পোড়া কি?
পোড়া হল সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত ক্ষতগুলির মধ্যে অন্যতম। একজন ব্যক্তি বাড়িতে, রাস্তায়, কর্মক্ষেত্রে - যে কোন জায়গায়ই পুড়ে যেতে পারেন। পোড়া হল ত্বক বা অন্যান্য টিস্যুতে তাপ, ঠাণ্ডা, তড়িৎ, রাসায়নিক, ঘর্ষণ বা বিকিরণ দ্বারা সৃষ্ট এক প্রকার আঘাত। গরম তরল, কঠিন বস্তু বা আগুনের সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি পোড়ে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলের নারীরা উন্মুক্ত রান্নার আগুন বা অনিরাপদ রাঁধুনি চুলা ঘন ঘন ব্যবহারের ফলে পোড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। মদ্যাশক্তি এবং ধূমপানে অন্যান্য ঝুঁকি আছে। পোড়া স্ব ক্ষতি করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সহিংসতার ফলেও ঘটতে পারে।

যে পোড়া শুধুমাত্র পৃষ্ঠস্থ ত্বকের স্তর প্রভাবিত করে তা অগভীর বা প্রথম-ডিগ্রি পোড়া হিসাবে পরিচিত। জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে যায় এবং ব্যথা সাধারণত প্রায় তিন দিন স্থায়ী হয়। যখন আঘাত প্রসারিত হয়ে অন্তর্নিহিত ত্বকের স্তরে প্রবেশ করে, তখন এটা একটি অর্ধ-বেধ বা দ্বিতীয় ডিগ্রি পোড়া হয়। ফোসকা ঘন ঘন উপস্থিত হয় এবং সেগুলো প্রায়ই খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। চিকিৎসা আট সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োজন হয় এবং ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে পারে। একটি পূর্ণ-বেধ বা তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া ত্বকের সকল স্তর থেকে প্রসারিত করে। চতুর্থ ডিগ্রী পোড়ার ফলে চিরস্থায়ী টিস্যু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, অনেক ক্ষেত্রে পেশী, রগ অথবা হাড় পর্যন্ত পুড়ে যেতে পারে।

পোড়ার প্রধান লক্ষণগুলো এবং উপসর্গগুলো কি?
পোড়ার মাত্রার সাথে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়।
প্রথম-মাত্রার পোড়া:

  • অল্প ফোলা
  • লাল ভাব (লালচে)
  • তীব্র যন্ত্রণা
  • শুষ্কতা এবং ত্বকের পিলিং (খসে পরা)
  • একসময় পোড়া ত্বক খুলে যাওয়ায় দাগের প্রায় পুরোপুরি দেখা না যাওয়া।


দ্বিতীয় -মাত্রার পোড়া:

  • পোড়া ত্বকের প্রথম স্তরটিতে ছড়িয়ে যায়
  • তীব্র বেদনা এবং লালভাব
  • ত্বকের ওপর ফোসকা
  • ভেজা, ফোসকার মধ্যে পানিভরা পদার্থ যা যদি ফোসকা ফাটে তবে ঝরতে পারে
  • মোটা, নরম কলা যা ক্ষতটির ওপর একটা মামড়ি গঠন করে
  • পোড়া জায়গায় চামড়ার স্বাভাবিক রংয়ের পরিবর্তন
  • চামড়া স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে গ্রাফ্টিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে


তৃতীয়-মাত্রার পোড়া:

  • ত্বকের সমস্ত স্তরগুলির ভিতর পর্যন্ত যায়
  • নার্ভের ক্ষতি এবং সংবেদন হারানোর কারণ হয়
  • সাদা এবং মোমের মত অথবা প্রায় বাদামী দেখা যেতে পারে
  • পোড়া জায়গা চামড়ার মত অনুভব হয় এবং উত্থিত দেখায়
  • গুরুতর দাগ এবং ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সার্জারির প্রয়োজন
  • সম্পূর্ণরূপে ভাল হতে খুব বেশি সময় লাগতে পারে।


পোড়ার প্রধান কারণ কি?
পোড়ার কিছু কারণ অন্তর্ভুক্ত করা হল:

  • কেমিক্যাল এবং ইলেকট্রিসিটি
  • আগুন এবং আগুনের শিখা
  • গরম বস্তু
  • ফুটন্ত গরম তরলের বাষ্পপ্রদাহ
  • রোদ্দুরে বেশিক্ষণ (দীর্ঘসময়) অনাবৃত অবস্থায় থাকা


কিভাবে পোড়াকে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
রোগ নির্ণয়ের প্রথম পদক্ষেপটি হল পোড়াটার পরিমাণ ও তীব্রতাকে পুরোপুরি পরীক্ষা করা। যদি ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হয় তাহলে রোগীদেরকে বিশেষ চিকিৎসালয় বা বার্ন সেন্টারের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। অন্য কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা দেখার জন্য এক্স-রে এর মতো কিছু পরীক্ষা করা হতে পারে।

পোড়ার চিকিৎসা:
পোড়ার মাত্রার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। কিছু পোড়ার পরিচর্যা হয়তো বাড়িতেই করা যায়, কিছু ক্ষেত্রে অবিলম্বে মেডিক্যাল অ্যাটেনশনের প্রয়োজন হতে পারে।

ত্বকের উপরিভাগের পোড়ার (অগভীর পোড়া) ক্ষেত্রে সাধারণত প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে যায়, সেখানে ফোসকাও পড়তে পারে। গভীরভাবে পুড়ে গেলে জ্বালাপোড়া তেমন হয় না, আক্রান্ত স্থান সাদাটে হয়ে যায়, ফোসকা পড়ে না। তবে পোড়া ক্ষত গভীর বা অগভীর যে রকমই হোক না কেন, শরীরের যত কম বা বেশি অংশই পুড়ে যাক না কেন, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে কাছের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে যেতে হবে। সেই সুযোগ না পেলে নিকটস্থ শল্যচিকিৎসকের (সার্জন) শরণাপন্ন হতে হবে। সেই সুযোগও না পেলে যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ক্ষতের মাত্রা নির্ণয় করে যতটা চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ আছে, সেটি নিয়ে এরপর প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের শরীরের কম অংশ পুড়লেও তা মারাত্মক হতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।

পুড়ে গেলে যা করবেন, যা করবেন না:

  • প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ছাড়া অন্য কিছুই ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানি, বরফ, কুসুম গরম পানি—কোনোটাই পুড়ে যাওয়া স্থানের জন্য উপযোগী নয়।
  • ঠাণ্ডা পানি বা বরফ বেশিক্ষণ ব্যবহার করবেন না। এতে করে সম্পূর্ণ জায়গাটি একেবারে অবশ হয়ে যাবে এবং বিপদ বাড়বে। একে কোল্ড বার্ন বলে।
  • ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর নির্ভর করবেন না। বাড়িতে নিজেরা বুদ্ধি করে কিংবা কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে লবণ মেশানো পানি, ভাতের মাড়, তেল, টুথপেস্ট, ডিম—এ রকম কোনো কিছুই প্রয়োগ করা যাবে না।
  • কাপড় বা কোনো কিছু দিয়ে আক্রান্ত স্থান বাঁধবেন না।
  • আক্রান্ত স্থানে সিলভার সালফাডায়াজিন মলম প্রয়োগ করা যায়, কিন্তু এ ছাড়া অন্য কোনো মলম, জেলি, মধু—কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। কপালে, চোখের কাছে সিলভার সালফাডায়াজিন মলম প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে; খুবই হালকাভাবে মলমটি লাগাতে হবে যাতে তা চোখে না চলে যায়।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে