সিলিয়াক রোগ কি?
অনেক সময় ছোটদের বদহজম, খাবার খেলেই ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে সিলিয়াক ডিজিজের কথা মনে রাখতে হবে। এটি একটি বিরল জন্মগত সমস্যা, যাতে রোগীর পরিপাকতন্ত্র গ্লুটেনের প্রতি অতিসংবেদনশীল থাকে। এ কারণে গ্লুটেন আছে, এমন খাবার খেলেই শুরু হয় সমস্যা। গ্লুটেন হলো একধরনের প্রোটিন, যা গম, বার্লি, যব, রাই ইত্যাদি শস্যদানায় থাকে। ফলে পেট ফাঁপা, পেটব্যথা, বমি ভাব বা বমি, ডায়রিয়া, দুর্গন্ধযুক্ত মল ইত্যাদি হতে পারে। খাবার ভালো করে হজম না হওয়ার কারণে কিছু ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দেয় ক্রমান্বয়ে। এ কারণে রক্তশূন্যতা, ওজন হ্রাস, বাড়ন্ত শিশুর সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া, দাঁত ও হাড়ে সমস্যা, কৈশোর প্রাপ্তিতে দেরি ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দেয়। সিলিয়াক ডিজিজ অনেক সময় বড়দেরও দেখা দিতে পারে। তবে বড়দের হজমের সমস্যার চেয়ে ভিটামিন–স্বল্পতার জন্য জটিলতাই বেশি দেখা যায়। ফলে রক্তশূন্যতা, হাড় ক্ষয়, জয়েন্ট ব্যথা, স্নায়ুর সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি হয়।

সিলিয়াক রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গুলি কি কি?
এই রোগের কারণে অন্ত্রে যে সমস্যা তৈরি হয় তা সাধারণভাবেই প্রত্যক্ষ করা যায়, তবে, শিশু ও প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের দেহে লক্ষণগুলি কিছুটা আলাদা রকম হতে পারে। সিলিয়াক রোগের কিছু লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ডায়রিয়া বা পেট খারাপ
  • পেট ফাঁপা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বমি
  • ফ্যাকাশে, পাতলা, ভাসমান ধরণের মল ত্যাগ
  • বদহজম
  • অম্বল
  • অম্বলের কারণে গলা জ্বালা।


পাচনতন্ত্রের উপসর্গগুলি ছাড়া আর যে যে উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়:

  • রক্তাল্পতা অর্থাৎ অ্যানিমিয়া এবং ওজন হ্রাস
  • হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া
  • ত্বকের চুলকানি ও তার সঙ্গে ব়্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা
  • দাঁতের সাদা রঙ অথবা এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়া
  • মাথাযন্ত্রণা
  • মুখের ঘা
  • দুধজাতীয় খাবারেও অ্যালার্জি দেখা দেয়।


সিলিয়াক রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
এই রোগ জিনগত কারণে হয়। পরিবেশগত কারণ, রোগ প্রতিরোধকজনিত কিছু কারণ এবং খাদ্যে গ্লুটেন উপস্থিত থাকলে যা রোগপ্রতিরোধকমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া, টাইপ১ ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ, আলসারের কারণে মলাশয়ে প্রদাহ, থাইরয়েড রোগ, মৃগী এবং ক্রোমোজম ঘটিত অসুখ ডাউন্স সিন্ড্রোমের মতো রোগের ফলস্রুতিতে সিলিয়াক রোগ দেখা দিতে পারে।

সিলিয়াক কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
সিলিয়াক রোগের লক্ষণ প্রায়ই বদলাতে থাকে; আর সেই কারণে মাত্র ২০ শতাংশ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরে। সিলিয়াক রোগ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য পরিবারের চিকিৎসাগত ইতিহাস, রোগীর চিকিৎসাগত ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করা হয়, সেই সঙ্গে রোগীর খাদ্য তালিকা দেখা হয়। এছাড়াও, রক্ত পরীক্ষা এবং বায়োপসি করেও দেখা হতে পারে। দুরকমের রক্ত পরীক্ষা করা হয়ঃ প্রথমটি হলো সেরোলজিকাল টেস্ট যার ফলে জানা যায় গ্লুটেনকে বিনষ্ট করার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি আছে কি না। আর দ্বিতীয় হলো হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (এইচএলএ)-এর জন্য জেনেটিক টেস্ট। ক্ষুদান্ত্রে যেসব ছোটো ছোটো শোষক নল থাকে তার পরিকাঠামোগত কোনও ক্ষতি হয়েছে কিনা তা জানার জন্য অন্ত্রের বায়োপসি করা হয়। তবে, এইসব পরীক্ষায় সঠিক এবং ঠিকমতো ফলাফল যাতে আসে তার জন্য এই সময় গ্লুটেন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে বলা হয়। এই ধরণের অসুখে পরবর্তীকালে শারীরিক পরীক্ষা বছরে একবার এবং তা আজীবন চালিয়ে যেতে হয়।

এই রোগ থেকে একেবারে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো গ্লুটেন নেই এমন খাবার খেতে হবে, এমনকি গ্লুটেনের উপস্থিতি আছে এমন কোনও ওষুধ, সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ করা যাবে না। একজন ভালো পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যতালিকায় গ্লুটেনমুক্ত খাবার যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই এটাও দেখতে হবে শরীরে যেন প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি না হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া অন্ত্র সেরে উঠতে শুরু করে, ক্ষুদ্রান্তে অবস্থিত শোষক নলও আবার তৈরি হয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যে। অন্ত্র পুনরায় আগের মতো হয়ে এলে প্রদাহ দূর হয় এবং উপসর্গগুলিও আর দেখা দেয় না। খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় শতর্ক থাকতে হবে। প্যাকেটের গায়ে দেখে নিতে হয় গ্লুটেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ব্যাপারটি। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তবেই তা কিনতে হয়।

গ্লুটেনবিহীন কিছু খাদ্য, শস্য:
ভুট্টা, নটেশাক, পেশাই করা ভুট্টা বা কর্নমিল, চাল, বাজরা, সাবু দানা ও অ্যারারুট, তাজা মাংস, মাছ, পোল্ট্রি জাতীয় খাবার, বেশিরভাগ দুগ্ধজাতীয় খাদ্য ও শাকসব্জি।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে