ডায়াবেটিক ফুট আলসার কি?
সহজ ভাষায়, ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের যে ক্ষত তৈরি হয়, তাকেই ডায়াবেটিক ফুট আলসার বলে। মেডিকেলের ভাষায়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের রক্ত সরবরাহ ও অনুভূতি শক্তি কমে যায়। এতে পায়ে আঘাত লেগে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। একেই ডায়াবেটিক ফুট বলা হয়।
ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ডায়াবেটিসের কারণে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, যেখানে পায়ের অবশ ভাবটা থাকবে, অনুভূতি শক্তিটা কমে যাবে। এরপর আস্তে আস্তে আঘাতের কারণে ডায়াবেটিক ফুট আলসার তৈরি হবে। মানে ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষত তৈরি হবে।
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের কাছে ডায়াবেটিক ফুট আলসার কঠিন অসুখ। অসচেতনতার কারণে ৮৫ ভাগ রোগী ডায়াবেটিক ফুটে আক্রান্ত হন। অনেকের পা কেটে ফেলতে হয়। তাই এ রোগের জন্য সচেতনতা জরুরি। এটি নিয়ে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
ডায়াবেটিক ফুট আলসারের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ডায়াবেটিক ফুট আলসার সবসময় বেদনাদায়ক নাও হতে পারে। যদি তার সাথে জড়িত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সেই ব্যক্তি ব্যথা অনুভব করবে। যেহেতু এটি একটি গুরুতর পরিস্থিতি, তাই এটার অবিলম্বে চিকিৎসা করা উচিত। ডায়াবেটিক আলসারটি, পুরু চামড়ার একটি সীমানার সঙ্গে একটি লাল গর্তের মত দেখায়। গুরুতর ক্ষেত্রে, এই লাল গর্তে অন্তর্নিহিত টেন্ডনস এবং হাড় খুব গভীর হয়। জ্বালার কারণে ফোলা, তাপ, এবং ব্যথা হতে পারে। শেষ পর্যায়ে, নির্গমন, পা থেকে দুর্গন্ধ, এবং বিকৃত গ্রানুলেশন টিস্যু দেখা যায়। ত্বকের বিবর্ণতা, পায়ে অসাড়তা, যন্ত্রণা, পায়ে ফোসকা বা অন্যান্য ক্ষত, ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের এসব লক্ষণ কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ডায়াবেটিক ফুট আলসারের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ডায়াবেটিক ফুট আলসার সবচেয়ে বেশি ইন্সুলিন ব্যবহারকারী রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। বেশি ওজন হওয়া, তামাক ব্যবহার এবং অ্যালকোহল খাওয়া হল ঝুঁকির কারণগুলি যা ডায়াবেটিক আলসারকে বাড়িয়ে তোলে। কখনও কখনও, আপনি সেই এলাকার সংবেদন অনুপস্থিতির কারণে আলসার লক্ষ্য করতে পারবেন না। কম রক্ত সঞ্চালন ক্ষত মেরামত হওয়ায় বাঁধা দিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে।
এটি একটি ছোট আলসার হিসাবে শুরু হয়, যা সাধারণত সংবেদনের অনুপস্থিতির কারণে অলক্ষিত হয়, এবং গভীর ডায়াবেটিক আলসার গঠন করে। যদি দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করা হয় তবে আলসারের সংক্রমণ স্থায়ী হতে পারে এবং ফলস্বরূপ পূঁজ (ফোঁড়া) গঠন হয়। এই ফোঁড়া অস্টিওমাইলাইটিস নামক হাড়ের সংক্রমণ করাতে পারে। চিকিৎসায় আরও দেরি হলে প্রভাবিত এলাকায় গ্যাংরিন হতে পারে, যার অর্থ পা পাতা কাটতে হতে পারে।
ডায়াবেটিক ফুট আলসার হলে করণীয় কি?
ডায়াবেটিক ফুট আলসার ধরা পড়ার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করলে তা সেরে ওঠে। তবে দীর্ঘদিন এর চিকিৎসা করা না হলে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। যা পা কেটে ফেলার ঝুঁকি বাড়ায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এর চিকিৎসা করা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। চিকিৎসকরা সাধারণত মৃত কোষগুলো সরিয়ে ফেলে আক্রান্ত স্থানে সাময়িক ওষুধ প্রয়োগ করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিক ফুট আলসারে ভোগা প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন সংক্রমণে পা হারান। অস্ত্রোপচারে তাদের পায়ের প্রায় ৫০ শতাংশ কেটে ফেলা হয়। এমন রোগীরা অস্ত্রোপচারের ৫ বছরের মধ্যেই মারা যান।
ডায়াবেটিক ফুট আলসার কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সাধারণত, ডাক্তাররা ক্ষত পরীক্ষা করে ডায়াবেটিক ফুট আলসার নির্ণয় করে। ডাক্তার আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করবেন এবং পায়ের প্রেসার পয়েন্টে পরীক্ষা করতে আক্রান্ত ব্যক্তির চলাফেরার প্যাটার্ন, প্রতিক্রিয়া এবং পায়ের পাতায় উত্তেজনাও পরীক্ষা করবেন।
ডাক্তার নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলির পরামর্শ দিতে পারেন:
ফুট আলসারটির নিরাময়ের করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হলো রক্তে শর্করার মাত্রার কঠোর নিয়ন্ত্রণ। ফুট আলসারের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বৃদ্ধি নিরাময় করা, যাতে ক্ষত সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানো যায়। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে, এই আলসারগুলির উপর চাপ কমানো হয় এবং মৃত টিস্যু অপসারণ করা হয়। আলসারের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ক্ষতটিকে ঢেকে রাখা উচিত। বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। ডিপিওসিএল (ডিপেরক্সোক্লোরিক অ্যাসিড) এর মতো নতুন রাসায়নিকের প্রাপ্যতা ডায়াবেটিক ফুট আলসারকে সারিয়ে তুলতে পারে। সার্বিক সচেতনতা ও নতুন চিকিৎসার মাধ্যমে, ডায়াবেটিক ফুট আলসার সারিয়ে তোলা যেতে পারে। এছাড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এন্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ দেওয়া হয়।
ডায়াবেটিক ফুট আলসার প্রতিরোধে করণীয় কি?
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্নঃ
ডায়াবেটিস রোগীর অবশ্যই পায়ের যত্ন করা জরুরি। সঠিকভাবে পা ধোয়া ও পায়ের আঙুলের ভাজে ভাজে শুকনো রাখা জরুরি। আপনি যদি পায়ে কোনো ধরনের ক্ষত লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডা. সুরির মতে, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের অবশ্যই প্রতি বছরে অন্তত একবার হলেও পায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
যদি রোগী খেয়াল না করে, তখন রোগীদের জন্য খুব ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি পায়ের নিচের ক্ষতিকর অংশটাও কেটে ফেলতে হয়। অনেক সময় পায়ের ওপরের অংশটুকুও কেটে ফেলতে হয়। এ জন্য ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিদিন আয়নার সামনে নিজের মুখটা যখন দেখবে, পা-কেও যেন সে নিয়মিত চেক করে।