মুখের জ্বালা পোড়া কি?
মুখের জ্বালা পোড়া বা বার্নিং মাউথ সিনড্রোম (বিএমএস) হল একটি ব্যথাযুক্ত হতাশজনক অবস্থা যার কারণে জিহ্বা, ঠোঁট, তালু অথবা পুরো মুখেই জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হতে পারে। নারী এবং পুরুষ উভয়ের মাঝেই বার্নিং মাউথ সিনড্রোম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তবে বিশেষত মেয়েদের মেনোপজের সময় বা মেনোপজের পরে বার্নিং মাউথ সিনড্রোম বেশি দেখা যায়। এ রোগটি অল্প বয়সেও হতে পারে।

এটা একটা বিরল অবস্থা এবং উপসর্গ ও কারণগুলো মূলত ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হয়।

মুখের জ্বালা পোড়ার প্রধান লক্ষণগুলো এবং উপসর্গগুলো কি?
মুখের জ্বালা পোড়ার প্রধান লক্ষণগুলো এবং উপসর্গগুলো হল:

  • জিভে জ্বলন্ত সংবেদন, যা বেদনাদায়ক হতে পারে এবং একটা পোড়ানো ক্ষতের মত অনুভব হতে পারে।
  • গরম চা, বা অ্যাসিডিক পানীয়ের মত বিশেষ পানীয়গুলোতে চুমুক দেওয়া অবস্থাটা গুরুতর করে তুলতে পারে।
  • একজন ব্যক্তির মুখের ঠোঁট বা কোণেও জ্বলন্ত অনুভূতি হতে পারে।
  • স্বাদ উপলব্ধি পাল্টে যাওয়ায় খাওয়া কষ্টকর হয়।
  • কদাচিৎ, একটা রোগী মুখে অসাড় অবস্থার (কিছু না অনুভব করার) অভিযোগও করতে পারে।


মুখের জ্বালা পোড়ার মূল কারণগুলো কি?
বিএমএস -এর প্রধান কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হল:

  • যখন মুখের লালা তৈরি কমে যায় তখন এক্সেরোস্টোমিয়া বা শুষ্ক মুখ দেখা যায়। মুখের শুষ্কতাও বিএমএস সৃষ্টি করে।
  • দাঁত কামড়ানো
  • যে সব স্নায়ু ব্যথা ও স্বাদ নিয়ন্ত্রণ করে তা কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে
  • কৃত্রিম দাঁত বা ডেনচার ঠিকভাবে স্থাপন করা না হলে
  • এলার্জিজনিত সমস্যা যেমন কোন রোগীর খাবার বা মেটালিক ডেনচারের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে
  • এসিড উদ্গীরণের কারণে
  • দুঃশ্চিন্তা বা হতাশার কারণে অর্থাৎ যে কোন ধরনের মানসিক সমস্যা।
  • মুখের সংক্রমণ যেমন ক্যান্ডিডা, বা মুখে আলসারের কারণে জ্বলন্ত সংবেদন হতে পারে।
  • যে মানুষের ডায়াবেটিস অথবা থাইরয়েড রোগ আছে তারা প্রায়ই মুখে জ্বালার অভিযোগ করেন। হরমোনের অসামঞ্জস্য এক্সেরোস্টোমিয়ার কারণ, যা জ্বলন্ত সংবেদনের সৃষ্টি করে।


কিভাবে মুখের জ্বালা পোড়াকে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা যায়?
রোগীর উপসর্গ এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে বিএমএস এর রোগ নির্ণয় অত্যন্ত সহজ। যাইহোক, কারণ নির্ধারণ করতে কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে।

  • ডায়াবেটিস, থাইরয়েড রোগগুলোর জন্য রক্ত পরীক্ষা।
  • লালার পরিমাণ এবং গুণমান নির্ণয়ের জন্য লালা পরীক্ষা।

বার্নিং মাউথ সিনড্রোমের চিকিৎসা করতে হয় রোগের লক্ষণ এবং কারণ অনুযায়ী। অনুমানভিত্তিক চিকিৎসা তেমন ফলপ্রসূ হয় না।

বার্নিং মাউথ সিনড্রোম এর রোগীদের যা করা প্রয়োজন:

  • অল্প অল্প করে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • গলায় কোন সমস্যা না থাকলে বরফ কুচি চোষা যেতে পারে পরিমিতভাবে
  • গরম ও মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণে বিরত থাকতে হবে।
  • চিনিবিহীন চুয়িংগাম চোষা যেতে পারে।
  • এ্যালকোহল এবং ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
  • উচ্চ রক্তচাপ যদি থাকে তাহলে এর ওষুধে পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। তবে মুখ ও জিহ্বায় জ্বালাপোড়া দেখা দিলে এবং তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে অতি দ্রুত এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন মুখ রোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে