সেলুলাইটিস কি?
সেলুলাইটিস এমন একটি ত্বকের অবস্থা বা রোগ যেটি প্রাথমিকভাবে শরীরের নীচের অংশে প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, এটি মুখ বা হাতগুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এতে ত্বককে লাল দেখায় এবং ফুলিয়ে দেয় এবং স্পর্শে অত্যন্ত সংবেদনশীলতা অনুভূত হয়। সেলুলাইটিস সংক্রামক নয় এবং সহজেই এটিকে আয়ত্তে আনা যেতে পারে। কিন্তু, চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর হতে পারে, কারণ সংক্রমণটি লিম্ফ নোডের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহের মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

সেলুলাইটিসের প্রকার:

  • স্তন সেলুলাইটিস – এটি একটি জটিলতা যা স্তন ক্যান্সারের রেডিয়েশন থেরাপির পরে বিকাশ করতে পারে।
  • পেরিঅরবিটাল সেলুলাইটিস – এই ধরনের সেলুলাইটিস চোখের চারপাশে বিকাশ করে। ফেসিয়াল সেলুলাইটিস – ফেসিয়াল সেলুলাইটিস নাক, গাল এবং চোখের চারপাশে বিকাশ করে।
  • পেরিয়েনাল সেলুলাইটিস – এটি মলদ্বারে সংক্রমিত হয়।


সেলুলাইটিসের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি সাধারণত শরীরের একপাশে লক্ষ্য করা যায় এবং নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  • ত্বকে লালচে ভাব
  • ব্যথা এবং নরম ভাব অনুভত হওয়া
  • ফোলাভাব এবং ত্বকে টোল পড়া বা ধরলে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া
  • ফোস্কা পড়া
  • আক্রান্ত জায়গাটিতে উষ্ণ গরমভাব
  • হাল্কা জ্বরের সম্ভাবনা
  • বমি বমি ভাব
  • ঠান্ডা ঘাম
  • অবসাদ
  • মাথা ঘোরা
  • পেশী ব্যথা
  • পুঁজযুক্ত ত্বকের ঘা।


সেলুলাইটিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
সাধারণত যে ব্যাক্টেরিয়া এই রোগটি ঘটায় সেটি হল স্ট্যাফাইলোকোকাস বা স্ট্রেপ্টোকোকাস। এগুলি ত্বকে সংক্রমণ, অস্ত্রোপচারের ক্ষত, আলসার, আঘাত এবং পশু কামড়ের কারণে হওয়া কাটা, আঁচড় বা সার্জিকাল ক্ষতের মাধ্যমে চামড়ার মধ্যে প্রবেশ করে। এদের সবচেয়ে বেশি পায়ে খুঁজে পাওয়া যায়।

সেলুলাইটিস কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা মোটামুটি সরল এবং সহজবোধ্য। রক্ত পরীক্ষা, যেমন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট এবং ইরিথ্রোসাইটের সেডিমেন্টের হার রোগ নির্ণয় বা সংক্রমণের এজেন্টকে নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।

এর চিকিৎসা সাধারণত মুখের মাধ্যমে খাওয়া (ওরাল) অ্যান্টিবায়োটিকের আকারে হয়ে থাকে। সহায়ক যত্ন দেওয়ার জন্য লোকাল বা স্থানীয় ক্রিম (আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহারযোগ্য) দেওয়া যেতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষণগুলির কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেলে, চিকিৎসক হয়ত ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য ওষুধগুলি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। রিল্যাপ্স বা পুনরাবর্তন যাতে না ঘটে সেক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত জরুরী যে সম্পূর্ণরূপে ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে এবং নিশ্চিত হতে হবে যে শরীর থেকে ব্যাক্টেরিয়া পুরোপুরি পরিস্কার হয়ে গেছে।

জ্বর বেশি হলে, উপসর্গগুলি শরীরের একটি বড় অংশে ছড়িয়ে পড়লে, অথবা রোগী মৌখিক ওষুধগুলিতে পর্যাপ্তভাবে সাড়া না দিলে, চিকিৎসক হয়ত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ইন্ট্রাভেনাসের রূপে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

সেলুলাইটিস প্রতিরোধের উপায়:

  • সংক্রমণ রোধ করতে পোকামাকড়ের কামড়, আঁচড় থেকে এড়িয়ে চলুন।
  • ত্বকে ফাটল রোধ করতে ত্বক ময়শ্চারাইজড রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং অ্যালকোহল গ্রহণ সীমাবদ্ধ করুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে