মায়োক্লোনাস কি?
মায়োক্লোনাস শরীরের পেশীগুলির নড়াচড়ার ব্যাধি যার ফলে হঠাৎ করে, ঝাঁকুনিপূর্ণ, অনিচ্ছাকৃতভাবে হওয়া এক বা একাধিক পেশীর নড়াচড়া পরিলক্ষিত হয়। এই ব্যাধি শরীরের এক অংশে শুরু হয় তারপর তা অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থা সমানভাবে পুরুষদের এবং মহিলাদের প্রভাবিত করে। মায়োক্লোনাস আসলে নিজে থেকে কোন রোগ নয়, অন্যান্য রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাধারণভাবে, প্রতি বছর প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সারা বিশ্বজুড়ে ১.৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হন।

মায়োক্লোনাস এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি রোগটির কারণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কোন স্নায়ুবিক রোগ ছাড়াই যে উপসর্গগুলি মানুষের মধ্যে দেখা যায় তা হল:

  • ঘুমানোর সময় ঝাঁকুনিপূর্ণ নড়াচড়া।
  • হেঁচকি।
  • ঘুম না পাওয়া।
  • হাঁটাচলা ও কথাবলা ও খাওয়ার সময় সমস্যা।
  • চলার সময় অস্থিরতা।
  • স্মৃতিশক্তি হারানো।

মায়োক্লোনাসের সংঘটনের হার ও তীব্রতা বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এবং তা অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে।

মায়োক্লোনাস এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
অনিচ্ছাকৃতভাবে, হঠাৎ নড়াচড়া ২টি প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে:

  • পেশীর সংকোচনের জন্য যাকে বলা হয় পসিটিভ বা ইতিবাচক মায়োক্লোনাস।
  • পেশীর কার্যকলাপে বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়া যাকে বলা হয় নেগেটিভ বা নেতিবাচক মায়োক্লোনাস।
  • পসিটিভ মায়োক্লোনাস সাধারণত বেশি দেখা যায় নেগেটিভ মায়োক্লোনাসের থেকে।


নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি মায়োক্লোনাসের ফলে সৃষ্টি হয়:

  • লিভার ও কিডনির কার্যকলাপে ব্যর্থতা।
  • মৃগীরোগ।
  • মস্তিষ্কে আঘাত।
  • শরীরে অক্সিজেনের অভাব।
  • সংক্রমণ।
  • সোডিয়াম,পটাসিয়াম, ও ক্যালসিয়ামের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা।
  • আফিম, অ্যান্টিপারকিনসন,অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ।
  • স্নায়ুবিক রোগ যেমন অ্যালঝাইমার’স পারকিনসনিসম।
  • স্ট্রোক।
  • ব্রেন টিউমার বা মস্তিষ্কে টিউমার।


মায়োক্লোনাস কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
প্রথমে, আপনার ডাক্তার মায়োক্লোনাসের কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন শারীরিক পরীক্ষা ও বিস্তারিত ইতিহাস জানার মাধ্যমে। কারণটি নির্ণয়ের জন্য, রক্ত পরীক্ষা করে দেখবেন ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাগুলিতে অস্বাভাবিকতা আছে কিনা। ডাক্তার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) পরীক্ষা করবেন মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা জানার জন্য ও শরীরে খিঁচুনির ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (ইইজি) করবেন। বিরল ক্ষেত্রে, জিনগত পরীক্ষা এবং ত্বকের বায়োপসি রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন হয়।

মায়োক্লোনাসের প্রতিটি পর্বের জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। মায়োক্লোনাসের কারণগুলির সংশোধন করলেই উপসর্গগুলি কমে যাবে কোন থেরাপি ছাড়াই। উদাহরনস্বরূপ, যদি মায়োক্লোনাস নির্দিষ্ট কোন ওষুধের কারণে হয়, তাহলে দ্রুত সেই ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করুন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে