কান বন্ধ হয়ে যাওয়া কি?
কানের মধ্যভাগ বা মধ্য কর্ণটি আমাদের নাকের পেছনের দিকে ইউস্টেকিয়ান টিউব নামক টিউব বা নল দ্বারা সংযুক্ত থাকে, এটির মধ্যে প্রতিবন্ধকতা ঘটলে তার ফলে কান বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায়, কানে ভরাটভাব বা চাপ অনুভূত হয়। বিভিন্ন কারণে এই নলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে যার মধ্যে কানে খোল জমা থেকে কানের সংক্রমণ আবার কানের ভিতর চাপের আকস্মিক পরিবর্তনও হতে পারে। কান বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ বিরক্তিকর এক অবস্থা।

কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি কান বন্ধের ক্ষেত্রে দেখা যায়:

  • মাথা ঘোরা
  • কাশি
  • কানের মধ্যে ব্যথা (কানে ব্যথা) এবং কান ভরাট থাকার অনুভুতি
  • আক্রান্ত কানে চুলকানি বোধ হওয়া
  • কান থেকে তরল নির্গমণ বা দুর্গন্ধ বার হওয়া
  • কোনো বহিরাগত শব্দের উৎস ছাড়াই কানের মধ্যে গুঞ্জন (কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ) ধ্বনিত হওয়া বা ফট্‌ফট্ শব্দ হওয়া
  • আক্রান্ত কানের কারণে শ্রবণে অসুবিধা বা কম শোনা যা দিন দিন আরও খারাপও হতে পারে,


যখন একজন ব্যক্তি কানের ব্যথা বা কম শোনা অনুভব করেন, ডাক্তার কানের অন্য কোনও সমস্যা ইঙ্গিত করতে পারেন যেটিতে তাৎক্ষনিক চিকিৎসার প্রয়োজন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত কর্ণপটহের ক্ষেত্রে।

কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
কানের নালীর বাইরের দিকটি ত্বকের দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে যার মধ্যে কানের খোল নিঃসরণের গ্রন্থি রয়েছে। কানের গভীর অংশ, যেমন কর্ণপটহকে, এই খোল এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুল ধুলো এবং অন্যান্য বাইরের কণাগুলির দ্বারা ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে। এই খোলের একটি ছোট পরিমাণ নিয়মিত কানের বাইরের অংশের দিকে বার করে দেওয়া হয় আর নতুন খোল তার স্থান নেয়। তবে, যদি এই খোল অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসরণ হয় বা উপযুক্তভাবে পরিষ্কার করা না হয়, এটি জমতে শুরু হয়। এর ফলে কানে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সেইসব ব্যক্তিদের মধ্যে খুবই সাধারণ, যারা নিজেদের কান নিজেরাই বেপয়েন্ট পেন এবং পিন ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যান্য সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • সাইনাস, সংক্রমণ, ঠান্ডা লাগা, বা অ্যালার্জির কারণে ইউস্টেকিয়ান টিউবে ফোলাভাব।
  • তরল জমা হওয়া।
  • কানে সংক্রমণ।
  • গাড়ি চালানো, বিমানে ভ্রমণ, ইত্যাদি সময়ে বায়ুর চাপের পরিবর্তন।


কান বন্ধ হয়ে যাওয়া কিভাবে নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
কান বন্ধ হওয়া নির্ণয় করতে সাধারণত অটোস্কোপ নামে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটি আলো ব্যবহার করে এবং কানের অভ্যন্তরকে বড় ভাবে দেখতে সাহায্য করে, ফলে ডাক্তার কান সহজে পরীক্ষা করতে পারেন।

কান বন্ধ হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা:

  • যদি ঠাণ্ডা লাগার কারণে অথবা উচ্চতার কারণে ইউস্টেকিয়ান টিউবটি অবরুদ্ধ থাকে, তবে নিম্নলিখিত ভাবে প্রচেষ্টা করা যেতে পারে:
  • চিনি-মুক্ত চিউয়িংগাম চিবানো বা খেয়ে ফেলা, এর ফলে যে সঞ্চালন হয় পেশীর তাতে ইউস্টেকিয়ান টিউব খুলতে সাহায্য হয়। যদি এই প্রতিকার কাজ না করে, তাহলে আবার চেষ্টা করা যেতে পারে।
  • নাক ও মুখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে হবে। একটি ফটফট্ শব্দ হলে বোঝা যাবে নলটি উন্মুক্ত হয়েছে।
  • খোল জমার কারণে যদি কানের নল বা গহ্বর বন্ধ হয়ে থাকে, তবে নিচের পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করা যায়:
  1. অতিরিক্ত খোল চিকিৎসক দ্বারা একটি ছোট, বাঁকা যন্ত্র ব্যবহার করে চেঁছে পরিষ্কার করা
  2. চিকিৎসক খোল অপসারণ করতে শোষন চাপ দেবার যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
  3. একটি উষ্ণ পানি ভরা রবার-বাল্ব সিরিঞ্জ বা গাঁইতির মতো যন্ত্র ব্যবহার করে চিকিৎসক কানের খোল ধুয়ে বার করতে পারেন।
  • কান বন্ধ হওয়ার ঘটনা বার বার ঘটলে, চিকিৎসক খোল অপসারণের জন্য ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যার ফলে কানের খোল নরম হয়ে যায় এবং তারপর একটি তুলোর কাঠি ব্যবহার করে কান পরিষ্কার করা যেতে পারে।
  • যে রোগীদের অ্যালার্জি আছে, স্টেরয়েড ওষুধের দ্বারা রোগের চিকিৎসা করা হয় যা নাকে স্প্রে করা হয় বা ডিকনজেস্টেনটস বা জমাটবাঁধা রোধকারী (মৌখিক বা নাকের স্প্রে হিসাবে দেওয়া হয়) দেওয়া হয়, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবরোধকে পরিষ্কার করে দেয়।
  • সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে ইউস্টেকিয়ান টিউবে প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়।


কান বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে করণীয়:
একবার শিক্ষা হয়ে গেলে পরেরবার যেন এই অবস্থায় না পড়েন, তার জন্য নিশ্চয়ই সাবধান থাকবেন। এর জন্য—

  • চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে একটি ডিকগজেস্টেন্ট ব্যাগে নিয়ে নিন। এটা আবার নিজের পছন্দমতো কিনতে যাবেন না। চিকিৎসক যেটা বলবেন, সেটাই ব্যবহার করবেন। বাইরে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে এটা ব্যবহার করতে পারেন।
  • ইয়ুস্টাচিয়ান টিউব যেন বন্ধ না হয়ে তার জন্য নাসাল স্প্রে ব্যবহার করেন অনেকে। তবে এর জন্যও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
  • বিমানে উঠলে অনেকের এ সমস্যা দেখা দেয়। তাই বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পর এয়ারপ্লাগ ব্যবহার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে