কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়া রোগ কী?
কান দিয়ে পুজ ও পানি পড়া বা স্রাব হলো একটি উপসর্গ। যেমন কানে সংক্রমণ, কানে জ্বালা করা, কানের বাইরে বা মাঝখানে আঘাত এবং খুব কম ক্ষেত্রে কানে ক্যান্সার। এটি ওটোরিয়া নামেও পরিচিত।

এই স্রাব পড়া খুবই অপ্রীতিকর এবং যে কোনো বয়সে দেখা দিতে পারে। তবে আমাদের দেশে প্রধানত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই স্রাব পুজ, পানি, শ্লেষ্মা, কানের ময়লা বা রক্তের আকারে হতে পারে। কান থেকে পানি পড়ার খুব সাধারণ কারণ হলো– কানের বাইরে বা মাঝখানের সংক্রমণ ও জ্বলনশীলতা।

কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়ার সাথে যুক্ত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?

কান থেকে পানি পড়ার খুব সাধারণ কারণ হল কানের বাইরে বা মাঝখানের সংক্রমণ এবং জ্বলনশীলতা। যদি কান থেকে স্রাব পড়ে তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকতে পারে :

  • কানের মধ্যে ব্যথা
  • কান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত বা দুর্গন্ধহীন তরল বের হওয়া
  • ভারসাম্য হারানো
  • অস্বস্তি
  • ঘুমের ক্ষতি
  • কানের টান
  • জ্বর
  • কম শোনা
  • মাথা ঘুরানো।


কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
কানের থেকে পানি পড়া হল একটি সাধারণ উপসর্গ এবং এটি খুব সাধারণত ৫ বছরের নীচের শিশুদের ইউস্টেশিয়ান নলের কম বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে দেখা যায়। এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে। যদি একজন ব্যক্তির কান থেকে তরল বের হওয়ার অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা থাকে তবে এর কারণগুলি হতে পারে-

  • মধ্যকর্ণের সংক্রমণ (ওটাইটিস মিডিয়া)
  • বহিঃকর্ণের সংক্রমণ (ওটাইটিস এক্সটারনা)
  • কানে জ্বালা বা প্রদাহ
  • ঠান্ডা
  • টেম্পোরাল হাড়ে আঘাত
  • কানের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (বিরল ঘটনা)
  • কানে অস্ত্রপচারের পরের প্রভাব
  • সর্দির কারণে নাক ও মধ্যকর্ণের সংযোগনালির সংক্রমণ ও
  • অযথা কান খোচালে এই রোগ হতে পারে।


কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়লে কী করবেন?
কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়ার সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

কান দিয়ে পানি ও পুজ পড়া কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
কান থেকে তরলের বের হওয়ার পুরোপুরি নির্ণয় করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যদিও, কোন পরীক্ষার আগে তরলের মাইক্রো-সাকশান অবশ্যই করতে হবে। রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপে কান, নাক, কন্ঠনালীর (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ রোগীর ইতিহাস নেবেন, এবং আরও নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন হতে পারে:

  • কান পরীক্ষা
  • নিউমেটিক ওটোস্কপি
  • টিমপ্যানোমেট্রি
  • শ্রবণশক্তির পরীক্ষা
  • যদি ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি কারণ হয় তবে রক্ত পরীক্ষা
  • প্যাথোজেনকে খুঁজে বার করার জন্য স্রাব অথবা ইয়ার সোয়েবস কাল্চারের পরীক্ষা।


যথাযথ রোগ নির্ণয়ের পরে কানের পানি পড়ার চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একবার অ্যান্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে, ওষুধ চূড়ান্ত (নির্ধারণ) করা হতে পারে। নিম্নলিখিত উপায়ে চিকিৎসা করা হয়:

  • ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যানালজেসিক্স
  • সাময়িক স্টেরয়েড প্রয়োগ
  • অ্যান্টিবায়োটিক কানের ড্রপ
  • যদি স্রাব চটচটে হয় তবে মিউকোলিটিক ড্রপ প্রয়োগ
  • ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক
  • যদি ছত্রাকের কারণে সংক্রমণ হয় তবে কান পরিষ্কার করতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ফর্মুলেশনের ব্যবহার
  • জ্বর নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিপাইরেটিকস প্রয়োগ।


চিকিৎসার পাশাপাশি, কিছু নিজস্ব যত্ন ব্যবস্থা, যেমন ধোঁয়ার প্রভাব এড়ানো এবং ঠান্ডায় কানের সংক্রমণ থেকে সদ্যোজাত এবং শিশুদের রক্ষা করা, এগুলি কানের স্রাবের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

কান আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি যে শুধুমাত্র আমাদের শ্রবণ করতে সাহায্য করে তা নয়, মানবদেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কানে একটি। কানের ভূমিকা তাই আমাদের সারা দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই কান, নাক গলা ইত্যাদি এর সাথে সংযুক্ত। ফলে কানে কোন অসুবিধা দেখা দিলে তা নাকে কিংবা গলায় প্রভাব ফেলতে পারে। কান থেকে পানি পড়লে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন কারণ এটি বেদনাদায়ক অবস্থা হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রে স্রাবের কারণে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে