ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার কি?
ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার এক ধরনের মনোব্যাধি এবং একটি গুরুতর মানসিক অসুস্থতা, যার বৈশিষ্ট্য হল অস্বাভাবিক বিষয়কে দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অসত্য কল্পনাকে সত্যি বলে মনে করেন এবং অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। এটি পূর্বে প্যারানয়েড ডিজঅর্ডার নামে পরিচিত ছিল।

ডিলিউশনের উদাহরণের দেখা মিলবে প্রাত্যহিক নানা ঘটনাতেই। এই যেমন, প্রমাণ ছাড়াই অন্যকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখা, কারও ঠোঁট নড়তে দেখেই কী বলা হচ্ছে তা অনুমান করা, কোনো দুর্ঘটনার জন্য অতীতের কোনো কর্মকে দায়ী বলে ভাবা, নিজেকে খুব সুপিরিয়র ভাবা, কেউ নজরদারি করছে এমন ভাবা ইত্যাদি।

ডিলিউশনের প্রকারভেদ:
অনেক ধরনের ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার রয়েছে। যেমন:

  • পারসিকিউটরি ডিলিউশন,
  • ডিলিউশন অব গ্র্যান্ডিয়র,
  • ডিলিউশনাল জেলাসি,
  • এরোটোমেনিয়া অর ডিলিউশন অব লাভ,
  • সোম্যাটিক ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার,
  • ইন্ডিউস ডিলিউশনাল ডিসর্ডার,
  • ব্যায়ার ডিলিউশন,
  • নন-ব্যায়ার ডিলিউশন,
  • মুড কনগ্রুয়েন্ট ডিলিউশন ও
  • মুড নিউট্রাল ডিলিউশন।



ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এটির খুব সাধারণ লক্ষণ হল অবাস্তব বিভ্রমের উপস্থিতি।

অন্যান্য উপসর্গগুলি হল:

  • অস্বাভাবিক মেজাজ পরিবর্তন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ কাজকর্মে বিরক্তি প্রকাশ বা অনেক সময় অনিচ্ছা প্রদর্শন করতে পারেন।
  • ডিলিউশন এর সঙ্গে অদ্ভুত ব্যবহার এবং হ্যালুসিনেশন বা অমূলকপ্রত্যক্ষ করা।
  • বিশৃঙ্খল চিন্তাধারা।
  • বিকৃত যুক্তি।
  • আত্মপক্ষ সমর্থনে অতিরিক্ত সজাগ থাকা যখন বিষয়টি বা অবস্থাটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।


ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারের প্রধান কারণগুলি কি কি?
প্রধান কারণগুলি হল:

  • জিনগত কারণ: এটা দেখা গিয়েছে যে ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে যদি পরিবারের কোন সদস্য মনোরোগী হয় বা স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  • জৈবিক কারণ: স্নায়ুতন্ত্রে রাসায়নিকের ভারসাম্যহীনতা।
  • পরিবেশগত বা মানসিক কারণ: মানসিক আঘাত বা মানসিক চাপ পূর্বেও থাকার ইতিহাস, অ্যালকোহল বা ড্রাগের নেশা।
  • বধির মানুষদের ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়া খুব সাধারণ বিষয়। চোখে কম দেখেন এমন কোন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা অন্য অসুস্থতা বা প্রবাসীদের মধ্যেও ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি।


ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
অন্যান্য মনোরোগের মতো, ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারেরও নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই।

  • রোগ নির্ণয়ের জন্য সঠিক ডাক্তারি ইতিহাস এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে পরীক্ষার প্রয়োজন।
  • স্নায়ুর পরীক্ষার সাথে রেডিওগ্রাফিক পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • ইলেকট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি খুব কার্যকরী ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার সনাক্ত করতে ও অবস্থা বিচার করতে।


ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় ওষুধ এবং মানসিক বা সাইকোলজিক্যাল থেরাপি উভয়ের প্রয়োজন।

  • ওষুধের মধ্যে রয়েছে : অ্যান্টিসাইকোটিকস, অ্যান্টিডিপ্রেসান্টস এবং ট্রানকু্লাইজারস।
  • হাসপাতালে ভর্তি এবং যত্নের প্রয়োজন হয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে।


সাইকোথেরাপি ব্যক্তিবিশেষ এবং পরিবারের সদস্যদের একসাথে দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তিকে বৌদ্ধিক এবং আচরণগত থেরাপি দেওয়া হয় ।

ব্যক্তিবিশেষের জন্য ব্যবহৃত থেরাপিতে ব্যক্তির বিকৃত এবং অবাস্তব চিন্তাকে চিহ্নিত করে এবং তা সংশোধন করতে সাহায্য করা হয়।

পারিবারিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত থেরাপিতে পরিবারের সদস্যদের শেখানো হয় ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীর সাথে ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি।

বৌদ্ধিক - আচরণগত থেরাপিতে রোগীর মানষিক ও সামাজিক বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে তার চিন্তা এবং ব্যবহারকে পরিবর্তন ও সংশোধন করতে সাহায্য করে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে