ব্যালানাইটিস বা পেনাইল ইনফ্লামেশন কি?
পেনিস বা লিঙ্গের সামনের অংশকে বলে গ্লান্স পেনিস। সেখানে প্রদাহ হলে তাকে ব্যালানাইটিস বলে। এটি খুব পরিচিত সমস্যা। যদিও জটিল আকার ধারণ না করলে কেউ চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না।

ব্যালানাইটস জীবাণু দিয়ে হতে পারে। আবার জীবাণুর সংক্রমণ ছাড়াও হতে পারে। আনসার্কামসাইস্ড (ফোরস্কিন অস্ত্রোপচার করে সরানো হয়নি) পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা খুব পরিচিত ঘটনা যা খারাপ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং ফোরস্কিনের নিচে ইস্ট ও অন্যান্য অণুজীব জমে যাওয়ার জন্য হয়। এর ফলে ব্যালানোপসথাইটিস (গ্লান্স এবং ফোরস্কিনের প্রদাহ) এবং পার্শ্ববর্তী পেনাইল টিস্যুর প্রদাহ বাড়ে।

এটি সাধারণত ইমিউনোকম্প্রোমাইসড ব্যক্তি, যাদের এইচআইভি, ফাইমোসিস, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার আছে তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

ব্যালানাইটিসের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
সাধারণত ব্যালানাইটিসে দেখা দেওয়া চিকিৎসাগত উপসর্গগুলি হল:

  • পেনিস বা লিঙ্গের অগ্রভাগ লাল হয়ে যায়
  • চুলকানি
  • নরম ভাব
  • আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা বা বেদনাদায়ক ইরেক্শন
  • লালভাব এবং ফুসকুড়ি
  • ফোলাভাব
  • লিঙ্গের অগ্রভাগ থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয় এবং অনেক সময় প্রস্রাব করতে সমস্যা হয়।


ব্যালানাইটিসে দেখা লক্ষণগুলি অন্য যেসব ক্ষেত্রে দেখা যায় সেগুলি হল:

  • ফিমোসিস (ফোরস্কিনের শক্ততা)
  • প্যারাফিমোসিস (সরে যাওয়া ফোরস্কিনকে যখন তার আসল অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না)


ব্যালানাইটিসের প্রধান কারণ গুলো কি কি?

  • ব্যালানাইটিস আসলে এক ধরনের ইনফ্ল্যামেশন যা কোনো ইনফেকশন অথবা ত্বকের ক্রনিক সমস্যার কারণে হয়৷
  • গ্লান্সের ত্বকে উপস্থিত অণুজীবগুলির অতিবৃদ্ধির কারণেই ইনফ্ল্যামেশন হয়। উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশ এইসব প্রাণীর বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়ে ওঠে।
  • এটি মূলত ছত্রাক ক্যানডিডা অ্যালবিকান্স দ্বারা সংক্রমণের কারণে হয়। ডায়াবেটিস সহ কিছু ত্বকের রোগের কারণেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
  • অপরিষ্কার এবং নিম্নমানের স্বাস্থ্যবিধির ফলেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
  • ফোরস্কিনের নিচে জীবাণু, ঘাম, নোংরা ও মৃত চামড়া জমে চুলকানি হয় ৷
  • টাইট ফোরস্কিন এই সমস্যাটিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে ৷
  • পুরুষের লিঙ্গে সুগন্ধী সাবান, লোশন, এবং স্প্রে-র ব্যবহার ব্যালানাইটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে ৷
  • বারবার সাবানের ব্যবহার জনন অঙ্গের ত্বককে শুষ্ক করে তোলে।
  • পুরুষের লিঙ্গ পরিষ্কারের সময় সাবান ঠিকমতো ধোয়া না হলে ব্যালানাইটিস হতে পারে।
  • কিছু যৌন সংক্রামিত রোগ যেমন গনোরিয়া, ট্রাইকোমোনাস এবং সিফিলিস রোগের কারণে ব্যালানাইটিসের উপসর্গ দেখায়।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং রিয়্যাক্টিভ আর্থারাইটিসের কারণেও ব্যালানাইটিস হতে পারে।
  • কিছু ঘুমের ওষুধ, পেইনকিলার, ল্যাক্সেটিভ, অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও ব্যালানাইটিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।


কিভাবে ব্যালানাইটিস কে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ব্যালানাইটিস ডায়াগনসিস খুব সহজ। দেখেই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডায়াগনসিস করতে পারেন। তবে নিশ্চিত হবার জন্য ল্যাবটেস্ট করা হয়। ব্যালানাইটিস নির্ণয় করা হয় যেগুলোর সাহায্যে:

  • ক্লিনিকাল লক্ষণ: এরিথেমেটাস ফুসকুড়ি সঙ্গে চুলকানি এবং ব্যথা।
  • চেহারা: লাল প্যাচ এবং তার সাথে ছোটো প্যাপুলা বা চকচকে কিন্তু ফ্যাকাসে লাল।
  • মাইক্রোস্কোপি: অক্রান্ত স্থানে যদি ক্ষত থাকে তবে সেখান থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণু সনাক্ত করা হয়।
  • রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা: রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় ডায়াবেটিস আছে কিনা জানার জন্য কারণ ডায়াবেটিসের সাথে রোগটির সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট।
  • ত্বকের বায়োপসি: শুধুমাত্র যদি রোগ নির্ণয় অস্পষ্ট থাকে অর্থাৎ উপরের সবকিছু করেও ডায়গনসিস করা না গেলে বায়োপসি করা হয়।


ব্যালানাইটিসের চিকিৎসা:
যদি জীবাণু দিয়ে ব্যালানাইটিস হয় তবে তার চিকিৎসা করলে সমস্যাটি ভাল হয়ে যায়। ফাইমোসিস থাকলে ব্যালানাইটিস হয়। তাই অপারেশন করিয়ে প্রিপিউস বা লিঙ্গের অগ্রত্বক কেটে ফেলা হয়।

চিকিৎসায় যা যা লাগে:

  • ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ চিকিৎসা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক।
  • প্রদাহের জন্য স্টেরয়েড ক্রিম।
  • অ্যান্টি-ফাংগাল ওষুধ ফাংগাল সংক্রমণ এর যত্ন নিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • পরিস্থিতি গুরুতর হলে, সার্কাম্সিশন করে নেওয়া সবথেকে ভালো, কারণ শক্ত চামড়া ওই জায়গাটা পরিষ্কার করতে বাধা দেয়।
  • ওই জায়গাটা পরিষ্কার করার জন্য সাধারণ লবন পানির ব্যবহার করা যেতে পারে।


ব্যালানাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যেভাবে নিজের যত্ন নিবেন:

  • ব্যথা সম্পূর্ণরূপে না কমা পর্যন্ত সহবাস এড়ানো।
  • প্রয়োজন হলে খাওয়া যেতে পারে এমন ব্যথা-কমানোর ওষুধগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন।
  • প্রদাহের জায়গাটায় বরফের প্যাক দিলে ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে।
  • মোটামুটি চাপা অন্তর্বাস ব্যথার জায়গাটায় সাপোর্ট দিতে পারবে।
  • লিঙ্গের চারপাশে বা প্রস্রাবে কোন রক্তের চিহ্ন আছে কিনা পরীক্ষা করুন, কারণ এটি গুরুতর প্রদাহ বা আঘাতের ইঙ্গিত দেয় এবং এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজনীয়।
  • সাবানের মতো প্রখর রাসায়নিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। সাবান মুক্ত জিনিস সুপারিশ করা হয়।
  • জায়গাটি পরিষ্কার করতে, প্রস্রাব করার সময় ফোরস্কিন সরানোর চেষ্টা করুন যাতে ভবিষ্যতে সংক্রমণের কোনও সম্ভাবনা না থাকে।
  • সাধারণত লক্ষণ না হওয়া পর্যন্ত সঙ্গীদের চিকিৎসা করা হয় না।


ব্যালানাইটিস রোগ প্রতিরোধের উপায়:
সঠিক হাইজিন বজায় রাখলে ব্যালানাইটিসকে সহজেই রুখে দেওয়া যায়।

  • ঘাম হলে বা যৌন সংসর্গের পর ভালো করে স্নান করা একান্ত জরুরি।
  • লিঙ্গে সুগন্ধি স্প্রে বা পাউডার ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
  • গোসলের পর ভালো করে শুকনো করে লিঙ্গ মুছে নিতে হবে৷

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে