এমফাইসিমা কি?
সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ) রোগটির দু’টি ধরন— একটি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, অপরটি এমফাইসিমা। এমফাইসিমা হল ফুসফুসের এক বিশেষ ধরনের রোগ, যেখানে পরিবেশের নানা দূষণকারী পদার্থ দ্বারা সরাসরি ফুসফুসের একেবারে ক্ষুদ্রতম অংশ যেমন রেসপিরেটরি ব্রঙ্কিওল এবং অ্যালভিওলাসের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির ফলে ফুসফুস আকারে বড় হয়ে যায় এবং তার গ্যাসীয় আদানপ্রদানের ক্ষমতা, মানে অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে। এর ফলে বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ এবং শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি হওয়ার সমস্যা বাড়ে।

এমফাইসিমার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় এবং একজন ব্যক্তিকে তার রোজকার বিভিন্ন কাজকর্ম এবং খেলাধুলোয় বাধা দিতে পারে। এর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস এবং লাগাতার কাশির মতো আরও অন্যান্য শ্বাসের অসুখ দেখা দিতে পারে। এমফাইসিমাতে ফুসফুসে অবস্থিত অ্যালভিওলি (বায়ুথলি] ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমফাইসিমার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
এমফাইসিমার প্রধান উপসর্গগুলো নীচে বলা হলো:

  • শ্বাসকষ্ট
  • শ্বাসহীনতা
  • লাগাতার কাশি
  • ক্লান্তি
  • বুকের আকৃতিতে পরিবর্তন (ছাতি ওপরের দিকে ওঠা)
  • পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে চামড়ায় নীল ছোপ।


এমফাইসিমার প্রধান কারণগুলো কি কি?
নিম্নলিখিত কারণে এমফাইসিমা হয়:

  • দীর্ঘ সময় ধরে হাওয়াতে ভেসে বেড়ানো উত্তেজক পদার্থের সংস্পর্শে আসা।
  • ধূমপান।
  • প্রচণ্ড বায়ু দুষণের সংস্পর্শে আসা।
  • বিরল ক্ষেত্রে, এমফাইসিমা জিনগত কারণে হতে পারে।

ধূমপান এমফাইসিমার সবচাইতে বিপজ্জনক কারণ। প্যাসিভ স্মোকের সংস্পর্শে এলেও কারো এই রোগ হতে পারে। খনি শিল্পের কাজ করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমফাইসিমা পেশাগত ঝুঁকি হতে পারে। যদিও এই রোগের প্রকোপ পুরুষদের মধ্যেই বেশি, তবু দেখা গিয়েছে, গ্রামের দিকে বায়োমাস ফুয়েল বা জৈব জ্বালানি (ঘুঁটে, খড়, পাট, ঘাস ইত্যাদি) ব্যবহারকারী মহিলাদেরও এই রোগ হয়। সাধারণত মধ্যবয়সিদের, অর্থাৎ ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা থাকে।

এমফাইসিমা কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
লাংগস ফাংশন টেস্ট বা ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষার মাধ্যেম এমফাইসিমা নির্ণয় করা হয়। এই পরীক্ষাগুোলর মাধ্যমে ব্যক্তির শ্বাস নেওয়ার গতি এবং কতটা পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে, তা জানা যায়। রোগ নির্ণয়ের অন্যান্য পরীক্ষা হলো এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসায় কি এমফাইসিমা রোগ সেরে যায়?
রোগটি ক্রনিক। তাই চিকিৎসায় যে একেবারে শতকরা একশোভাগ নির্মূল হবে, তা বলা যায় না। তবে রোগের লক্ষণগুলোকে চিকিৎসার মাধ্যমে স্তিমিত করে রাখা সম্ভব হয়। কখনও তাপমাত্রা বা বাতাসের আর্দ্রতার আচমকা অনেকখানি পরিবর্তন হলে, এই রোগের লক্ষণগুলো রোগীর দেহে প্রকাশিত হয়ে ওঠে।


এমফাইসিমার চিকিৎসা:
এই রোগে চিকিৎসার প্রধান উপায়ই হল ইনহেলার। সারা বিশ্বে নানা ধরনের ইনহেলার প্রচলিত রয়েছে। এ ছাড়াও, সমস্যা বেশি হলে ফুসফুসের বেসিক ইউনিটগুলোয় সরাসরি ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় নেবুলাইজ়ার।

এ ছাড়াও, কিছু খাওয়ার ওষুধও ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। খুব সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে শর্ট কোর্স স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। ইনফেকশনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অ্যান্টিবায়োটিকও প্রয়োগ করতে হয়। সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পরেও রোগীকে নিয়মিত স্পাইরোমেট্রি বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ়ের মধ্যে থাকতে হয়। ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য এটি খুব প্রয়োজনীয়।

এই রোগীদের ভাল থাকার জন্য ভ্যাকসিন নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কিছু স্ট্রেন বলে দেয়। সেই অনুযায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আসে। সেই ভ্যাকসিন বছরে একবার করে নিতে হয়। এর সঙ্গে নিউমোকক্কাল ব্যাকটিরিয়ারও ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ডোজে ভ্যাকসিন নিতে হয়। এই ভ্যাকসিন কিন্তু এমফাইসিমা চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সাধারণত চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের বেশি ব্যক্তিদের জন্যই এই ভ্যাকসিন প্রেসক্রাইব করা হয়।

এই রোগের মাত্রা খুব খারাপ অবস্থায় গেলে সার্জারির প্রয়োজন হয়, যদিও এই রোগে সার্জারির প্রয়োজন বেশ বিরল।

এমফাইসিমা প্রতিরোধের উপায়:
কিছু রোগ প্রতিরোধক পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলি নেওয়া যেতে পারে যেন এই অসুখ বাড়াবাড়ি ও গুরুতর আকার না নেয়। এগুলি হলো:

  • ধূমপান বন্ধ করা
  • বায়ু দূষকের সংস্পর্শে না আসা
  • মাস্ক ব্যাবহার করা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • ছাতির সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় টীকা নেওয়া।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে