একজিমা বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস কি?
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস (Atopic Dermatitis) বা একজিমা ত্বকের এক ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা। সাধারণত শীতকালে এই রোগ বেশি হয়। এটি ত্বকের এক এমন ভয়ঙ্কর রোগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সারা দিনটাই ত্বকে মলম ঘষতে ঘষতে কেটে যায়। ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ চরম অস্বস্তির জন্ম দেয়। কাজে মনোনিবেশ করা এবং এমনকী ঘুমানো অবধি দুরূহ করে তোলে এই Atopic Dermatitis (AD)।

এটি বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায় এবং বারবার হতে পারে। এটি একটা প্রাথমিক সুত্রপাতের অবস্থা, এমনকি জন্মের পর ছয় মাস বয়সেই এই রোগ দেখা দিতে পারে। সারা বিশ্বের ২০% শিশু এবং ৩% প্রাপ্তবয়স্করা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস এ আক্রান্ত।

অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসাগত চিত্র বিভিন্ন লোকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয় কিন্তু এটির বিশেষত্ব হলো শুষ্ক এবং লাল হয়ে যাওয়া ত্বক, যাতে চুলকানি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

  • এই রোগে সাধারণ ভাবে সারা শরীরের ত্বক একটু শুষ্ক আর খসখসে হয়ে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় প্রাথমিক ভাবে ত্বক প্রচণ্ড চুলকায়, লাল হয়ে যায়, ছোট ছোট ফোস্কা দেখা দেয় যেগুলি ফাটলে সেখানকার ত্বক থেকে রসক্ষরণ বা ডিসচার্জ হতে পারে। একে বলে অ্যাকিউট একজিমা।
  • অনেকদিন ধরে রোগটি চলতে থাকলে ক্রনিক একজিমা হয়ে যায়, যাতে ত্বক পুরু, কালো, খসখসে হয়ে যায় (একে বলে লাইকেনিফিকেশন) এবং সারাক্ষণ চুলকাতে থাকে।
  • ত্বক চুলকালে জ্বালাভাব অনুভুত হয়, এমনকী রক্তপাতও হয়।
  • প্রায়ই এক্ষেত্রে পুঁজ-ভরা ব্রণ দেখা দেয়, যা সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়। যদি সংক্রমণ হয়, তাহলে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে দেখা যায় পানি ভর্তি ফুসকুড়ি এবং কালো ও কুঁচকানো ত্বক। এই অবস্থায় চোখ ও ঠোঁটের চারপাশের অংশ কালো হয়ে যায়।
  • চুলকানি সব চাইতে বেশী রাত্রিতেই হয় এবং ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
  • অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস একটি দীর্ঘকালীন রোগ যার সাথে হাঁপানি, হে ফিভার ও অন্যান্য অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে।


অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
যদিও অটোপিক ডার্মাটাইটিসের কারণ অজানা, তবুও কিছু ঝুঁকির কারণ আছে যার ফলে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা হতে পারে।

  • গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি জেনেটিক বা বংশগত কারণেও হতে পারে, যাদের পরিবারে ডার্মাটাইটিস, খাদ্য অ্যালার্জি, হাঁপানি, জ্বর এবং পরিবেশগত অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে তারা এই রোগে ভোগেন।
  • অত্যন্ত দূষিত এলাকায় বসবাস, অত্যন্ত শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়াও এই রোগের কারণ হতে পারে।
  • সাধারনত ত্বকে জ্বালা বা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে কন্টাক্ট বা যোগাযোগ ডার্মাটাইটিস দেখা দিতে পারে।
  • আর যে সমস্ত কারণে একজিমা হতে পারে সেগুলি হল রেণু, উলের পোষাক, ধুলো, ত্বকচর্চার সামগ্রী এবং এমনকী তামাক সেবনও এর কারণ হতে পারে।
  • সবচেয়ে সাধারণ কারন গুলির মধ্যে একটি হল শিশুদের নিজস্ব লালা, যারা তাদের ঠোঁট চাটতে বা কামড়াতে পছন্দ করে তাদের মুখের চারপাশের ত্বকে একজিমা হতে পারে।


কিভাবে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা রোগটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?

  • একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ একজিমা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে চর্ম পরীক্ষা করেন। লাল, শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বক এই রোগের বৈশিষ্ট্য।
  • যেহেতু এটি একটি সাময়িক অবস্থা এবং এর বিশেষ কিছু চিকিৎসাগত বৈশিষ্ট্য আছে, তাই কোন রক্ত পরীক্ষা বা ইমেজিং বা প্রতিবিম্বকরণের প্রয়োজন হয় না।
  • যদি আপনার বা আপনার শিশুর লাগাতার জ্বর সাথে অন্য আনুষঙ্গিক উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসক আপনাকে একটা প্রাথমিক রক্তপরীক্ষা করতে পরামর্শ দেবেন।
  • যদিও এই সমস্যাটি সম্পূর্ন নির্মূল হয় না, তবুও উপশমের জন্যে অ্যান্টি-হিস্টামাইন, অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্টেরয়েড ক্রিম দেওয়া হয়।
  • এই রোগটি বারবার যাতে না হয় সেজন্যে কি থেকে এটি হচ্ছে সেটি সনাক্ত করা হয় ও সেটিকে এড়িয়ে চলতে বলা হয়, কোনো রুক্ষ সাবান এবং ত্বকের প্রসাধনী ব্যবহার কম করা, এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়।
  • গোসলের পর আপনার শিশুর ভালোভাবে ত্বক শুকনো করা দরকার, এবং দিনে কম করে দুবার ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার।


শিশুদের এটোপিক ডার্মাটাইটিস হলে করণীয় কী?
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসে কোনো রকম প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। যত সতেজ খাবার খাওয়ানো যায় তত ভালো। আর শিশু বুকের দুধ খেলে সেটি খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। সেরামাইড বা ডার্মাটাইড ময়েশ্চারাইজার, যেটি লিকোরাইটযুক্ত সেটি ব্যবহার করতে হবে। এ সময় ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। পরিবেশের যে শুষ্কতা রয়েছে এর সঙ্গে সঙ্গে সে কিন্তু সবসময় যুদ্ধ করতে থাকে। তাই মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে।

কীভাবে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন অনিয়ন্ত্রিত বা মাঝারি থেকে গুরুতর অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এই রোগটি অনিশ্চিত যার ফলে রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং তাদের সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা দেয়।

চুলকানি এবং ব্যথার কারণে ঘুমোতে সমস্যা হয়। ত্বকের জ্বালা বা চুলকানির কারণে ঘুমের অভাব মেজাজ এবং আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে মনোযোগ হারান আক্রান্তরা।

অদ্ভুত বিষয় হল, এই রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তাই, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে অবিলম্বে চিকিত্সা শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞের মতে, এই রোগটি স্কুলপড়ুয়া শিশুর আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা একা বোধ করতে পারে। সমবয়সীদের কাছ থেকে তাচ্ছিল্য এবং হেনস্থারও সম্মুখীন হতে পারে শিশু যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে