লিভার বড় হওয়া (বর্ধিত লিভার) কি?
শরীরের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় অঙ্গটির নাম লিভার বা যকৃত। এটা শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। বিভিন্ন কারনে লিভার বড় হতে পারে।

সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হার্ট ফেলিওর বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার মতো গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থায় লিভার বড় হয়ে গেলে তাকে তখন বর্ধিত লিভার বা হেপাটোমেগালি বলা হয়। সাধারণত, অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা হেপাটোমেগালি সারাতে সাহায্য করে।

লিভার বড় হওয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
অনেক সময় যকৃৎ বড় হয়ে গেলেও মানুষের শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এর ফলে ওই ব্যক্তি বুঝতে পারেন না তিনি যকৃতের সমস্যায় ভুগছেন। শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যা শনাক্ত হয়। তবে পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে বাড়তি চাপ লাগা, ব্যথা হওয়া কিংবা চাকা অনুভব করা—প্রাথমিক অবস্থায় এমন উপসর্গ থাকতে পারে। অনেক সময় যকৃৎ বড় হয়ে গিয়ে জন্ডিস হতে
পারে। এই কারণে চোখসহ পুরো শরীর হলুদাভ হওয়া, রক্ত বমি ও রক্ত পায়খানা হওয়া, চুলকানি দেখা দেওয়া, অবসাদ এবং দুর্বলতা, পেট ও পায়ে পানি আসার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।

লিভার বড় হওয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
শরীরের একাধিক কার্যকলাপে লিভারের যেহেতু কেন্দ্রীয় ভুমিকা রয়েছে, এইসব কার্যকলাপের পরিবর্তনের কারণে একাধিক রোগ হতে পারে, যার ফলে লিভার বৃদ্ধি পায়।

  • কিছু কিছু ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে যকৃৎ বড় হতে পারে। যেমন হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। এ ছাড়া শরীরে হারপিস সিম্পলেকস, ইবস্টেন বার ও সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও যকৃৎ বড় হয়।
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যেমন সালমোনেলা টাইফি, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস প্রভৃতির কারণে যকৃৎ বড় হতে পারে। এ ছাড়া কিছু কিছু ছত্রাকের সংক্রমণেও যকৃৎ বড় হয়ে থাকতে পারে।
  • শরীরের বিপাকপ্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলে অনেক সময় যকৃৎ বড় হয়ে যায়। যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসায় বিলম্ব হলে ক্যানসার হতে পারে। তখন যকৃৎ বড় হয়ে যায়।
  • শরীরের অন্যান্য জায়গার টিউমার কিংবা ক্যানসার যকৃতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন যকৃৎ বড় হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় যকৃতেও সিস্ট, টিউমার কিংবা ক্যানসার হতে পারে। ওই সময় যকৃৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়।
  • ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির কিছু রোগের কারণেও অতিরিক্ত রক্ত জমে যকৃৎ বড় হয়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপানের অভ্যাস যকৃৎ বড় হওয়ার অন্যতম কারণ।


লিভার বড় হওয়ায় করণীয় কী?
শুরুতেই যকৃৎ বড় হওয়ার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে হবে। এরপর শুরু করতে হবে চিকিৎসা। এ জন্য পরিপাকতন্ত্র ও যকৃৎ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

লিভার বড় হওয়া কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
নিম্নলিখিত নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার দ্বারা এই রোগের অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা

  • সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি)
  • লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা
  • রক্তরসে প্রোটিনের মাত্রা
  • হেপাটাইটিস এ,বি,সি,ডি এবং ই অ্যান্টিজেন/অ্যান্টিবডির মাত্রা পরীক্ষা


ইমেজিং স্টাডিজ

  • পেটের সোনোগ্রাফি
  • কম্পিউটার দ্বারা পেটের টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান
  • ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান


লিভার বায়োপসি- এটি লিভার কোষগুলির অভ্যন্তরীণ কোষীয় গঠন জানতে (হেপাটোসাইট) এবং রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে

লিভার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণের উপর হেপাটোমেগালির চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। যদি রোগের কারণ সংক্রমণ হয়, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে; হৃদযন্ত্রের রোগের ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ অবস্থার চিকিৎসার প্রয়োজন; কখনও কখনও এটি সম্পূর্ণরূপে নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায় বা কখনও সহায়ক এনজাইম বা উৎসেচকের প্রয়োজন হয়। যদি ক্যান্সারের কারণে লিভার বৃদ্ধি পায় তখন সার্জারি বা কেমো-রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হয়।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে