ফলিকিউলার লিম্ফোমা কি?
ফলিকিউলার লিম্ফোমা হল এক ধরনের নন-হজকিন লিম্ফোমা, যা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বা লসিকানালীর প্রনালীকে আক্রমণ করে। এই অবস্থা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, যা প্রথম অবস্থাতে বোঝা নাও যেতে পারে এবং অনেক বছর অবধি এর উপসর্গ অপ্রকাশিত থাকতে পারে। যদিও এই রোগে পুনরাবৃত্তি তারাতারি ঘটে। এই রোগটি সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তি যাদের ৬০ বছরের উর্দ্ধে বয়স তাদের দেখা যায়। এই রোগের ঘটনা পুরুষদের এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। ভারতবর্ষে এই রোগের ঘটনা পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় কম দেখা যায়।

ফলিকিউলার লিম্ফোমার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এটি একটি ধীর গতির রোগ, তাই উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে প্রতীয়মান হতে থাকে। এই রোগের সবথেকে সাধারণ লক্ষণটি হল, ঘাড়ের আশেপাশের অংশে, বগল, কুঁচকিতে মাংসপিন্ড বা ফোলাভাব দেখা দেওয়া। অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ওজন কমে যাওয়া।
  • খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়া।
  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।
  • রাতে খুব বেশী ঘাম হওয়া।
  • খুব পরিশ্রম না করেও ক্লান্তি বোধ করা।


যেসব জটিলতাগুলি দেখা দিতে পারে:

  • রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া।
  • প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া।
  • নিউট্রোফিলের সংখ্যা কমে যাওয়া।


ফলিকিউলার লিম্ফোমার প্রধান কারণগুলি কি কি?
ফলিকিউলার লিম্ফোমা হওয়ার পিছনে আসল কারণ এখনও জানা যায়নি। এটি সংক্রামক নয় এবং প্রধানত কোনও ক্ষতিকারক এজেন্ট বা বস্তুর সংস্পর্শে আসার ফলে হয়ে থাকে যার ফলে লিম্ফোমা সৃষ্টি হতে পারে। এটি কোন জিনগত রোগ নয়, কিন্তু সাধারণত কোন রেডিয়েশনের কারণে, বিষক্রিয়ার কারণে, এবং কোন সংক্রামক বস্তুর কারণে হয়ে থাকে। জীবনশৈলীগত কারণ এই রোগ সৃষ্টির পিছনে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে, এদের মধ্যে রয়েছে ধূমপান করা, অত্যাধিক মাত্রায় মদ্যপান করা, এবং হাই বডি মাস ইন্ডেক্স (বিএমআই) বা শরীরে উচ্চতার হিসাবে ওজন বেশী থাকা।

ফলিকিউলার লিম্ফোমা কিভাবে নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা হয়?
ফলিকিউলার লিম্ফোমা শারীরিক পরীক্ষা এবং উপসর্গের দ্বারা নির্ণয় করা হয়। অন্য কোনও অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। অন্যান্য নির্ণয়কারী পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অস্থিমজ্জার পরীক্ষা বা বোন ম্যারো পরীক্ষা।
  • সিটি স্ক্যান।
  • পিইটি স্ক্যান।


উপসর্গগুলি যেহেতু ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাই চিকিৎসক অপেক্ষা করেন দেখার জন্য যে রোগের প্রভাব বাড়ছে কিনা, একবার এটি নির্ণয় হয়ে যাওয়ার পর, নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলি করা যেতে পারে:

  • কেমোথেরাপিউটিক এজেন্টের সংমিশ্রণ।
  • টার্গেটেড থেরাপি বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি।
  • রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থেরাপি।
  • রেডিয়েশন।
  • স্টেম সেল প্রতিস্থাপন।


নিজ যত্ন রাখার কিছু উপায়:

  • দ্রুত উপসর্গগুলির নিয়ন্ত্রণ হল কার্যকরী চিকিৎসার সঠিক পদক্ষেপ।
  • বাইরের খাবার বা জাঙ্ক ফুড এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন, এর ফলে এই রোগ গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • ফলিকিউলার লিম্ফোমা ধীরে ধীরে ক্যান্সারে পরিণত হয়, যা উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময় থেকেই নজরে রাখা দরকার।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে