টাক কি?
নিজের চুলের ঘনত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট এমন মানুষ খুব কমই আছেন। প্রতি দিন স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট জীবনচক্র শেষ করে কিছু পুরনো চুল পড়ে যায় আর নতুন চুল গজায়। তবু প্রায় সব মানুষকেই বলতে শোনা যায়, মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেল! কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে মাথা একেবারে ফাঁকা কখনওই হয় না। মাথার ত্বকের লোমকূপের কোনও সমস্যা, চুলের কোনও রোগ বা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যা থেকেই মাথা একেবারে ফাঁকা হয়। যাকে চলতি ভাষায় টাক (Baldness) পড়া বলে।

অস্বাভাবিক চুল পড়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যালোপেসিয়া বলে। অ্যালোপেসিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ সময়ে যে টাক পড়া নিয়ে চর্চা শোনা যায় তা আসলে অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা পুরুষসুলভ টাক পড়া। একটা বিশেষ আকৃতিতে মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। প্রথমে চুল উঠে কপালের দু’ধার প্রশস্ত হয়ে যায়। তার পরে মাথার উপরের দিকের চুল উঠতে থাকে। অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের দ্বারা চুল ওঠা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

টাকের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
টাকের কারণে বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফর্ম প্রদর্শিত হতে পারে। এটি হঠাৎ করে বা আস্তে আস্তে হতে পারে এবং আপনার তালু ও পুরো শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে।

প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো হল:

  • চুল ক্রমশ পাতলা হয়ে যাওয়া
  • মাথার উপরের চুল ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া
  • গোলাকার অথবা প্যাচী দাগ
  • হটাৎ চুল পড়া
  • সম্পূর্ণ চুল পরে যাওয়া
  • স্ক্যাল্প অঞ্চলে শুকনো চামড়া ছড়িয়ে পরা


টাকের প্রধান কারণ গুলো কি কি?
এটা জেনেটিক বা বংশ পরম্পরায় অর্জিত হতে পারে। পুরুষের চুল পড়ার মধ্যে সাধারণতম কারণ হল অ্যান্ড্রোজেনেটিক আলোপেসিয়া (৯৫% বেশি)।

  • বংশগত: এটি পারিবারিক এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হয় এবং আগে থেকে জানা যায়।
  • হরমোনগত পরিবর্তন এবং মেডিকেল শর্তাবলী: গর্ভাবস্থা, রজোবন্ধ, থাইরয়েড রোগ, এবং স্ক্যাল্প সংক্রমণ চুল ওঠার জন্য দায়ী হতে পারে।
  • ড্রাগ বা ওষুধ সম্পর্কিত: ক্যান্সার, আর্থরাইটিস, বিষণ্নতা, গাউট এবং রক্তচাপের সমস্যাগুলির জন্য ওষুধের ব্যবহার টাকের কারণ হতে পারে।
  • রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশনের বিকিরণের ফলে চুল একেবারে হারাতে পারে।
  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপ এবং মানসিক বা শারীরিক আঘাত চুল ওঠার জন্য দায়ী হতে পারে।
  • চুলের চিকিৎসা: আঁট করে বাঁধা পনি টেইল অথবা কর্নরোসের মত চুল বাঁধার ধরনগুলি ট্র্যাকশন এলোপেশিয়ার কারণ হতে পারে
  • পুষ্টির ঘাটতি: অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিডের অভাব বিশেষ করে লাইসিন এর অভাবে টাক হতে পারে।


কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার?
অতিরিক্ত পরিমাণে চুল উঠলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভাল। তা হলে চুল ওঠার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। উপযুক্ত চিকিৎসাও হয়। ভবিষ্যতে মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়া থেকে নিষ্কৃতি মেলে।

টাক কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ছেলেদের টাকের ধরন, এটার প্রাদুর্ভাব, চুল পড়ার প্যাটার্ন এবং মেডিক্যাল চিকিৎসার ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। এটি হ্যামিল্টন-নরউড শ্রেণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং মহিলাদের টাকের ধরনের লুডভিগ সিস্টেম ব্যবহার করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। মাথার তালুতে স্কারিং থাকলে, ত্বক বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হতে পারে। নন-স্কারিং এলোপেসিয়ায়, ছত্রাক সংক্রমণের পরীক্ষা করতে ঘা এর একটি ছোটো অংশ নেওয়া হতে পারে। তারপরে, যদি কোনও পরিষ্কার কারণ সনাক্ত করা না যায় তবে একটি স্ক্যালপ বায়োপসি করা হতে পারে। ডিফিউজ চুল উঠার ক্ষেত্রে, সিরাম ফেরিটিন এবং থাইরয়েড পরীক্ষা করতে বলা হতে পারে।

টাকের চিকিৎসা:
টাক পরাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নিয়ে জীবন যাপন করা হলো সবচেয়ে স্মার্ট আর সহজ সমাধান। তবে যারা এটা মেনে নিতে পারবেন না তাদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের ট্রিটমেন্ট।

  • মেডিকেশন: মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস মোকাবেলার প্রাথমিক উপায় হচ্ছে মেডিকেশন। এক্ষেত্রে দুই ধরনের মেডিসিন কাজে আসতে পারে। তবে মেডিসিনের সুফল বুঝতে হলে অন্তত তিন থেকে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। মেডিসিন ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। প্রতিটি মেডিসিনেরই সাইড-এফেক্ট রয়েছে এবং শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই বলতে পারবেন তা সেবন বা ব্যবহার আপনার জন্য ঠিক হবে কিনা।
  • হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট: টাক মাথার জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। এই প্রক্রিয়ায় সার্জারির মাধ্যমে শরীরের কোনো অংশ থেকে হেয়ার ফলিকল তুলে অন্য কোনো চুলবিহীন অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং দেশেও বর্তমানে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হচ্ছে। তবে এটি বেশ সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।
  • আর্টিফিসিয়াল হেয়ার: এই পদ্ধতিতে মাথার তালুতে চুলের মতো দেখতে সিনথেটিক ফাইবার ইমপ্ল্যান্ট করা হয়। তবে এক্ষেত্রে সিনথেটিক ফাইবার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • পরচুলা: যারা সার্জারির ঝুঁকি নিতে চান না তাদের জন্য পরচুলা তো রয়েছেই।


হেয়ার লস বা চুলপড়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা একেবারেই ঠিক নয়। আত্মপ্রত্যয়ী হোন, নিজেকে সুন্দর ভাবুন, জীবন উপভোগ করুন।

টাক পড়া বন্ধে ৪ ঘরোয়া চিকিৎসা:
মাত্র চারটি ঘরোয়া উপাদানে চুল পড়া কমানো যায়। তবে এই উপাদানগুলো নিয়ম মেনে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।

আসুন জেনে নেই এসব ঘরোয়া উপাদান কীভাবে ব্যবহার করবেন:

  • অ্যালোভেরা:অ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য খুবই উপকারি। চুল ও মাথার ত্বকে পিএইচ-এর ভারসাম্য রক্ষা করে অ্যালোভেরা। তবে যাদের ত্বকে সমস্যা তারা এর শাঁস ফুটিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের আগা থেকে গোড়া এই শাঁস লাগান। এছাড়া মাথার ত্বকে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
  • দই-মধু-মেথি: রাতে পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ব্লেন্ডারে পিষে এর সঙ্গে টক দই ও মধু মিশিয়ে নিন। গোসলের আগে মাথায় লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • নিমপাতার পানি: পানিতে নিম পাতা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের পর এই পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • দই-মধু-লেবুর রস: ভিটামিন বি ও চুলে প্রোটিন বাড়াতে এসব উপাদানের জুড়ি নেই। এক চামচ দই, এক চামচ মধু ও একটা লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে মাখিয়ে নিন। এরপর শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে