চোখ জ্বালাপোড়া কি?
চোখ জ্বালাপোড়া হল চোখের মধ্যে চুলকানি, যন্ত্রণা অথবা জ্বালার অনুভূতি। এটা প্রায়ই চোখ থেকে পানি নির্গমণের সাথে বারবার ঘটে। ব্লেফারাইটিস, শুকনো চোখ, কনজাঙ্কটিভাইটিস এবং চোখের এলার্জি হল চোখ জ্বালাপোড়ার কিছু সাধারণ কারণ।

চোখ জ্বালাপোড়ার প্রধান যুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
চোখ জ্বালাপোড়ার সাথে যুক্ত বারবার দেখা সাধারণ উপসর্গগুলি হল:

  • চোখ থেকে পানি পড়া
  • চোখের লালভাবের সাথে বেদনা
  • চোখে জ্বালার অনুভূতি
  • চোখের মধ্যে চুলকানি


অন্তর্নিহিত রোগের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট উপসর্গগুলি হল:

  • ব্লেফারাইটিস: এটি চোখের পাতার একটি জ্বলন যেখানে চোখের পাতার গোড়াটা তৈলাক্ত দেখায়, স্টাইয়ের উপস্থিতির সাথে খুশকির মতো ফ্লেক্সগুলি (লাল, ফুলে যাওয়া, চোখের পাতার কাছে ডেলার উপস্থিতি)
  • শুকনো চোখ: এটা চোখের মধ্যে যন্ত্রণা এবং বিরক্তিকর অনুভূতি; চোখের লালভাব; চোখের চারপাশে অথবা মধ্যে শ্লেষ্মা স্তরের গঠন; চোখে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি চিহ্নিত করে
  • চোখের অ্যালার্জি বা কনজাংটিভাইটিস: অ্যালার্জি এবং কনজাংটিভের প্রদাহ বেদনা, ফোলাভাব এবং চোখে চুলকানি; অশ্রুসিক্ত চোখ; চুলকানি, বন্ধ নাক এবং হাঁচি হয়ে থাকে।


চোখ জ্বালাপোড়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
চোখ জ্বালাপোড়ার সাধারণ কারণগুলি হলো:
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে বা অশ্রু গ্রন্থি এবং নালীর অকার্যকারীতায় চোখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে গেলে অর্থাৎ চোখ শুষ্ক হয়ে পড়লে চোখে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। একটানা দীর্ঘসময় কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে এমন সমস্যা হতে পারে। আবার ঘরে বা কর্মক্ষেত্রে শীতাতপনিয়ন্ত্রণযন্ত্র চলতে থাকলে সেখানে যাঁরা দীর্ঘসময় অবস্থান করেন, তাঁদেরও চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। চোখে ধুলাবালু বা এ-জাতীয় কোনো কিছু পড়লেও চোখে জ্বালা করতে পারে। চারপাশের পরিবেশে এমন অনেক কিছুই আছে, যা চোখের সংস্পর্শে এলে চোখ জ্বালাপোড়া করাটা খুবই স্বাভাবিক।

চোখ জ্বালাপোড়ার বিরল কারণগুলি হলো:

  • দীর্ঘদিন ধরে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে
  • রিউম্যাটয়েড আর্থরাইটিস, থাইরয়েড রোগ এবং লুপাস
  • ঘুমের ওষুধ, অম্বলের ওষুধের মত কিছু ওষুধ


চোখ জ্বালাপোড়া কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চোখ জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা করতে মধ্যে অন্তর্নিহিত রোগ নির্ণয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসার ইতিহাস নেন, বিশেষ করে কোনো অ্যালার্জি অথবা অস্বস্তিকর এবং সংক্রামক এজেন্টের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিনা তা নোট করেন।

ফোলাভাব এবং লালচে ভাব পরীক্ষা করার জন্য একটি স্লিট মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। অশ্রু প্রবাহ এবং অশ্রুর ঘনত্বও পরীক্ষা করা হয়।

চোখ জ্বালাপোড়ার জন্য চিকিৎসা অন্তর্নিহিত অবস্থার উপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো:

  • সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক।
  • বেদনা এবং ফোলা চোখের থেকে মুক্তির জন্য কৃত্রিম অশ্রু বা ডিকঞ্জেস্টেন্ট চোখের ড্রপ এবং গরম ভাপ।
  • এলার্জির ক্ষেত্রে, ডাক্তার নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেবেন।


চোখের জ্বালাপোড়া কমানোর ৫ ঘরোয়া উপায়:

  • চোখ পরিষ্কার রাখুন: নিয়মিত চোখ পরিষ্কার রাখার অভ্যাস গড়ুন। সামান্য পরিমাণে গরম বা ঠান্ডা পানিতে তুলো ভিজিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে পারেন। এভাবে চোখের পাতা, আইল্যাশ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। দিনে যতবার পারবেন, চোখ ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
  • ওমেগা: মাছের তেলে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত মাছের তেল খেতে না পারলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। এই উপাদানটি চোখের জন্য খুবই ভালো। চোখের মেইবোমিয়ান গ্ল্যান্ড ভালো রাখে। চোখের পাতার একদম কোণায় এই গ্ল্যান্ড থাকে।
  • আইড্রপ ব্যবহার করুন: সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করার কারণে চোখে ভীষণ চাপ পড়ে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আইড্রপ ব্যবহার করুন। এই ধরনের আইড্রপগুলো চোখ পরিষ্কার রাখে ও চোখের শুষ্কতা দূর করে। ড্রপ ব্যবহারের পর অবশ্যই বিশ্রাম নেবেন এবং চোখ ম্যাসাজ করবেন।
  • পানি খেতে হবে: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে শরীরের একাধিক সমস্যার সমাধান ঘটে। ঠিক একইভাবে চোখও ভালো রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খেলে চোখের শুষ্কতা বেড়ে যায়। চোখের দৃষ্টিও কমে যায়।
  • ভিটামিন: সূর্য রশ্মি থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি অনেকের শরীরেই লাগে না। এর ফলে শরীরে ভিটামিন ডি শূন্যতা হয়ে যায়। যা বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজনে ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। এই ভিটামিনের অভাবে ড্রাই আইজের সমস্য়া শুরু হয়।


চোখ জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের উপায়:
কম্পিউটারের পর্দার দিকে একটানা দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন না। চোখের পলক না ফেলে কম্পিউটারের পর্দার দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে চোখে জ্বালাপোড়া করতেই পারে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় প্রতি ২০ মিনিট পর পর বাইরের দিকে বা দূরে কোথাও তাকান। কাজের মধ্যেও চোখকে এইটুকু স্বস্তি দিতেই হবে, এভাবে কাজ করলে কাজেও আরাম পাবেন।

শীতাতপনিয়ন্ত্রণযন্ত্রের একেবারে সরাসরি থাকাটা ঠিক নয়। এ যন্ত্রের ঠান্ডা হাওয়ায় মন জুড়ালেও খেয়াল রাখতে হবে, এ যন্ত্র থেকে সরাসরি আসা সেই হাওয়া চোখকে শুষ্ক করে ফেলতে পারে এবং তা চোখ জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে