রোদে পোড়া (সানবার্ন) কি?
সান বার্ন হচ্ছে একরকম ক্ষতি; এর ফলে ত্বকে লাল রঙের যে ক্ষতভাব দেখা যায় তা হচ্ছে মূলত রক্ত প্রবাহের আধিক্য,যা দেহের মাধ্যমে প্রেরিত হয়ে ত্বকের উপরিভাগে চলে আসে আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির (ইউভি) প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্যে। এটি সেই ব্যক্তিদের বেশি হয় যারা বাইরে রোদে বেশিক্ষণ থেকে কাজ করে।

রোদে পোড়া (সানবার্ন) এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?

  • এর প্রথম লক্ষণ হল ত্বকে লালচে ভাব এবং চুলকানি।
  • তার সাথে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা,অস্বস্তি এবং জ্বালাভাব দেখা দেয়।
  • প্রায়ই, এর ফলে আপনার ফোস্কা হতে পারে এবং ইডিমা (তরল জমার কারণে ফোলাভাব) দেখা দিতে পারে আক্রান্ত স্থানে।
  • ফোস্কা হয়তো ত্বকের উপরিভাবে হতে পারে বা ত্বকের গভীরে স্থিত হতে পারে। তা তরলে ভরা থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা সৃষ্টি হয়।
  • অন্য উপসর্গগুলি হল জ্বর, বমি বমি ভাব এবং বমি করা।


রোদে পোড়া (সানবার্ন) এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
রোদে পোড়ার প্রধান কারণ হল দীর্ঘক্ষণ ইউভি রশ্মিতে থাকা। সুর্য ছাড়া, অন্য ইউভি রশ্মির উৎস হল মানুষের তৈরি বাতি।

ঝুঁকির কারণগুলো হল:

  • যেখানে ওজোন স্তর পাতলা হয় বা থাকে না সেখানকার অধিবাসীদের রোদে পোড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • মাঝ বয়সী বা কিশোরদের থেকে বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষদের সম্ভাবনা বেশি হয় রোদে পোড়ার।
  • যাদের গায়ের রঙ ফর্সা হয় তাঁদের রোদে পোড়ার ঝুঁকি বেশি হয়, কারণ তাঁদের সহ্যশক্তি কম রোদে থাকার যা মেলানিনের অভাবের জন্য হয়।
  • খুবই কম ক্ষেত্রে, বংশগত কারণে রোদে পোড়ার সম্ভাবনা থাকে, এই অবস্থাকে জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম বলে।
  • রোদে পোড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের জন্য, যেমন সালফা ড্রাগ, ডাইফেনহাইড্রামাইন, প্রমেথাজাইন, অ্যামিট্রিপ্টিলাইন এবং অনান্য ওষুধ।


রোদে পোড়া (সানবার্ন) কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
রোদে পোড়া হল চিকিৎসাগতভাবে একটা স্বাভাবিক সমস্যা, তাই, নির্ণয় প্রধানত হয় অন্য ত্বকের রোগ থেকে এই সমস্যাকে আলাদা করে যেমন অ্যালার্জি, ফোটো অ্যালার্জি এবং ফোটো-টক্সিসিটি প্রতিক্রিয়াগুলি।

  • বেশিরভাগ রোদে পোড়া সেরে যায় কিছু সপ্তাহের মধ্যে, যদি এরপরে রোদে বেশিক্ষণ থাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • প্রদাহনাশক ওষুধ যা প্রদাহ এবং ব্যথা থেকে রেহাই দেয়। অ্যাস্পিরিনও ওষুধ হিসাবে দেওয়া হয় এক্ষেত্রে।
  • লালচে ভাব কমানোর জন্য, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, জেল এবং ঠান্ডা পানিতে গোসল করার উপদেশ দেওয়া হয়।
  • রোগীকে বেশি করে পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেহেতু রোদে পোড়ার ফলে ত্বকে থেকে পানি শোষিত হয়ে যায়।


সান বার্নের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়ে:

  • সান বার্নের সমস্যা দূর করতেও দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, একটা পাত্রে প্রথমে ৪ থেকে ৫ চামচ দই নিয়ে নিন। এবার তাতে ১ চামচ চিনি মিশিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে দিন। এবার দই শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত দই এবং চিনির মিশ্রন ত্বকে ব্যবহার করলে সানবার্নের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • বেকিং সোডা দিয়েও ত্বকের পোড়া দাগ তুলে ফেলা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের প্রায় প্রত্যেকের রান্নাঘরেই বেকিং সোডা থাকে। এক থেকে দু চামচ বেকিং সোডা নিয়ে তাতে অল্প পানি মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করুন। এবার সেই মিশ্রন ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ জায়গায় লাগিয়ে দিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে পেঁপে। কয়েক টুকরো পেঁপে নিয়ে ভালো করে চটকে নিতে হবে। এবার তাতে মধু মিশিয়ে সান বার্ন হওয়া অংশে লাগান। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কয়েকদিন টানা পেঁপে এবং মধুর মিশ্রন ব্যবহার করলেই গায়েব হয়ে যাবে ত্বকের পোড়া কালো দাগ।
  • ত্বকের জন্য দারুণ উপকার শশা। শশা পাতলা পাতলা টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এবার সেই টুকরো ত্বকের কালো হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে