জিনজিভাইটিস কি?
জীবনের কোনো না কোনো পর্যায় আপনি হয়তো একটি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। খুবই কমন একটি রোগ। সেটা হল মাড়ি থেকে রক্ত পড়া। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ রোগে ভোগেন।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে বুঝতে হবে, আপনার মাড়িতে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ হয়েছে।

জিনজিভাইটিস হল একটি মাড়ির প্রদাহজনক রোগ যা দাঁতের প্লাক আহরণের কারণে সৃষ্টি হয়। প্লাক হল স্বাভাবিকভাবে রংহীন, দাঁতের উপরিভাগে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গঠিত চটচটে পাতলা পর্দা (বায়োফিল্ম)। প্লাক দাঁতের ফাঁকেও জমা হতে পারে।

যদি সঠিকভাবে যত্ন না নেওয়া হয়, তবে ক্রমশই জিনজিভাইটিস বেড়ে গিয়ে যখন প্রকট আকার ধারণ করে, তখন একে বলা হয় পেরিওডন্টাইটিস। এ অবস্থায় দাঁতটা ধীরে ধীরে মাড়ি থেকে সরে যায় এবং নড়তে থাকে এবং এর ফলে দাঁত পড়ে যেতে পারে।

যদি আপনার মাড়ি থেকে সহজেই রক্ত পড়ে কিংবা দাঁত ব্রাশের সময় রক্ত পড়ে তাহলে শুরুতেই ডেন্টিস্টের কাছে যান। জিনজিভাইটিস নিরাময়যোগ্য ও সহজে প্রতিকার করা যায়।

জিনজিভাইটিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যদি আপনি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলিকে অনুভব করেন তবে আপনার জিনজিভাইটিস থাকতে পারে:

  • লাল এবং প্রদাহজনক মাড়ি।
  • মাড়ি থেকে রক্তপাত।
  • মাড়িতে ব্যথা।
  • দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস।
  • ঠান্ডা বা গরম খাবার এবং পানীয়ে দাঁতের সংবেদনশীলতা।
  • দাঁত পরে যাওয়া।


জিনজিভাইটিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
জিনজিভাইটিসের প্রধান কারণ হল প্লাক গঠিত হাওয়া। প্লাকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে আক্রমণ করে এবং প্রদাহ ও রক্তপাত সৃষ্টি করে। এই প্লাক শক্ত হয়ে উঠে টার্টার নামক একটি পদার্থ গঠন করতে পারে যা প্লাকের থেকে কঠিন হয়।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জিনজিভাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়:

  • মুখের ভেতরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা না করা।
  • ধূমপান অথবা তামাকের ব্যবহার।
  • গর্ভাবস্থা।
  • অপুষ্টি।
  • চাপ।
  • ডায়াবেটিস, হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি)- সংক্রমণ, এবং ক্যান্সারের মত রোগ।
  • অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক ড্রাগ,ক্যান্সারের ওষুধ,গর্ভনিরোধকএবং স্টেরয়েড ওষুধের ব্যবহার।


জিনজিভাইটিস কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
যেহেতু অবস্থাটি সাধারণত ব্যথাহীন হয় তাই নিয়ম মাফিক দাঁতের ডাক্তার দেখানো, শীঘ্র মাড়ির রোগকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ পরিষ্কার করার সরঞ্জাম ব্যবহারের দ্বারা দাঁত থেকে প্লাক বের করে চিকিৎসা করা হয়।

এ সমস্যা প্রাথমিক যত্নের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে অনেক সময় যদি ভালো না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যদি আপনি ব্যাথা অনুভব করেন, তবে আপনার ডাক্তার যন্ত্রণা কমাতে কোনো বেদনাপ্রশমনকারী ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, এন্টিবায়োটিকও নির্ধারণ করা হয়। সংক্রমণটি যদি বৃহত্তর পরিমাণে মাড়িকে প্রভাবিত করে তবে দাঁত তোলার প্রয়োজন হয়।

জিনজিভাইটিস প্রতিরোধে করনীয়:

  • প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সকালে ঘুম থেকে জেগে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
  • ভালোমানের পেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন এক টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন না।
  • ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে দুই দাঁতের মাঝখানে লেগে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে হবে।
  • নিয়মিত ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন- আমলকী, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, আমড়া ইত্যাদি।
  • কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলকুচি করতে হবে।
  • ছয় মাস পরপর ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
  • প্রতিবছর অন্তত একবার বিডিএস ডিগ্রিধারী ডেন্টিস্টের কাছ থেকে ডেন্টাল স্কেলিং ও পলিশিংয়ের মাধ্যমে মাড়ি থেকে ক্যালকুলাস সরিয়ে ফেলুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে