পায়ে ব্যথা কি?
পায়ের ব্যাথা একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা যা প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে কোনও না কোনও সময়ে হয়ে থাকে। কুঁচকি এবং পায়ের গোড়ালির মধ্যেকার এলাকায় যে কোনও জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব হলে তাকে পায়ের ব্যাথা বলে চিহ্নিত করা হয়। পায়ের ব্যথা কোনও ব্যাধি নয় তবে বিভিন্ন অস্বাভাবিক অবস্থার উপসর্গ, যেমন রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধা, জখম পেশি, হাড় ভাঙা বা স্নায়ুর সমস্যা। আঘাতের জন্য সমস্যা হলে বা একদিনের মধ্যে ব্যাথা না কমলে অন্যক্ষেত্রে খুব কম সময়েই এটি চিন্তার বিষয় হয়।

পায়ে ব্যথার উপসর্গ কি কি?
পায়ের ব্যাথার বিভিন্ন উপসর্গ থাকতে পারে। পায়ের ব্যাথার মূল কারণের ওপর নির্ভর করে ব্যাথার প্রকার কেমন হবে। যে কোনও শারীরিক কাজকর্মের সময়ে যেমন হাঁটা চলা, এমনকি বসে থাকার সময়েও ব্যাথা বাড়তে পারে। এর কিছু উপসর্গ হল:

  • যখন তখন পা ব্যথা করা।
  • ফুলে যাওয়া।
  • লাল হয়ে যাওয়া।
  • চলাফেরা করার সময় ব্যথা করা বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ব্যথা করা।
  • পায়ের চামড়া বিবর্ণ হয়ে যাওয়া পুড়ে যাওয়া বা চুলকানির মত অনুভব করা।
  • পায়ের হাড় ভেঙে যাচ্ছে এমন অনুভব করা ইত্যাদি।


পায়ে ব্যথার বিভিন্ন কারণ:
আপনার পা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বিভিন্ন কারণে। পায়ে ব্যথা পাবার কিছু কমন কারণগুলো হলো-

  • সঠিক মাপের জুতা পরিধান না করা।
  • এমন হাই হিল পরিধান করা যাতে পায়ের গোড়ালিতে অনেক চাপ পড়ে।
  • অতিরিক্ত এক্সারসাইজ অথবা খেলাধুলা।
  • গর্ভধারণ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা অথবা বিভিন্ন মেডিকেল কন্ডিশন।
  • পায়ে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে।


পায়ে ব্যথার চিকিৎসা:
পায়ের ব্যাথার অন্তর্নিহিত কারণের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন কী হবে।

  • পায়ে টান ধরলে বা পায়ের পাতায় পেশিতে হাল্কা ব্যাথা হলে বাড়িতেই তার চিকিৎসা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত এবং হঠাৎ শারীরিক পরিশ্রম করলে বা শরীরে পানির অভাব হলে (ডিহাইড্রেশন) পায়ে টান পড়ে, যার জন্য পায়ের পেশিতে চাপ পড়ে, যা নিজে যত্ন নিলেই নিরাময় হয়। পায়ের পেশিতে যন্ত্রণাদায়ক টান ধরলে প্রথম কাজ হল, যে শারীরিক পরিশ্রমের জন্য সমস্যা শুরু হয়েছে তা বন্ধ করে দেওয়া।
  • অল্প চাপ দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি হাল্কা ম্যাসাজ করা হলে যন্ত্রণা লাঘব হতে পারে।
  • একটি হিটিং প্যাড বা আইস প্যাক যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করতে পারে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, যন্ত্রণা কমাতে আইস প্যাকের চেয়ে হিটিং প্যাড বেশি কার্যকর।
  • যদি হিটিং প্যাড বা আইস প্যাক কাজ না করে তাহলে নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। অবিলম্বে যন্ত্রণা কমাতে চিকিৎসক অ্যান্টিস্প্যাজম নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
  • পায়ে আঘাত লেগে থাকলে চিকিৎসক পায়ে প্লাস্টার বা ওয়াকিং বুট পরার পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে আক্রান্ত এলাকা হঠাৎ নড়াচড়া করা বা মচকে না যায়। যখন প্লাস্টার খুলে দেওয়া হবে, তখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
  • সায়াটিকা (শ্রোণিশ্রেণিতে ব্যাথা) থেকে উদ্ভূত পায়ের ব্যাথা একযোগে ফিজিওথেরাপির সঙ্গে যন্ত্রণা নিরোধক ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। যন্ত্রণা এবং প্রদাহ কমাতে ব্যায়াম এবং ম্যাসাজের কৌশল ব্যবহার করে ফিজিওথেরাপি করা হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সায়াটিকা থেকে স্থায়ীভাবে আরাম পেতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
  • সংবহনজনিত কারণে পায়ের ব্যাথা যেমন ডিপ ভেন থ্রম্বসিস-এর চিকিৎসায় জমাট বাঁধা রক্ত তরল করতে এবং ভবিষ্যতে সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হতে পারে। ব্যাথার মোকাবিলায় সেঁক দেওয়ার মোজা বা কমপ্রেশন স্টকিং ব্যবহার করা যেতে পারে।


পা ব্যথা দূর করার সহজ ঘরোয়া উপায়:

  • ঠান্ডা ও গরম পানিতে পা ডোবান: পায়ে ব্যথা অনুভব করলে রক্ত চলাচল বাড়ানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সুফল মিলতে পারে। পায়ে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে একটি গামলাতে ঠান্ডা পানি ও আরেকটি গামলাতে গরম পানি নিন। এবার আরামদায়ক চেয়ারে বসে পা দুটিকে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। পাঁচ মিনিট পর গরম পানিতে পা দুটিকে ডুবিয়ে রাখুন। প্রক্রিয়াটি রিপিট করুন। এই হাইড্রো ম্যাসাজ পায়ের রক্তনালীকে পর্যায়ক্রমে প্রসারিত ও সংকুচিত করে রক্ত চলাচল বাড়াবে।
  • পায়ের পাতা ম্যাসাজ করুন: পায়ের পাতাকে ম্যাসাজ করলেও ব্যথা প্রশমিত হয়। একাজটি ভালোভাবে করতে বিশেষ ডিজাইনের রোলার রয়েছে। দোকানে না পেলে অনলাইনে অর্ডার করে প্রোডাক্টটি কিনতে পারেন। অনলাইনে 'ফুট ম্যাসাজ রোলার' লিখে সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। অথবা এর বিকল্প হিসেবে বেলনি বা টেনিস বল বা গলফ বলের ওপর পায়ের পাতাকে কিছু মিনিট রোল করতে পারেন। এছাড়া হাত দিয়ে তেলও ম্যাসাজ করতে পারেন। তিন টেবিল চামচ সিসেম অয়েলে তিন ফোঁটা ক্লোভ অয়েল মিশিয়ে পায়ের তলা ম্যাসাজ করুন।
  • পায়ের আঙুলকে প্রসারিত করুন: একটি পায়ের সকল আঙুলকে পুরু রাবার ব্যান্ড দিয়ে মুড়িয়ে নিন। এরপর ব্যান্ডটি খুলে আঙুলগুলোকে পাঁচ সেকেন্ড প্রসারিত করুন। পায়ের ব্যথা কমাতে এভাবে ১০ বার রিপিট করুন। যাদের পা প্রায়সময় জুতার ভেতর থাকে তারা এই সহজ এক্সারসাইজে উপকার পেতে পারেন।
  • টিস্যুর যত্ন নিন: পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা প্লান্টার ফ্যাসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে, বিশেষত সকালে হলে। প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হচ্ছে গোড়ালির হাড়কে পায়ের আঙুলের সঙ্গে সংযুক্তকারী টিস্যুর পুরু ব্যান্ডের প্রদাহ। এই ব্যথা উপশম করতে অ্যাচিলিস টেন্ডনকে প্রসারিত করুন। একটি দেয়াল থেকে এক মিটার দূরে দাঁড়ান। হাত দুটিকে দেয়ালে রাখুন ও হাঁটু বাঁকিয়ে ডান পা সামনে নিয়ে যান। এবার মেঝের ওপর গোড়ালি রেখে বাম পা সোজা করুন। পায়ের গোড়ালি ও আর্ককে হালকা প্রসারিত করুন। দশ সেকেন্ড পর পাশ পরিবর্তন করুন। এভাবে কিছুক্ষণ রিপিট করুন।
  • গোড়ালিতে বরফ দিন: বরফও গোড়ালির ব্যথা কমাতে পারে। পায়ের যেখানে ব্যথা সেখানে একটি আইস প্যাক প্রায় ২০ মিনিট ধরে রাখুন। এভাবে দিনে তিনবার বরফ প্রয়োগ করুন।
  • ফুট বাথ নিন: ঘরোয়া ফুট বাথও পায়ের ব্যথায় সহায়ক হতে পারে। একটি গামলাতে গোড়ালি সমান গরম পানি নিয়ে ২ ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল, ৪ ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল ও ৪ ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশ্রিত করুন। এরপর পা দুটিকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে