বমি বমি ভাব এবং বমি কি?
বমি বমি ভাব এবং বমি হল খুবই সাধারণ লক্ষণ যা মূলত নাড়িভুঁড়ির রোগের সাথে সম্পর্কিত, কিছু অবস্থা খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপতিক্রিয়ার ফলে হয়। অনেক সময়, এই উপসর্গগুলি সাধারণ অ্যানেস্থিয়ার পরবর্তী প্রভাব হিসাবে দেখা যায়। বমি (সংস্কৃতে বমন, ইংরাজী Vomiting, emesis) হল পাকস্থলীর মধ্যের পরিপাক-রত খাদ্যসমূহ (কঠিন বা তরল) অনৈচ্ছিকভাবে সজোরে মুখ দিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করা। যেখানে বমি বমি ভাব হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যা বমি করার আগ মুহূর্তে অভিজ্ঞতা করা হয়। দুটো অবস্থাই সারানো যায় এবং সাধারণত এই রোগ খুব গুরুতর স্বাস্থ্যের সমস্যা বোঝায় না।
বমি বমি ভাব এবং বমির সাথে জড়িত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
বমি বমি ভাব এবং বমি করা হল কোন রোগের অবস্থা কে চিহ্নিতকরণ করা। যদিও, বমি বমি ভাব এবং বমির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:
- দ্রুত নাড়ির স্পন্দন।
- শুকনো মুখ।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরা।
- হালকা মাথাচাড়া।
- বিহ্বলতা।
- তলপেটে ব্যথা।
বমি বমি ভাব এবং বমির প্রধান কারণগুলি কি কি?
বমি বমি ভাব এবং বমি করা অনেকগুলো কারণের জন্য হতে পারে যেমন:
- মোশন সিকনেস, মোটর সিকনেস বা সী সিকনেস।
- পেটের সংক্রমণ।
- গলব্লাডারে প্রদাহ।
- মাইগ্রেন।
- ভার্টিগো।
- ব্রেন ইনজুরি।
- ব্রেন টিউমার।
- পেটের আলসার।
- হাইপারঅ্যাসিডিটি।
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস।
- ভয়।
- অপ্রীতিকর গন্ধ।
- খাওয়া দাওয়ার ব্যাধি।
- খাদ্যে বিষক্রিয়া।
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
- সাধারণ অ্যানাস্থেসিয়া।
- কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি।
বমি বমি ভাব এবং বমি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
বমি বমি ভাব এবং বমি করার অনেক কারণ হতে পারে, তাই সফলভাবে চিকিৎসা করার জন্য নির্দিষ্ট কারণ খুজে বার করাটা জরুরী। এই উপসর্গগুলি কি কারণে দেখা দিচ্ছে তা বোঝার জন্য রোগীর চিকিত্সাগত ইতিহাস এবং তার ব্যক্তিগত ইতিহাস অনেক সাহায্য করে। আর সাধারণত অন্য নির্দিষ্ট উপসর্গগুলিও রোগের অন্তরনিহিত কারণ বুঝতে সাহায্য করে। ইমেজ স্টাডিং, রক্ত পরীক্ষা বা কোন নির্দিষ্ট রোগের জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে যাতে আমরা রোগের অবস্থা জানতে পারি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বমি সীমিত থাকে এবং পেটের সব জিনিস বেড়িয়ে যাওয়ার পরে বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন পরে। চিকিৎসার মধ্যে শুধু বমি বমি ভাবের এবং বমি করার যত্ন নেওয়াই নয় বরং অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা করাও হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতির উপদেশ দেওয়া হয়।
- অ্যান্টি নসিয়া এবং অ্যান্টি এমেটিক ওষুধ। যদি রোগী গর্ভবতী হন, তাহলে গায়নোকোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে তবে ওষুধ খাবেন।
- অ্যান্টি-মোশন অসুস্থতার প্রতিরোধকারক ওষুধ।
- যে তরল ক্ষয় হয়েছে তার ভরণ করার জন্য, মৌখিক হাইড্রেশনের মিশ্রণ বা স্যালাইনের মাধ্যমে রিহাইড্রেশন থেরাপি দেওয়া হয়।
- কিছু প্রাকৃতিক টোটকা যেমন আদার ছোট টুকরো বা লবঙ্গ মুখে রাখলে বমি বমি ভাব থেকে রেহাই দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব এড়াতে অল্প অল্প করে খাওয়া এবং খাবার খাওয়ার পর পানি খাওয়া, খাওয়ার সময় পানি খাওয়ার থকে বেশি সাহয্য করবে। যদি বমি করা ওষুধের মধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে ডাক্তার দেখান।
বমি বমি ভাব দূর করতে যা খাবেন:
অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে কিছু খাবার। চলুন জেনে নিই, সেগুলো কী-
- যখনই বমি ভাব দেখবেন তখনি মুখে এক টুকরা লবঙ্গ রেখে দিন। ধীরে ধীরে চিবুতে থাকুন দেখবেন আপনার মুখ থেকে বমিভাব চলে গিয়েছে।
- বমি ভাব দূর করতে সবচেয়ে কার্যকরী ভেষজ ওষুধ আদা। আদা কুচি করে কেটে মুখে নিয়ে চিবুতে পারেন। এতে করে আপনার বমি ভাবটি দূর হয়ে যাবে। যারা আদার ঝাঁজ সহ্য করতে পারেন না, তারা একটু গরমপানিতে আদা সিদ্ধ রসটি মুখে নিয়ে কুলি করলে মুখ থেকে বমির বিচ্ছিরি গন্ধও দূর হয়ে যাবে।
- পুদিনাপাতা বমিভাব দূর করতে দারুন কার্যকর। পুদিনার রস গ্যাস্ট্রিকজনিত বমিভাব দূর করতে বেশি কার্যকরী। তাই গ্যাস্ট্রিকজনিত বমিভাবে পুদিনা পাতা মুখে দিয়ে চিবুতে থাকুন।
- টক জাতীয় খাবারের ফলে শরীরের বমিভাব দূর হয়। লেবুর রসে রয়েছে সাইট্রিক এসিড যা বমিভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী। কিন্তু গ্যাস্ট্রিকজনিত বমির ভাব হলে লেবু না খাওয়াই ভালো। তাছাড়া বমি ভাব হলে লেবুপাতার গন্ধ উপকারে আসতে পারে। কারণ লেবুর পাতা শুকলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
- অনেকেই দারুচিনি চিবুতে পছন্দ করেন। দারুচিনি ভারী খাবারের পর খেলে হজমে খুব সাহায্য করে। তাই হজমের সমস্যাজনিত কারণে বমিভাব হলে খেতে পারেন এক টুকরা দারুচিনি।