অপুষ্টি কি?
অপুষ্টি বা পুষ্টির অভাব হল একটি অবস্থা, এটা এমন একটা খাদ্যাভ্যাসের ফলস্বরূপ ঘটে যেখানে পুষ্টিকর উপাদানগুলো যথেষ্ট নয় অথবা এত বেশি যে তার কারণে স্বাস্থ্যের নানাবিধ সমস্যা ঘটে। সংশ্লিষ্ট পুষ্টিকর উপাদানগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ। এটা অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্টভাবে পুষ্টির অভাবের প্রতি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে অধিক-পুষ্টিও এর অন্তর্ভুক্ত। যদি গর্ভাবস্থায় অথবা দুই বছর বয়স হওয়ার আগে পুষ্টির অভাব ঘটে, তাহলে এর ফলস্বরূপ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমস্যা হতে পারে।

অপুষ্টির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
যেকোন অপুষ্টি পুষ্টির ঘাটতির সাথে যুক্ত, এবং এই কারণে নির্দিষ্ট অপুষ্টির উপসর্গ নির্দিষ্ট থাকে। লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি আপনার দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে প্রকাশ পেতে পারে‌। অপুষ্টির সাধারণ কিছু লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • শারীরিক অবসাদ।
  • স্বাভাবিকের থেকে ওজন কম।
  • রক্তাল্পতা।
  • পেশীতে খিঁচুনি।
  • চুল পড়ে যাওয়া।
  • ফ্যাকাসে ত্বক।
  • মুখের মধ্যে ঘা।
  • আঙ্গুলে অসাড় অবস্থা।
  • মানসিক অসুস্থতা।
  • ভঙ্গুর হাড়।
  • রাতকানা বা দৃষ্টিহীনতা।
  • খিঁচুনি।
  • গলগণ্ড।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য।
  • মনঃসংযোগে অসুবিধা।
  • সারাক্ষণ ঠান্ডা লাগা।
  • কোনও ক্ষত নিরাময়ে দীর্ঘ সময় লাগা।
  • অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগা।
  • পেশীর দুর্বলতা।
  • পেট ফোলা।
  • মাথা ঘোরা।
  • শক্তির অভাব।
  • বিষণ্ণতা।
  • শুষ্ক ত্বক।
  • দাঁতের ক্ষয়।


অপুষ্টির প্রধান কারণগুলি কি কি?
অপুষ্টির প্রধান কারণগুলি হল:

  • অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যে অপুষ্টি।
  • শরীরে পুষ্টির অসম্পূর্ণ শোষণ।
  • কোলন ক্যান্সার।
  • ক্রোন'স ডিজিজ।
  • অন্ত্রে ভারসাম্যহীন ফ্লোরা।
  • পাকস্থলীতে সংক্রমণ।
  • পাচনতন্ত্রের মধ্যে প্রদাহ।
  • ওষুধপ্রয়োগ।


অপুষ্টি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
অপুষ্টি একাধিক রোগ হতে পারে, এবং তাই রোগ নির্ণয় একান্ত প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে, রোগীর চিকিত্‍সাগত ইতিহাস নেওয়া হয়, এবং নিম্নলিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়:

  • শারীরিক পরীক্ষা।
  • বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) নির্ণয়।
  • রক্তে ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘনত্বের সন্ধানে রক্ত পরীক্ষা।
  • আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।


চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি অপুষ্টির ধরনের উপর নির্ভর করবে। চিকিৎসার বিধি গুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • পুষ্টির সম্পূরক মৌখিক বা অন্যভাবে দেওয়া হয়।
  • অভাব এবং অন্তর্নিহিত রোগের কারণে অপুষ্টির চিকিৎসার জন্য ওষুধ প্রয়োজন।
  • শক্তি বাড়ানোর মতো পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ।
  • অপুষ্টি অনেক সময়ই অলক্ষিত থেকে যায় এবং নির্ণয় করা হয় একমাত্র যখন সেটা গুরুত্বর পর্যায়ে পৌছায়, তাই প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় গুরত্বপূর্ণ, এবং কোন উপসর্গকে উপেক্ষিত করা উচিত নয়। একটি উপযোগী খাদ্য পরিকল্পনা এবং পুষ্টির সম্পূরক অপুষ্টি কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো স্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করতে পারে। তার সাথে সরকারী উদ্যোগ যেমন সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান এবং সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা অপুষ্টি এড়াতে সাহায্য করতে পারে।


অপুষ্ট শিশুদের কীভাবে চিকিৎসা করা যায়?
যদি আপনি দেখেন যে আপনার শিশু দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তার পুষ্টির অভাব আছে। এ ব্যাপারে ফেলে না রেখে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসক শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা এবং সে কী ধরনের খাবার খাচ্ছে তার প্রকার ও পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এছাড়াও, চিকিৎসক শিশুটির উচ্চতা, ওজনও পরিমাপ করতে পারেন। পুষ্টির ঘাটতিগুলি পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক রক্তপরীক্ষার আদেশ দিতে পারেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে