagong 

Mo – 01746-022550


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে