অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) কি?
হৃদরোগের নানা প্রকারভেদ রয়েছে। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এগুলো সবই হৃদরোগের মধ্যে পড়ে। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা অ্যারিথমিয়ার কথাও জানাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নানা কারণে আমাদের হৃদস্পন্দর অনিয়মিত হয়। কখনও দ্রুত হৃদস্পন্দন চলে। কখনও বা খুব ধিরে। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যাকেই অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia) বলা হয়।

প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের মাত্রা হল প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বীট। অ্যারিথমিয়ায় হৃদস্পন্দন সাধারণ মাত্রার তুলনায় ধীরে হতে পারে, অথবা একটা অনিয়মিত নিদর্শনে সাধারণ মাত্রার তুলনায় দ্রুত হতে পারে। অনেক ধরণের অ্যারিথমিয়া আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটা হল এট্রিয়াল ফেব্রিলেসন যেখানে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত এবং সাধারণের তুলনায় দ্রুত।

যদি হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এটা ট্যাচিকার্ডিয়া হিসাবে পরিচিত। যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে হৃদস্পন্দন কম হয়, তাহলে এটা ব্র্যাডিকার্ডিয়া হিসাবে পরিচিত।

কোনও কোনও সময় অন্যান্য কারণ থাকলেও হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত ছন্দ বা অ্যারিথমিয়া অনেক সময় আচমকা হার্ট অ্যাটাক ডেকে আনতে পারে।

অ্যারিথমিয়ার প্রধান লক্ষণগুলো এবং উপসর্গগুলো কি?
ট্যাকিকার্ডিয়ার ক্ষেত্রে, অ্যারিথমিয়ার উপসর্গগুলো হল:

  • ডিস্পনিয়া (শ্বাসকষ্ট)
  • মাথা ঘোরা
  • বুকে ব্যাথা
  • মাথায় হাল্কাভাব অনুভূতি
  • হঠাৎ দুর্বলতা
  • অজ্ঞান হওয়া
  • বুকে একটা দ্রুত সংবেদন অথবা ধড়ফড় করা (প্যালপিটেশন)


ব্র‍্যাডিকার্ডিয়ার ক্ষেত্রে, অ্যারিথমিয়ার উপসর্গগুলো হল:

  • বিহ্বলতা
  • বুক ধড়ফড় করা
  • ঘাম ঝরা
  • ক্লান্ত ভাব
  • ব্যাম করায় অসুবিধা
  • ডিস্পনিয়া (শ্বাসকষ্ট)


এছাড়াও যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন:

  • বুক ধড়ফড় করা এই অসুখের অন্যতম লক্ষণ। তার সঙ্গে অল্প পরিশ্রমে করলে হাঁপিয়ে পড়ার দিকেও নজর রাখতে হবে।
  • হৃদযন্ত্রের রিদম ডিজঅর্ডার হলে পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পা ফুলে যায়, এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে ফুলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • সারা দিনই ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়, কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না, একাগ্রতা কমে যায়।
  • কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। জোরে হাঁটা-চলায় অসুবিধে হয় এবং শরীরচর্চা করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে শুরু করে।
  • কাশি ও বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়।
  • শরীরে পানি জমে দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে।
  • খিদে কমে যায় ও গা বমি ভাব থাকে দিনভর।


অ্যারিথমিয়ার প্রধান কারণগুলো কি?
অ্যারিথমিয়া হল হৃৎ টিস্যুর মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলোর একটা ফলাফল। যদিও কিছু ব্যক্তির মধ্যে কারণ অজানা হতে পারে। অ্যারিথমিয়া কিছু কারণে হতে পারে। তা হল:

  • হার্ট টিস্যুতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন যা হৃদয়ে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়, যা হার্ট টিস্যুকে শক্ত করে অথবা আঘাতের দাগ ফেলে।
  • শ্রম এবং আবেগপ্রবণ প্রভাব, যা রক্তচাপ উত্থাপিত করে অ্যারিথমিয়াতে পীড়িত হরমোনের মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
  • ইলেক্ট্রোলাইটের অসামঞ্জস্য, হরমোন অথবা রক্তধারার মধ্যে তরলের ভারসাম্যহীনতা হৃদ কম্পনে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • হাইপারটেনশন-এর কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেওয়া অ্যারিথমিয়ার কারণ হতে পারে।
  • বেশি বয়স, পরিবারের ইতিহাস একজন ব্যক্তির অ্যারিথমিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


অ্যারিথমিয়া কিভাবে নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা করা হয়?
অ্যারিথমিয়া রোগ নির্ণয় করতে, চিকিৎসক রোগির পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক কাজকর্মের সূচি, এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এটা অনুসারে, শারীরিক পরীক্ষা করা হতে পারে, যাতে চিকিৎক নাড়ি, হৃদস্পন্দন, এবং অন্যান্য রোগগুলোর লক্ষণ দেখতে পারেন।

অন্যন্য রোগনির্ণয়সংক্রান্ত পরিক্ষাগুলো হল:

  • রক্ত পরিক্ষা- ইলেক্ট্রোলাইট, লিপিড, হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করতে
  • ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)- হৃদস্পন্দন, এটার হার, ছন্দ ইত্যাদির পরিমাপ করতে হয়।
  • ইকোকার্ডিওগ্রাফি (বুকের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান)
  • আলট্রাসাউন্ড- শরীরের বিভিন্ন অংশের অন্যান্য রোগ নির্ণয় করতে।


অ্যারিথমিয়ার চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতির জন্য জীবনধারার পরিবর্তনের প্রয়োজন। চিকিৎসক হৃদ কম্পন স্থির রাখতে বিটা ব্লকার অথবা অ্যাডিনোসিন্স-এর মত ব্লাড থিনার্স অথবা অন্যান্য ওষুধ দিতে পারেন। গুরুতর ক্ষেত্রে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে পেসমেকার এবং এমআরআই কন্ডিশনড ইমপ্ল্যান্টেবল ডিফিব্রিলেটরের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।

এই রোগের চিকিতসা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত, নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো দরকার। এছাড়াও হৃদস্পন্দন পরীক্ষা করা দরকার। যদি প্রায়শই এমন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে