ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিস কি?
গ্যাস্ট্রোপেরেসিস মানে হলো পাকস্থলীর প্যারালাইসিস বা স্থবির হওয়ার মতো একটি অবস্থা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে গ্যাস্ট্রোপেরেসিস হলে পাকস্থলীর খাবার হজমের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। কারণ, পাকস্থলী তার মধ্যকার খাবার সময়মতো পরিপাকতন্ত্রের পরবর্তী অংশ ডিউডেনামে ঠেলে দিতে পারে না। যখন এটি ডায়াবেটিসের জটিলতা হিসাবে ঘটে তখন এটিকে ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিস বলা হয়। মানুষ টাইপ ১ এবং টাইপ ২ উভয় ডায়াবেটিসে প্রভাবিত হতে পারে। সাধারণত, যখন আপনি খাবার খান তখন এটি পাকস্থলীতে সবেগে ঘুরতে থাকে এবং তারপর ক্ষুদ্রান্তে ঢোকে। যখন আপনি গ্যাস্ট্রোপেরেসিসে ভোগেন, আপনার পাকস্থলীর পেশীগুলি ঠিকভাবে কাজ করে না এবং এর বস্তুগুলি খালি করতে খুব বেশি সময় নেয়।

ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:

  • সামান্য কিছু খেলেই পেট ভরা লাগে, সহজে আর খেতে ইচ্ছা করে না।
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • পেট ফোলা
  • ঢেকুর তোলা
  • বুক জ্বালা
  • উপরের পেটে ব্যথা।
  • কিছু ওষুধ যা পাকস্থলীর গতিশীলতা হ্রাস করে গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের উপসর্গগুলিকে আরও খারাপ করে।


ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের প্রধান কারণগুলি কি কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের অন্তর্নিহিত কারণ জানা যায় না। তবে, ডায়াবেটিস হল গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের সবচেয়ে বড় কারণ। ডায়াবেটিস ভেগাস স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে যা পাকস্থলীর পেশীকে সংস্থান করে। যখন ভেগাস স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কাজ না করে তখন সাধারণত পাকস্থলীর পেশী এবং ক্ষুদ্রান্ত কাজ করে না। দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিসের কারণে অটোনমিক নিউরোপ্যাথি হয়ে ভেগাস নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কোনো অপারেশনের সময়ও ভেগাস নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। কিছু রোগের কারণেও গ্যাস্ট্রোপেরেসিস হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ এর জন্য দায়ী হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিসকে কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
আক্রান্ত ব্যক্তি কোন ধরনের ওষুধ খান, অস্ত্রোপচারের কোনো ইতিহাস অথবা অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বিস্তারিত চিকিৎসা ইতিহাস ডাক্তার জানতে চাইবেন। রক্তচাপ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা, অস্বাভাবিক পেটের শব্দ শোনা এবং ডিহাইড্রেশনের কোন লক্ষণ খোঁজার জন্য সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করা হতে পারে।

যে পরীক্ষাগুলো করা হয় তা হল:

  • ৪ ঘন্টার গ্যাস্ট্রিক এম্পটিইং স্কিন্টিগ্রাফি।
  • আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং এমআরআই পাকস্থলীর খালি হয়ে যাওয়ার উপর তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করতে পারে।
  • সিঙ্গেল ফোটন এমিশন কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (এসপিইসিটি) গ্যাস্ট্রোপেরিসিসের নির্ণয়ের জন্য ইমেজিংও ব্যবহার করা যেতে পারে।


চিকিৎসা কী?
একবারে বেশি খাওয়া যাবে না। সারা দিনে ভাগ করে কম কম করে খেতে হবে। খাবার সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে।
অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করুন। পানি বেশি করে পান করতে হবে।
কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়, কখনো কখনো শল্যচিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়াবেটিক গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের জটিলতাঃ
গ্যাস্ট্রোপেরেসিসের কারণে পানিশূন্যতা, অপুষ্টি, অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়াল ওভার গ্রোথ ইত্যাদি হতে পারে। তা ছাড়া কিছু নির্দিষ্ট খাবার দীর্ঘদিন জমতে জমতে শক্ত চাকা হয়ে যেতে পারে, যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় বিজোয়ার বলা হয়ে থাকে। এটি বের করতে অনেক সময় সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে