ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ কি?
ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ হল মূলত নসোকোমিয়াল প্রকৃতির। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ক্লেবসিয়েলা এমনই এক ব্যাকটেরিয়া যা প্রধানত হাসপাতালেই রোগীদের মধ্যে বেশি ছড়ায়। আর সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয়টি হল, যে কোনও অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এর জুড়ি মেলা ভার। তাই ক্লেবসিয়েলা জনিত সংক্রমণ, যেমন শ্বাসনালী বা মূত্রনালীতে সংক্রমণ, রক্ত প্রবাহের সংক্রমণ, আঘাত বা উন্মুক্ত আঘাত (ক্ষত), নিউমোনিয়া কিংবা সেপ্টিসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগী মৃত্যুর হার অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

যে সমস্ত রোগী ভেন্টিলেটরে থাকেন, ক্যাথেটার অথবা দীর্ঘদিন ধরে আন্টিবায়োটিকের ব্যবহার থেকে ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ হতে পারে। ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এই অণুজীবের প্রজাতির চিকিৎসা করা খুবই চ্যালেঞ্জের।

ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্নভাবে দেখা দেয়। এই সংক্রমণ শরীরের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। চিরাচরিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:

  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  • কাঁপুনি।
  • নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি এবং কাশি হওয়া ফ্লুর উপসর্গের মতো চেনা লক্ষণ।
  • থুতু হলদেটে রঙয়ের অথবা রক্ত মেশানো।
  • শ্বাসকষ্ট।


ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণের প্রধান কারণ হল ক্লেবসিয়েলা ব্যাক্টেরিয়া, যা ক্লেবসিয়েলা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত ধকল অনেক রকমের সংক্রমণ উৎপাদন করতে পারে আর তা শরীরে কোন জায়গায় হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। এই অণুজীবগুলি সাধারণত অন্ত্রে উপস্থিত থাকে এবং কোনও ক্ষতি করে না, কিন্তু যখন এই অণুজীবগুলি ফুসফুসের মতো অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছায়, তখন তারা গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যদি সেটা বেশি দিন ফেলে রাখা হয়। এই সংক্রমণ একজনের থেকে অন্যের দেহে ছড়াতে পারে, বিশেষ করে হাসপাতালের মতো জায়গায়।

ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ক্লেবসিয়েলা নির্ধারণ করতে গেলে প্রধানত রক্ত, থুতু অথবা প্রস্রাবের মতো নমুনার পরীক্ষা করতে হয়। ইমেজিং পরীক্ষা যেমন এক্স-রে বা পিইটি (পোজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি) স্ক্যান হয়তো ব্যবহার করা হতে পারে ফুসফুসে সংক্রমণের ক্ষেত্রে, বিশেষত, সামাজিকভাবে-লব্ধ নিমোনিয়ার ক্ষেত্রে।

যেহেতু এটি ব্যাক্টেরিয়াল অণুজীব কিছু অ্যান্টিবায়োটিক্সের প্রতিরোধী, তাই চিকিৎসা করা কঠিন হতে পারে। সংবেদনশীলতা দেখার জন্য করা অন্যান্য় অতিরিক্ত পরীক্ষার উপর নির্ভর করে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটা সবসময় বলা হয় যে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার মেয়াদ যেন পুরো করা হয় অর্থাৎ মাঝপথে যাতে বন্ধ না করে দেওয়া হয়। যেমনভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক নিলে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায়।

যদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণ খুবই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ওষুধ প্রতিরোধক এড়িয়ে চলা উচিত যাতে এই সংক্রমণ হওয়ার পরিস্থিতি না জন্মায়।

কী ভাবে ক্লেবসিয়েলার সংক্রমণ এড়ানো যায়?
রোগীর দেখভাল করার সময় চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের হাত না ধোওয়ার অভ্যাস এর জন্য দায়ী। এক জন রোগীকে দেখে অন্য রোগী দেখার আগে ভাল করে হাত ধুলে এই সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। তবে এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পদ্ধতিকেও দায়ী করেন অনেকে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সাধারণ অসুখেই কড়া অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। প্রথমেই বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিলে পরে আর তাতে কাজ হচ্ছে না। আমাদের দেশে সামান্য জ্বর এলেই কড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার অভ্যেস তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকেরাও এর জন্য দায়ী। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা গেলে ভবিষ্যতে এই জাতীয় সমস্যা কিছুটা হলেও এড়ানো যাবে। সব হাসপাতালেই ক্লেবসিয়েলার সংক্রমণ একটি বড় সমস্যা। তবে সচেতনতা থাকলেই কিছুটা হলেও এর সঙ্গে লড়াই করা যায়।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে