অ্যাডিসন রোগ কি?
অ্যাডিসন রোগ এন্ডোক্রাইনের বা হরমোন উৎপাদন করার পদ্ধতির একটি বিরল ব্যাধি। অ্যাডিসন রোগ, প্রাথমিক অ্যাড্রিনালিনের অপ্রতুলতা এবং হাইপোকর্টিসলিসম হিসাবেও পরিচিত একটি দীর্ঘমেয়াদী হরমোনাল ব্যাধি যাতে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি পর্যাপ্ত স্টেরয়েড হরমোন উৎপাদন করে না। একে সাধারণত অ্যাড্রিনালের অভাব বলা হয়, মানে যেখানে অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থেকে করটিসল আর অ্যাল্ডোস্টেরোন হরমোনের উৎপাদন সঠিক পরিমানে হয় না। অ্যাডিসন রোগ সব বয়সের মানুষেরই মধ্যেই দেখা যায় আর পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

অ্যাডিসন রোগের মূল লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
অ্যাডিসন রোগের উপসর্গগুলো সাধারনত খুবই ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং তার মধ্যে কিছু লক্ষণ হল:

  • অত্যন্ত ক্লান্তি।
  • ওজন কমে যাওয়া।
  • খিদে না পাওয়া।
  • লবণ খাওয়ার ইচ্ছে।
  • নিম্ন রক্ত চাপ।
  • ব্লাড সুগার কমে যাওয়া।
  • বমি বমিভাব বা বমি করা।
  • হাইপারপিগমেন্টেশন।
  • বিষন্নতা।
  • পেটে ব্যথা।
  • পিঠের নীচে ব্যথা।
  • পেশি বা হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা।
  • কিছু ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল ডিসফাংশন বা যৌন অসুস্থতা।
  • নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ত্বকের কালচে ভাবও দেখা দিতে পারে।
  • চেতনা হ্রাস নিয়ে অ্যাড্রিনাল সংকট দেখা দিতে পারে।


অ্যাডিসন রোগের মূল কারণ কি?
অ্যাডিসন রোগ শরীরে বিশেষত করটিসোল এবং অ্যাল্ডোস্টেরোন হরমোনের উৎপাদনের অভাবে হয়ে থাকে। যখন অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের (যে গ্ল্যান্ডটি কিডনি ওপরের অংশে অবস্থিত) কোর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন সাধারনত এই রোগটি হয়ে থাকে এবং সেজন্য একে প্রাথমিক অ্যাড্রিনালিনের অভাবও বলা হয়।

অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের ব্যর্থতার কিছু মূল কারণ হল:

  • অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের ভিতরে রক্তপাত।
  • অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পরা।
  • টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষারোগ।
  • ফাঙ্গি, ভাইরাস, প্যারাসাইট আর ব্যাক্টেরিয়ার মতো বাহকের জন্য অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে সংক্রমণ হওয়া।


কিভাবে অ্যাডিসন রোগ নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সাধারণত অ্যাডিসন রোগ প্রথম ধাপেই ধরা খুবই কঠিন। আক্রান্তের লক্ষণ ও মেডিকাল হিস্ট্রির ওপর নির্ভর করে ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা করবেন।

এরপর, ডাক্তার বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা কতটা আছে তা দেখার জন্য কিছু বায়োকেমিকাল ল্যাবরেটরি টেস্ট করতে বলবেন। আক্রান্তকে হয়তো অ্যাবডোমেন বা পেট এবং পেলভিক স্থানের এক্স-রে করতে বলা হতে পারে যাতে ক্যালসিয়ামের ডিপোসিসন বা ঘাটতির পরীক্ষা করা যায়। আপনাকে হয়তো অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন (ACTH) স্টিমিউলেশন টেস্ট করানোর জন্য বলতে পারেন যাতে কর্টিসলের উৎপাদন দেখা যায়, অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য একবার এসিটিএইচ ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে।

অ্যাডিসন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি:

  • ওরাল হরমোনাল থেরাপি, যেখানে ওরাল ড্রাগ অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের উৎপাদন করা হরমোনের পরিবর্তে কাজ করবে। আক্রান্তকে হয়তো ওরাল হাইড্রোকর্টিসোন ট্যাবলেটস বা মিনেরালোকর্টিকয়েডস প্রেসক্রাইব করা হতে পারে।
  • আক্রান্তকে হয়তো হাইড্রোকর্টিসোনের ইনট্রাভেনাস (যেটি শিরাতে দেওয়া হয়) ইনজেকশন নেওয়ার জন্য বলা হতে পারে, যা রোগীকে খুব দ্রুত সারিয়ে তোলে।
  • বিকল্প চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্লুকোকোর্টিকয়েড এবং এক-চতুর্থাংশ প্রিডনিসোন ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসা সাধারণত আজীবন স্থায়ী হয়।
  • এছাড়াও, হারানো অ্যালডোস্টেরনের অভাব পুরনের জন্য অনেক লোকের ক্ষেত্রে ফ্লড্রোকর্টিসন প্রয়োজন হয়।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে