হাড়ে ব্যথা কাকে বলে?
হাড়ে ব্যথা হল একটা উপসর্গ যা বেদনা রূপে, একটা বা তার বেশি হাড়ে সংবেদনশীলতা অথবা অস্বস্তি রূপে প্রকাশ পায়। হাড়ে ব্যাথা সাধারণত হাত ও পায়ের লম্বা হাড়গুলিকে আক্রান্ত করে। যদিও বেশিরভাগ সময়েই অবহেলা করা হয়, হাড়ে ব্যথা ভীষণভাবে একজন ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবন ও সাধারণ কাজকর্মগুলিকে ব্যাহত করে।

সাধারণত মাঝ বয়সী বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষ হাড়ের ব্যথায় ভুগে থাকেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরও অনেক পরিবর্তন হয়। শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশির আকার ও হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এতে বারবার আঘাত লাগার প্রবণতায় হাড় ভেঙে যায়।

হাড়ে ব্যথার সাথে যুক্ত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
হাড়ে ব্যথার চরিত্রগত বৈশিষ্টগুলি এর অভ্যন্তরীণ কারণগুলির উপর নির্ভর করে।

ক্যান্সার-এর সাথে সম্পর্কিত হাড়ে ব্যথা:

  • আক্রান্ত স্থানে প্রাথমিক ভাবে সংবেদনশীলতা
  • ক্রমান্বয়ে অথবা মাঝে মাঝে ব্যথা, এমনকি বিশ্রামের সময়ে ব্যথা।


অস্টিওপরোসিসের সাথে সম্পর্কিত হাড়ে ব্যথা:

  • ভীষণ পিঠে ব্যথা
  • দেহভঙ্গিতে পরিবর্তন
  • উচ্চতা হ্রাস হওয়া
  • হাঁটার ক্ষমতা চলে যাওয়া
  • দীর্ঘস্থায়ী বিকলত্ব।


বাত-এর সাথে সম্পর্কিত হাড়ে ব্যথা:

  • হাড়ের সন্ধির নমনীয়তা চলে যায়
  • সন্ধিতে ফোলাভাব
  • কঠিনতা ও অঙ্গ বিকৃতি
  • কাজকর্ম ও হাঁটাচলা কমে যাওয়া।


পাগেট’স রোগ-এর সাথে জড়িত উপসর্গগুলি হল:

  • ভার-বহনকারী হাড়ে ব্যথা, যেমন শিরদাঁড়া, শ্রোণীচক্রে, এবং পায়ে
  • হাড়ে ক্ষুদ্র ফাটল।


হাড়ে ব্যথার অন্যান্য কারণগুলিতে, যেমন: হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি কারণ অনুযায়ী আনুষঙ্গিক উপসর্গ আছে।

হাড়ে ব্যথার প্রধান কারণগুলি কি কি?

  • বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি
  • হাড় ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপরোসিস ইত্যাদি
  • বাত
  • পাগেট’স রোগ
  • শরীরের এক স্থানের ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া (স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রস্টেটের ক্যান্সার সাধারণত হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে)
  • হাড়ের ক্যান্সার, যা হাড়েই উত্পন্ন হয়
  • হাড়ে রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ যেমন—সিকেল সেল এনিমিয়া
  • অস্থির প্রদাহ
  • অস্টিওমাইলাইটিস জাতীয় হাড়ের মারাত্মক ইনফেকশন
  • শারীরিক আঘাত বা মানসিক আঘাত, দূর্ঘটনার পরে হাড়ে ফাটল বা ফ্র্যাকচার
  • লিউকেমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ইত্যাদি
  • বারবার আঘাত পাওয়া
  • অল্পবয়সী শিশুদের ফ্র‍্যাকচার (চাপ পড়ার ফলে ফ্র্যাকচার, যা অল্পবয়সী শিশুদের হয়ে থাকে)।


হাড়ে ব্যথা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে হয়?
হাড়ের ভিতরের অবস্থা বোঝার জন্য সম্পূর্ণ চিকিৎসাগত পূর্ব ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা অতি প্রয়োজনীয়।

এই রোগে যে সকল পরীক্ষাগুলি করতে দেওয়া হয়:

  • রক্ত পরীক্ষা (যেমন সম্পূর্ণ ব্লাড কাউন্ট ও পৃথক ব্লাড কাউন্ট)
  • হাড়ের এক্স-রে
  • সিটি বা এমআরআই স্ক্যান
  • হরমোনের স্তর গবেষণা
  • পিটুইটারি ও আড্রিনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা পরীক্ষা
  • ক্যান্সার আছে কি না নিশ্চিত হতে ক্যান্সার মার্কার
  • মূত্র পরীক্ষা।


হাড়ে ব্যথার চিকিৎসার দ্বারা অভ্যন্তরীণ রোগ ও উপসর্গগুলি, উভয়ের রোধ সম্ভব। এর মধ্যে আছে:

  • ওষুধ প্রয়োগ: অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা রোধকারী ওষুধ, হরমোন থেরাপি, দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে বিশ্রামের পরে বেদনানাশক এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য জোলাপ।


অস্টিওআর্থারাইটিস বা হাড়ের বাতের অন্যান্য চিকিৎসাগুলি হল:

  • সাময়িক ব্যথা-উপশমকারী মলম
  • শরীরচর্চা এবং শারীরিক থেরাপি
  • অস্থি সন্ধি বা প্রতিস্থাপন থেরাপি


অস্টিওপরোসিস এবং বাতের চিকিৎসার মধ্যে পড়ে:

  • যেসব শরীরচর্চা শরীর প্রসারিত, শক্তিশালী, দেহভঙ্গী ঠিক করতে ও চলার গতি বাড়াতে সাহায্য করে
  • পুনর্বাসন।


পাগেট’স রোগের অন্যান্য চিকিৎসাগুলি হল:

  • হাড়ের পুনর্গঠনের হার কমাতে ওষুধ
  • হাড়ের পুনর্শ্রেণিবিন্যাস বা সন্ধি প্রতিস্থাপন করতে অনেক সময় সার্জারির প্রয়োজন হয়
  • হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে ও ওজন-বহনকারী সন্ধিগুলোকে সচল ও ব্যথামুক্ত রাখতে শরীর চর্চা।


হাড়ের ক্যান্সারের চিকিৎসাগুলি হল:

  • সার্জারি
  • কেমোথেরাপি
  • রেডিওথেরাপি
  • ইমিউনোথেরাপি।


হাড় ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়:

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করুন। মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করুন
  • আক্রান্ত স্থানটিকে বিশ্রামে রাখুন
  • হাড় ক্ষয় বা হাড়ের অন্য কোনো রোগ হয়েছে কি না তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে