হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি কি?
এনসেফালোপ্যাথি কথাটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় বিশৃঙ্খলা অথবা ক্ষয় পাওয়াকে বোঝায়, যার ফলে মানসিক বিভ্রান্তি বা স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথিতে, যকৃতের দুরারোগ্য অবস্থা (দীর্ঘকালীন যকৃতের অসুখ) বা যকৃৎ বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি বেশিরভাগ সেই সমস্ত ব্যক্তিদের হতে দেখা যায়, যাঁদের লিভার সিরোসিস (যকৃৎ দীর্ঘদিন দিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে যকৃতের ক্ষত আর সারে না এবং যকৃতের কার্যকারিতা হ্রাস পায়) অসুখ রয়েছে।

হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথির সাধারন উপসর্গগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • স্মৃতিলোপ
  • মনোযোগের সমস্য়া
  • বিভ্রান্তি
  • সমন্বয়ে সমস্যা
  • সতর্কতা হ্রাস
  • অকারণে মেজাজের পরিবর্তন
  • সময় এবং স্থান সম্পর্কে দুর্বল ধারণা।


উপরোক্ত উপসর্গগুলোর সঙ্গে অন্যান্য স্নায়ুবিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

  • তড়কা বা খিঁচুনি
  • বাচনভঙ্গির সমস্যা (অপমানজনক মন্তব্য)
  • থরথর করে কাঁপা
  • অনৈচ্ছিকভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠা
  • অনৈচ্ছিকভাবে চোখের নড়াচড়া
  • পেশীর দুর্বলতা

যেহেতু যকৃৎ প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই কারণে কোনও ব্যক্তি যকৃৎ-এর সমস্যার অন্যান্য উপসর্গও উপলব্ধি করতে পারেন।

হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথির প্রধান কারনগুলি কি কি?
হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথির প্রাথমিক কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে চলা যকৃতের বিকলতা। এটি বেশিরভাগ সেই ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, যাঁদের লিভার সিরোসিস আছে বা যাঁদের দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মদ্যপানের ইতিহাস আছে অথবা যাঁরা হেপাটাইটিস বি বা সি দ্বারা সংক্রমিত। এইসব সমস্যার ফলে যকৃৎ শরীর থেকে টক্সিন বার করার মতো তার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। রক্তে এইসব টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকলে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার ফলে মানসিক কার্যবিধিতে পরিবর্তন আসে এবং স্নায়বিক মনোরোগের উপসর্গ দেখা দেয়। হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি বংশগত অসুখ নয়।

হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক উপসর্গগুলি এবং রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা জনিত ইতিহাস জেনে নেন, যাতে অন্যান্য কারণের সম্ভাবনা দূর হয়। রোগ নির্ণয়ের অন্যান্য পরীক্ষাগুলি হলো:

  • রক্তপরীক্ষা করা হয় টক্সিনের উপস্থিতির যাচাই এবং যকৃতের স্বাস্থ্য মূল্যায়নের জন্য।
  • স্পাইনাল ট্যাপ টেস্ট (লাম্বার পাংচার) পরীক্ষা করা হয় সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ)-এ ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল সংক্রমণ সনাক্ত করার জন্য।
  • কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যানের মতো ইমেজিং স্টাডি মস্তিষ্কের সুস্থতা মূল্যায়ন করতে।


হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথির চিকিৎসা ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে করা হয়। অনৈচ্ছিকভাবে পেশীর নড়াচড়া ও রক্তে টক্সিনের মাত্রা কম করতে ওষুধ দেওয়া হয়। হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি সারানো যায় এবং সঠিক মেডিক্যাল কাউন্সিলিং এর সাহায্যে পরিবর্তন সম্ভব। যেহেতু হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি প্রাথমিকভাবে তাঁদেরই হয় যাঁদের যকৃতের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সমস্যা রয়েছে, তাই এই রোগ আবার হতে পারে। পুনরায় এই রোগ হওয়া আটকাতে চিকিৎসক প্রোফাইল্যাক্টিক চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে