অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস কি?
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো এমন একটি অবস্থা যাতে শরীরের ধমনীগুলি আক্রান্ত হয়, এর বৈশিষ্ট্য হল ধমনী কঠিন ও সরু হয়ে যাওয়া যার কারণ হল ধমণীর প্রাচীরে প্লাক বা ফলক জমা।

প্রাচীর পুরু হয়ে যায়, এর ফলে, ধমনী সংকুচিত হয়ে যায়, এই কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত পরিবহন কমে যায়।

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের মূল লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

  • শুরুতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসে বিশেষ কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এটি একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা অসুখ এবং যখন এটা প্রাথমিক পর্বে থাকে প্রায়ই সনাক্ত করা যায় না।
  • অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের উপসর্গ নির্ভর করে আক্রান্ত ধমনীর অবস্থানের উপর।
  1. যদি হৃদযন্ত্রগামী ধমনীতে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে তবে বুকে ব্যথা বাম হাতে, কাঁধে ও চোয়ালে ছড়িয়ে যায়।
  2. সেই অঙ্গে ব্যথা বা অবশভাব অনুভূত হয় যদি ঐ অঙ্গের ধমনীতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হয়ে থাকে।
  3. যদি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস মস্তিস্কের ধমনীতে হয়, তবে এই উপসর্গগুলি দেখা দেয় যেমন, বিহ্বলতা, মাথা ব্যথা, অঙ্গে দূর্বলতা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি, মাথা ঘোরা।


অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস লাইফস্টাইল, খাদ্য তালিকা, অভ্যাস এবং কিছু বিশেষ শারীরিক অবস্থার কারণে হয়।

  • শারীরিক অবস্থাগুলি যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস ব্যক্তির মধ্যে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  • ধূমপান, মদ্যপান, স্থুলতা, এবং উশৃঙ্খল জীবনযাপন বিপদের সম্ভাব্য কারণ।
  • অত্যধিক চর্বি জাতীয় খাবার, বা বেশী মিষ্টি এবং বেশী লবণ যুক্ত খাবারও এর কারণ হতে পারে।


কিভাবে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস রোগ নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
রোগীর সমস্যাগুলি, অসুখের ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। শারীরিক পরীক্ষার সময়, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নাড়ীর গতি পরীক্ষা করে দেখেন, হৃদস্পন্দনের হার গণনা করেন এবং হৃদযন্ত্রে অস্বাভাবিক কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে কিনা তা দেখেন।

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের জন্য যেসকল পরীক্ষাগুলি করা হয়:

  • কোলেস্টেরল, সুগার, সোডিয়াম ও প্রোটিনের মাত্রা দেখার জন্যে রক্তপরীক্ষা করা হয়।
  • প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ধমনী পরীক্ষা করার জন্যে সি টি স্ক্যান করা হয়।
  • প্রতিবন্ধকতা খুঁজে বের করার জন্য অ্যানজিওগ্রামে ডাই বা রঞ্জক ব্যবহার করা হয়।
  • প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ধমনী খুঁজে বের করতে ডপলার আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়।
  • অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে আছে স্ট্রেস পরীক্ষা এবং ই সি জি।


অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের চিকিৎসাগুলি হল:

  • ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রভৃতি জীবনশৈলীর প্রধান পরিবর্তনগুলি যেগুলি অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
  • রক্তচাপ কমানোর জন্যে ওষুধ যেমন অ্যান্টিকোগুল্যান্টস, ডিউরেটিকস ও কোলেস্টেরল-নিয়ন্ত্রক ওষুধ।
  • যদি প্রতিবন্ধকতা গুরুতর হয়, তাহলে হৃদযন্ত্র সম্বন্ধীয় শল্যচিকিৎসক বাইপাস ও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মতো সার্জারি করে থাকেন।


অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে করণীয়:

  • তৈলাক্ত খাবার এবং উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার না খাওয়া। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  • ডায়াবেটিসের চিকিৎসা।
  • ধূমপান বন্ধ করা।
  • প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া।
  • অতিরিক্ত ওজন হ্রাস।
  • কিডনি সমস্যার চিকিৎসা।
  • উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগের চিকিৎসা।
  • রোজ ব্যায়াম করা উচিৎ, কমপক্ষে ৩০ মিনিট।
  • নিজের মানসিক চাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার এবং হঠাৎ কর্মক্ষমতা কমে গেলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে