ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা আইটিপি কি?
প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা হল রক্তের অন্যতম একটি উপাদান। থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া হল এমন একটা অবস্থা, যাতে রক্তে প্লেটলেট সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। প্লেটলেট রক্ততঞ্চনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এবং ক্ষত সারিয়ে তুলতে ও রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে। ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (আইটিপি) হল রক্তের অটোইমিউন রোগ, যাতে শরীর নিজেই প্লেটলেট নষ্ট করে দেয় আর তার ফলে প্লেটলেট এর অভাব দেখা দেয়। আইটিপিকে বলা হতো ‘ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা’। পরে জানা যায়, এর পেছনে দায়ী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম। এ জন্য এখন একে বলা হচ্ছে ‘ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’।

আইটিপিতে কী হয়, এই ইমিউন সিস্টেম দেখা যায় নিজের শরীরের নিজের অংশটাকেই সে বাইরের অংশ মনে করে। এমন একটা অ্যান্টিজেন তৈরি হয়, যেটার বিরুদ্ধে একটা অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলে। ফলে হয় কি, নিজের শরীরের যে প্লেটিলেট, সেটাকে ভেঙে ফেলে। এটি ইমিউন সিস্টেমের জটিলতা।

ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
মৃদু থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া এবং আইটিপি প্রায়শই কোনও উপসর্গ উৎপাদন করে না। গুরুতর থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া থেকে চিকিৎসাকালীন জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে শরীরের কোনও অংশ থেকে রক্তপাতের ফলে।

নিম্নলিখিত লক্ষণ আইটিপিতে দেখা যেতে পারে:

  • মূলত পারপুরা বা ত্বকের নিচে ছোট ছোট রক্তক্ষরণের চিহ্নই হলো আইটিপির মূল উপসর্গ।
  • ত্বকের নিচে পিণ্ড।
  • নাক থেকে রক্ত পড়া।
  • মাড়িতে রক্তপাত।
  • প্রস্রাব এবং মলে রক্ত।
  • ক্ষতস্থান থেকে দীর্ঘক্ষণ রক্তপাত।


ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার কারণ কি?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইটিপির তেমন কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, বিভিন্ন কারণে প্লাটিলেটের বিরুদ্ধে শরীরে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যার ফলে প্লাটিলেট কমতে থাকে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে অন্য কোনো রোগ যেমন এসএলই, লিম্ফোমা ইত্যাদি দায়ী। অনেক সময় কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও দায়ী হতে পারে।

ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
পরীক্ষা-
রক্তের সিবিসি বা ফিল্ম পরীক্ষাই আইটিপির প্রাথমিক পরীক্ষা। কিছু পরীক্ষা করা হয় সম্ভাব্য কারণগুলো মাথায় রেখে। যেমন ভাইরাস, অটো অ্যান্টিবডির পরীক্ষা ইত্যাদি। আইটিপি ছাড়াও প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আরো কিছু কারণ আছে। যেমন ব্লাড ক্যান্সার, ডেঙ্গু ইত্যাদি। রোগের ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা করে সেসব রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে বোনম্যারো পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা-

সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে আইটিপির চিকিৎসা করা হয়। এর বাইরে আরো কিছু বিশেষ ধরনের চিকিৎসা আছে যেমন ইমিউনোগ্লোবিউলিন, অ্যান্টি ডি, এজাথিউপ্রিন, এলট্রম্বোপেগ, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ইত্যাদি। তবে এই সমস্যা রক্ত পরিসঞ্চালনে কার্যকর নয়, বরং ক্ষতিকর। কোনো খাবার খেয়েও প্লাটিলেট বাড়ানো যায় না।

আইটিপি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। শিশুদের পুরোপুরি ভালো হয়ে যাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। যেসব আইটিপি ভালো হয় না তাকে ক্রনিক আইটিপি বলা হয়। এর চিকিৎসা একটু জটিল। যেকোনো আইটিপিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হয়। এতে সফলতার হার বেশ ভালো।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে