কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কাকে বলে?
হঠাৎ করে হৃদযন্ত্র তার স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়াকেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়, ফলে তৎক্ষণাৎ সংজ্ঞা হারানো এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গ্রহণে সমস্যা হয়। এটি হয় হৃদপিণ্ড যখন তার স্বাভাবিক কাজকর্ম আচমকা বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে, সারা শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অনেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর হার্ট অ্যাটাককে এক মনে করেন; হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত প্রবাহ যখন বন্ধ হয়ে যায় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, কিন্তু, দু’টো ব্যাপার কখনই এক নয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না হলে, আক্রান্তের কার্ডিয়াক মৃত্যু বা হৃদপিন্ডঘটিত মৃত্যু হতে পারে।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ অধিকতর সুস্পষ্ট এবং বিপজ্জনক:

  • শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • নাড়ির স্পন্দন অনুভূত না হওয়া
  • হঠাৎ পড়ে যাওয়া
  • তৎক্ষণাৎ সংজ্ঞা হারানো
  • ঠাণ্ডা ও ফ্যাকাসে ত্বক


কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রধান কারণগুলি কি কি?
অ্যারিথমিয়া অথবা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক ছন্দ হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রূপান্তরিত করে। যেসব নোড বিদ্যুৎ তরঙ্গ হৃদয়ে পরিবহন করে সেগুলি অকার্যকর হয়ে গেলে অ্যারিথমিয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে, এরকম ঘটনা সল্পস্থায়ী ও ক্ষতিহীন হয়। কিন্তু, সমস্যাটা যখন বেশ স্পষ্টভাবে জানান দেয়, তখন তা বিপদজ্জনক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঘটনা ঘটায়।

অ্যারিথমিয়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরণ হলো ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন, এক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে হতে থাকে আর রক্ত পাম্প করার পরিবর্তে ভেন্ট্রিকেলগুলি কাঁপতে থাকে।

সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এবং সুস্থ হৃদয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় না, যদি না বাইরে থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে কোনও রকম ঝটকা লাগে, যেমন অভিঘাত, ওষুধের কারণে, মানষিক আঘাত বা আগে থেকে উপস্থিত হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধে করণীয়:
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে চাইলে আপনার ফিট এবং সুস্থ থাকা জরুরি। খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর, কম তৈলাক্ত, কোলেস্টেরল এবং শর্করা কম রয়েছে এমন খাবার রাখুন। অস্বাস্থ্যকর, ওজন হতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার শরীরকে ফিট রাখবে এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক অসুস্থতা এড়ানোর সুবিধা দেবে ।

আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন, বিশেষ করে যদি আপনি ধূমপায়ী এবং অ্যালকোহলিক হয়ে থাকেন। মদ্যপান এবং ধূমপান হার্টের স্বাস্থ্যের জটিলতা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে, আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং হার্টের স্বাস্থ্য বিষয় জানতে নিয়মিত চেকআপ ও স্ক্রিনিং করানো উচিত।

কারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে আপনার যা করণীয়:
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আকস্মিকভাবে হতে পারে। এর বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে, যা অন্যান্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। কাউকে হঠাৎ অচেতন হয়ে যেতে দেখলে এবং তার নাড়ি ও শ্বাসের স্পন্দন পাওয়া না গেলে, আপনাকে দ্রুত যা করতে হবে তা হলো-

  • জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে।
  • জরুরি চিকিৎসার আগপর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করতে হবে।


জীবন বাঁচাতে সিপিআর যেভাবে করবেন:
অচেতন হওয়া ব্যক্তির বুকের মাঝখানে আপনার দুই হাত একসঙ্গে করে ৩০ বার চাপ দিতে হবে। জোরে জোরে এবং দ্রুতভাবে চাপ দিয়ে যেতে হবে। রোগীর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সিপিআর করা চালিয়ে যেতে হবে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে