রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস কি?
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis) এমন একটি রোগ, যেখানে রোগীদের হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, কব্জি বা ঘাড়ের জয়েন্টগুলিতে ব্যথার অনুভূত হয়। এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যুব সমাজও এর শিকার হচ্ছে। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস কেবলমাত্র জয়েন্টে ব্যথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি শরীরের জয়েন্ট ও হাড়ের ক্ষতি করার পাশাপাশি, চোখ, ত্বক, ফুসফুসের মতো অন্যান্য অঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ফলে জয়েন্টে ব্যথা, ফোলাভাব এবং পেশী শক্ত হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি অটো-ইমিউনো রোগ। একদিকে, আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরকে যে কোনও ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু অন্যদিকে এই অটো-ইমিউনো রোগ, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যকর কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে শুরু করে। এর ফলে দেহের বিভিন্ন অংশ এবং জয়েন্টগুলি অতিরিক্ত ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। যদি ফোলা দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকে তবে এটি জয়েন্টগুলিতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। যা খুবই বিপদজনক।
এই অবস্থাটা কার্ডিওভাস্কুলার বা শ্বসন তন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, যে কারণে এটাকে সিস্টেমেটিক অসুখও বলা হয়।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সাথে জড়িত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
এই অবস্থার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো নিচে বলা হলো:
- ভোরবেলায় আড়ষ্ঠতা যেটা পুরো দিন ক্রমাগত গাঁটের নড়াচড়ার ফলে কমে যায়।
- ক্লান্তি।
- অ্যানিমিয়া বা রক্ত কমে যাওয়া।
- বেদনাদায়ক গাঁট।
- শুকনো চোখ এবং মুখ।
- কনুই, হাত, হাঁটু এবং অন্যান্য গাঁটে শক্ত মাংসপিন্ড।
- গাঁটে লালভাব এবং ফোলা।
- বুকে ব্যথা।
- জ্বর ও ওজন কমে যাওয়া।
- বেদনাদায়ক অবস্থাটা হাত ও পায়ে উভয় জায়গাকেই একইসাথে প্রভাবিত করে। এটা ৩০ বছরের পরে কখনও শুরু হতে পারে এবং পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশীই আক্রান্ত করে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের প্রধান কারণগুলো কি কি?
যদিও এই অবস্থার পিছনে প্রকৃত কারণ এখোনো জানা যায় নি, নিচে উল্লেখিত কারণগুলোকে এই অবস্থার অগ্রদূত মনে করা হয়:
- জিনের পরিবর্তন।
- বাবার বংশে কারোর এই ব্যাধি থাকা।
- সংক্রমণ।
- হরমোনের পরিবর্তন।
- মানসিক হতাশা।
- ধূমপান।
- দূষিত পরিবেশের সংস্পর্শে আসা।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
উপরোক্ত উপসর্গ দেখে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, শারীরিক পরীক্ষা, এক্স-রে এবং রক্তপরীক্ষাও এই রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। চিকিৎসা আরো ফলপ্রসু হয় যদি এই রোগ খুব তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়।
চিকিৎসা:
চিকিৎসা প্রিম্পটিভ এবং রিঅ্যাক্টিভ উভয় ভাবেই করা হয়, যেমন:
- ব্যথা কমানোর ওষুধ বা অ্যানালজেসিক ওষুধ।
- ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ যেমন আইবুপ্রোফেন।
- কর্টিকোস্টেরয়েডস্ যেমন প্রেডনিসোলোন।
- রোগের প্রকোপ কমাতে অ্যান্টি-রিউম্যাটিক ওষুধ যেমন মেথোট্রেক্সেট।
- বায়োলজিকাল ওষুধ যেমন, ইনফ্লিক্সিম্যাব।
- শক্তিবর্ধক ব্যায়াম বা শক্তিচর্চা।
- ফিজিওথেরাপী ব্যথা কমাতে এবং গাঁটে আবার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- উপকরণ যেগুলো ব্যথা এবং চাপে আরাম দেবে।
- বিশ্রাম।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং খাদ্যতালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করা।
- মালিশ করা, আকুপাংচার এবং অন্য সম্পূরক চিকিৎসা।