শিশুর ডায়াপার র্যাশ কি?
ডায়াপার ব়্য়াশ, সমস্যাটি ডায়াপার ডার্মাটাইটিস নামেও পরিচিত, এক্ষেত্রে শিশুর নিম্নাংশের ত্বকে লাল দগদগে অবস্থা তৈরি হয়। ডায়াপারের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি, টয়লেট ট্রেনিং এবং শিশুর যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি অনুসারে সারা বিশ্বে সমস্যাটি বিভিন্ন ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেক শিশুর শিশুকালে কোনো না কোনো সময় ডায়াপার পরিধান জনিত র্যাশ সমস্যা হতে পারে। যে স্থানে ডায়াপার র্যাশ ওঠে সেখানকার ত্বক লাল হয়ে যায়, ফুসকুড়ি ওঠে ও চুলকানি বা যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। শিশুর ডায়াপার র্যাশ মারাত্মক কিছু নয়। এ র্যাশ প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, বাচ্চার ডায়াপার ঘনঘন বদলে ফেলা, এমনকি এইমাত্র প্রস্রাব করলেও।
শিশুর ডায়াপার র্যাশ এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
এর প্রধান উপসর্গগুলি হলো:
- ত্বক লাল হয়ে উঠতে পারে;
- উরু, পশ্চাদভাগ অথবা জননাঙ্গে সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে।
- শিশু কাঁদে এবং অস্বস্তিবোধ করে;
- শরীরের নিম্নাংশে যে জায়গা ডায়াপারে ঢাকা থাকে, তা ধোয়ার সময় তারা অস্থির হয়ে ওঠে।
শিশুর ডায়াপার র্যাশ এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
শিশুর কোমল সংবেদনশীল ত্বক যখন বেশ কিছু সময় ধরে অথবা বারবার প্রস্রাব ও পায়খানার সংস্পর্শে আসে, তখন আর্দ্রতার কারণে ত্বকের তৈলাক্ত প্রাকৃতিক স্তরের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এতে ত্বকে লালাভ চাকার মতো হয়ে ফুলে ওঠে, অর্থাৎ ত্বকে ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়।
সৌভাগ্যক্রমে ডায়াপার র্যাশ বা নিচের পোশাকজনিত ত্বকের ফুসকুড়ি থেকে তেমন জটিলতার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু তারপরও শিশুর স্বস্তির কথা ভেবে শিশুর প্রতি একটু বাড়তি দৃষ্টি নিতে হয়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
ডায়াপার র্যাশের কারণে ত্বকে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা দেখা দিলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে :
- ডায়াপার র্যাশ পেকে যেতে থাকলে কিংবা পুঁজ হলে
- ডায়াপার র্যাশ হয়ে ত্বক ছুলে গেলে
- ত্বক প্রচণ্ডভাবে লালাভ হয়ে ফুলে উঠলে
- ডায়াপার র্যাশ থেকে কষ ঝরলে
- ডায়াপার র্যাশের সঙ্গে অন্য কোনো চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটেছে মনে করলে
- র্যাশগুলো প্রচণ্ড চুলকালে। কারণ, চুলকানোর কারণে ত্বকে ঘা হয়ে যেতে পারে।
ডায়াপার র্যাশ কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
শরীরে লাল ছোপের উপস্থিতি এবং শিশুর সামগ্রিক আচরণ দেখে এটি নির্ণয় করা যেতে পারে। এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন নেই এবং বাড়িতেই চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।
এর চিকিৎসা হলো:
- হালকা স্টেরয়েডাল ক্রিমের ব্যবহার।
- অ্যান্টিফাংগাল ক্রিম।
- টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক।
নিজ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ:
- ডায়াপার ঢাকা অংশটি পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখুন এবং যত্নসহকারে পরিষ্কার করুন।
- কাপড়ের ডায়াপার ধোয়ার জন্য ব্লিচ ব্যবহার করুন অথবা অন্তত ১৫ মিনিট ধরে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন।
- ডায়াপার থেকে কাপড় কাচার সাবান সম্পূর্ণ বের করে ফেলতে, তাকে ভালো পানি দিয়ে ধুতে হবে।
- শিশুকে মাঝে মাঝে ডায়াপার ছাড়া রাখুন, যাতে ওর নিম্নাঙ্গের ত্বক হাওয়া-বাতাস পায়।
- র্যাশে আরামদায়ী লোশন/ক্রিম ব্যবহার করুন।
- স্যালিসাইলেট, বেনজয়িক অ্যাসিড, ক্যামফর, বরিক অ্যাসিড, ফেনল প্রভৃতি উপাদানযুক্ত দ্রব্য ব্যবহার করবেন না।
- আপনার শিশুকে প্রতিদিন গরম পানি ও গন্ধহীন সাবান দিয়ে স্নান করান।
ডায়াপার র্যাশ একটি নিরাময়যোগ্য সমস্যা, যা যথাযথ যত্ন নিলে দ্রুত সেরে যায়। যাইহোক, জটিলতা এড়ানোর জন্য যথাযথ পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলনের সাহায্যে একে প্রতিরোধ করাই ভালো।