ফোস্কা কী?
ফোস্কা হল একটি ছোট দেহস্থ থলি বা আবরণের মধ্যে বা ত্বকের উপরে একটি দাগ বিশেষ যার মধ্যে তরল সংগৃহীত হয় যেটি ত্বকের উপরের স্তরে (ত্বকের উপরিতলে) দেখা যায়। শরীরে হাত এবং পায়ে সবথেকে বেশী ফোস্কা পড়ে। ফোস্কা সাধারণত পরিষ্কার তরল (সিরাম) দ্বারা, রক্ত বা পূঁজ দ্বারা ভর্তি থাকে। সবসময় চুলকানো অথবা ত্বক রগড়ানো হলে ত্বকের উন্মুক্ত জায়গার ক্ষতি হয় এবং তার ফলে তরল সংগৃহীত হয়, যা এই স্থানের ত্বকের নিচে অবস্থিত শরীরকলাকে পুনরায় ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।

ফোস্কার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ফোস্কা হওয়ার কারণের উপর নির্ভর করে, ফোস্কার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি বিভিন্ন হয়ে থাকে।

  • ফোস্কাতে সাধারণভাবে ব্যথা এবং লালভাব দেখা যায় (যেমন ভুল মাপের জুতা পরা, পুড়ে যাওয়া, আঘাত, ইত্যাদি)।
  • পুড়ে যাওয়ার কারণে হওয়া ফোস্কাতে, অটোইমিউন রোগে (এপিডারমলিসিস বুলোসা) লালভাব এবং চামড়া উঠে যেতে দেখা যায়।
  • ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে জ্বর আসার ফলে ঠোঁটের কাছে ফোস্কা হয় (জ্বর ফোস্কা)।
  • একজিমা, ত্বক সংক্রমণের (চর্মদল) ফলে যে ফোস্কা হয় তাতে চুলকানি হয়ে থাকে।
  • ফ্রস্টবাইট ফোস্কার ক্ষেত্রে চামড়া সাদা এবং চকচকে হয়ে যায় এবং অসাড়ভাব দেখা দেয়।
  • রোদে পোড়ার কারণে যে ফোস্কা হয় তাতে চামড়ার উপর বলিরেখা ও তামাটে ভাব দেখা দেয়।
  • হারপিস জস্টার, চিকেন পক্স ইত্যাদিতে ফোস্কায় জ্বালাভাব সাথে যন্ত্রণা হয় ও তার সাথে একটি খোস দেখা দেয়।


ফোস্কার প্রধান কারণগুলি কি কি ?
চামড়ার উপর ফোস্কার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী। যেমন:

  • দীর্ঘদিন ধরে ত্বক ঘর্ষণ বা মার্জন।
  • তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে, রাসায়নিক, অতিবেগুনী রশ্মি, হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা ইত্যাদি কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া।
  • চিকেন পক্স, হারপিস, জস্টার এবং ত্বক সংক্রমণ প্রভৃতি রোগ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রান্ত ব্যাধি যেমন পেমফিগাস, এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা ইত্যাদি।
  • অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যেমন নির্দিষ্ট কিছু গাছপালার সংস্পর্শে আসা (বিষ আইভি, ওক ইত্যাদি), রাসায়নিক ইত্যাদি।


কিভাবে ফোস্কা নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা হয়?
শারীরিক পরীক্ষা, উপসর্গের ইতিহাস, এবং বিভিন্ন পরীক্ষা ফোস্কা নির্ণয় করতে ডাক্তারদের সাহায্য করে।

পরীক্ষা এবং ইতিহাস

  • অবয়ব - পরিষ্কার তরল, রক্ত, বা পুঁজ দ্বারা ফোস্কা গঠিত হয়
  • অবস্থান - শরীরের একপাশে বা নির্দিষ্ট অবস্থানে বা পুরো শরীরের উপর ফোস্কা
  • উপসর্গের ইতিহাস - ফোস্কা ব্যথা, চুলকানি, জ্বর, ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত।


পরীক্ষা

  • সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা
  • আইজিই স্তর নির্ণয় অ্যালার্জি সনাক্তকরণে, আইজিজি, আইজিএম এবং অন্যান্য উন্নত পরীক্ষাগুলি অটোইমিউন রোগ নির্ণয়ের জন্য।
  • ফোস্কা থেকে নেওয়া তরলের নমুনায় থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে সনাক্ত করা যায় সংক্রমণের কারণ যে ব্যাকটেরিয়া সেটিকে এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকটি।
  • ফোস্কার কারণ যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসটি সেটিকে সনাক্ত করতে পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর করা হয়।
  • অ্যালার্জির কারণগুলি সনাক্ত করতে রক্তের অ্যালার্জি পরীক্ষা এবং ত্বকের অ্যালার্জি পরীক্ষা করা হয়।
  • ত্বকের বায়োপসি - ফোস্কার কারণ সনাক্ত করতে এবং অন্যান্য কারণগুলি জানতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ত্বকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
  • অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করতে বিশেষ পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন হয় যেটি ফোস্কা গঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  • বংশগত সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে জিনগত পরীক্ষাগুলি করা হয়।


ফোস্কা সাধারণত ওষুধ ছাড়া নিজের থেকেই ভাল হয়ে যায়। ওষুধ যেসকল পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয় তা হল:
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়

  1. ফোস্কা যদি পূঁজ পূর্ণ হয় তবে সংক্রমণের চিকিৎসা করতে
  2. যখন ফোস্কা বার বার হয়
  3. অ্যালার্জি, আলোক-সংবেদনশীলতা, অথবা পুড়ে যাওয়ার কারণে যদি ফোস্কা মারাত্মক আকার ধারণ করে
  4. যদি মুখের ভিতর অথবা অন্য কোন অস্বাভাবিক জায়গায় ফোস্কা হয়


অ্যান্টিভাইরাল বা সংক্রামণরোধী ওষুধ

  1. চিকেনপক্স, হারপিস জোস্টার বা জ্বর ফোস্কার কারণে হওয়া ফোস্কার জন্য।


  • কর্টিকোস্টেরয়েডস এবং ইমিউনিটি মডিউলেটিং ওষুধ অটোইমিউন রোগের কারণে হওয়া ফোস্কায় ব্যবহৃত হয়।
  • প্রদাহনাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
  • অ্যালার্জিরোধী ওষুধ চুলকানি কমাতে ব্যবহার করা হয়।
  • সানস্ক্রিন লোশন ত্বককে রোদে পোড়ার হাত থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়।
  • ফোস্কার অবস্থা মারাত্মক হলে এবং ত্বকে এর কারণে বিকৃতি সৃষ্টি হলে সার্জারি এবং ত্বক গ্রাফটিং প্রয়োজনীয়, বিশেষত অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।


ফোস্কা নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়:

  • খুব সহজ ঘরোয়া সমাধানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টুথপেস্টের ব্যবহার। ফোসকা পড়া স্থানে যতো দ্রুত সম্ভব টুথপেস্ট লাগিয়ে নিন। এতে করে ফুলে উঠা এবং ফোসকার ভেতরের পানি খুব সহজেই কমে যাবে এবং এতে জ্বলুনিও কমে আসবে অনেক।
  • নতুন জুতো পরার আগে পায়ে ভালো করে নারকেল তেল লাগিয়ে নিন৷ এতে আপনার পা স্লিপারি হয়ে যাবে ঠিকই কিন্তু ফোসকা আর পরবে না৷ আর ফোস্কা পরে গেলে তেল লাগিয়ে তারপরই জুতো পরুন৷ তাতেও ফোসকা সেরে যাবে৷
  • ফোসকা পড়া স্থানে দ্রুত ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে নিলে ফোসকার সমস্যা থেকে অনেক ভালো রেহাই পাওয়া যায়। অনেক সময় দ্রুত ডিমের ব্যবহারে চামড়ায় ফোসকাই পড়ে না।
  • চালের গুড়ো দিয়ে ফোসকার দাগ তোলা যায়৷ দুই চামচ চালের গুড়োর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে মিশ্রণটি ফোসকায় লাগান৷ শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷
  • ফোসকা পরা জায়গাটায় বারবার মধু লাগিয়ে ঘষতে থাকুন৷ খুব দ্রুত ফোসকা শুকিয়ে যাবে৷
  • এক চামচ কর্পূরের সঙ্গে খানিকটা নারকেল তেল মিশিয়ে আপনার পায়ের ফোসকায় লাগিয়ে দিন৷ প্রতিদিন এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করুন৷ এতে আপনার ফোসকা সারবে৷ জ্বালাও করবে না৷
  • ফোসকা পড়া সমস্যার আরেকটি সহজ সমাধান হচ্ছে ডিওডোরেন্টের ব্যবহার। স্প্রে ডিওডোরেন্ট নয় ডিও রোল অন ধরণের ডিওডরেন্ট ফোসকার উপরে লাগিয়ে নিলে অনেকটা উপশম হবে বেশ দ্রুত।
  • গ্রিন টীর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান খুব দ্রুত ফোলা কমাতে এবং প্রদাহ বন্ধ করতে সহায়তা করে। যদি হাতের কাছে গ্রিন টি না থাকে তাহলে ব্ল্যাক টি দিয়েও কাজ চালাতে পারেন। এতেও ভালো ফল পাবেন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে