ক্রিপ্টোকোকোসিস কি?
ক্রিপ্টোকোকোসিস ক্রিপ্টোকোকাস প্রজাতির একটি ছত্রাক সংক্রমণ। এটা পায়রার বিষ্ঠা বা নোংরা কাঁচা ফল থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। এটা প্রাথমিকভাবে ফুসফুস, মস্তিষ্ক ও মেনিনজেসকে (মস্তিষ্কের আচ্ছাদন) আক্রান্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এটা সাধারনত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়।

ক্রিপ্টোকোকোসিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রাথমিকভাবে ফুসফুস ক্রমাগত ছত্রাকজাতীয় পদার্থের সংস্পর্শে এলে আক্রান্ত হয় এবং নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:

  • কাশি
  • শ্বাসগ্রহণে সমস্যা
  • হিমোপটাইসিস (কাশির সাথে রক্ত)
  • বুকে ব্যথা
  • জ্বর
  • হাড় ব্যথা
  • চামড়া ফুসকুড়ি
  • মাথা ব্যাথা
  • ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • ডবল দৃষ্টি।


যদি মেনিনজাইটিস হয়ে থাকে, তাহলে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:

  • মাথাব্যথা ও বমি
  • ঘাড়ে ব্যথা ও কঠিনভাব
  • আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
  • আচরণে পরিবর্তন।


ক্রিপ্টোকোকোসিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
এটি একটি ইস্ট জাতীয় ছত্রাক ক্রিপ্টোকোক্কাস নিওফরম্যানসের কারণে হয়। এই ইস্টটি মূলত মাটিতে, পচা কাঠ, পায়রা ও মুরগীর বিষ্ঠাতে পাওয়া যায়; তবে এইসব পাখিরা অবশ্য এতে অসুস্থ হয় না। এয়ারোসলাইসড ছত্রাক কণাগুলি নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণের ফলে প্রাথমিক সংক্রমণ ঘটে, যেটি লঘু প্রকারের হয়। এটি প্রধানত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিকে বেশী আক্রান্ত করে।

দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের কারণগুলো হল:

  • করোটির অভ্যন্তরস্থ চাপ বৃদ্ধি
  • চিকিৎসায় ব্যর্থতা
  • ওষুধের প্রতি শরীরের প্রতিরোধ সৃষ্টি
  • অন্য সহযোগী সংক্রমণ।


অন্যান্য জটিলতাগুলি হল:

  • মেনিনজাইটিস
  • বার বার ক্রিপ্টোকোক্কাস সংক্রমণ ঘটা।


কিভাবে ক্রিপ্টোকোক্কাস নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে ডাক্তার এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন:

  • স্বাস্থ্যগত ইতিহাস
  • শারীরিক পরীক্ষা
  • পরীক্ষাগারে পরীক্ষা: ক্রিপ্টোকোক্কাস নিওফরম্যানসের উপস্থিতি খুঁজে পেতে একটি শরীরকলার নমুনা বা শরীরের তরল যেমন রক্ত, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) বা থুতু পরীক্ষা করা হয়।
  • এই রোগের অগ্রগতি দেখার জন্য বুকের এক্স-রে বা সি টি স্ক্যান করা হয়।
  • সিএসএফের উপর নজর রাখা হয় এবং মস্তিস্কে সিএসএফের চাপ কমানো হয়।


চিকিৎসার অন্তর্গত হল ছত্রাকরোধী থেরাপি যা তিন পর্যায়ে দেওয়া হয়: প্রবর্তন, সমন্বয় সাধন এবং রক্ষণাবেক্ষণ পর্যায়। ছত্রাকরোধী ওষুধ ছয় মাস বা তার বেশী সময়ের জন্য দেওয়া হয়। সংক্রমণের তীব্রতা, শরীরের আক্রান্ত স্থান ও ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখে ওষুধ দেওয়া হয়। চিকিৎসার ডোজ, সময় ও প্রকৃতি পরিবর্তিত হয় গর্ভবতী মহিলা, শিশু ও যারা কম সুবিধাসম্পন্ন এলাকার বাসিন্দা তাদের জন্য।

  • প্রবর্তন পর্যায়: অল্পসময়ের জন্য ছত্রাকরোধী ওষুধ দেওয়া হয়।
  • সমন্বয়সাধন ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যায়: দীর্ঘ চিকিৎসা রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ কম করে দেয়।
  • কারোর কারোর শরীরে ছত্রাকের বৃদ্ধি দূর করার জন্য অপারেশনের দরকার পরে।

প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ উপসর্গ ও মৃত্যুহার কম করতে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দরকার।

চিকিৎসা-অনুসরণ:

  • রোগী প্রাথমিক চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে কিনা তা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে নজর রাখতে হবে।
  • নিয়মিত পরীক্ষা করালে তা ভবিষ্যতের জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে