চোখের সংক্রমণ (চোখের ইনফেকশন) কি?
চোখের সংক্রমণ খুব সাধারণ (কমন) এবং চোখের প্রধান একটি অস্বস্তির কারণ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক প্রভৃতি চোখের সংক্রমণ তৈরী করতে সক্ষম, যার ফলে লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া, চুলকানি, স্রাব এবং চোখের মধ্যে ব্যথা হয়। চোখের একটি বেশ কমন সমস্যা হলো কনজাঙ্কটিভাইটিস (পিংক আই)। এ সমস্যাটি আমাদের দেশে চোখ ওঠা রোগ নামেও পরিচিত। যাদের ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে তারা এ রোগের সঙ্গে বেশ পরিচিত। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ বলে কারো সন্তানের চোখে এ সমস্যা দিলে তাকে স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

পিংক আইয়ের মতো কিছু ইনফেকশন নিজে নিজে সেরে ওঠলেও অন্যান্য ইনফেকশন স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে- জরুরি ভিত্তিতে এসব ইনফেকশনের চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়।

কাদের চোখের ইনফেকশন বেশি হয়?
দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা যেকোনো ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, যেমন- চোখের ইনফেকশন। আপনি তামাক ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে আপনার চোখে ইনফেকশন হওয়ার বর্ধিত ঝুঁকি রয়েছে, বলছে গবেষণা। যদি আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ইনফেকশন বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চোখ লাল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার। ঝুঁকি কমাতে কখনো কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমাবেন না এবং নিয়মিত কন্টাক্ট লেন্স ও কেস ধুয়ে নিন। যেসব লোকের চোখে ইনজুরি হয়েছে তারাও ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।

চোখের সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সাধারণ চোখের সংক্রমণের সাথে যুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:
কনজাংটিভাইটিস এবং ব্লেফারাইটিস:

  • ফোলা চোখ।
  • ব্যথা।
  • ফোলাভাব।
  • চোখ থেকে পানি পরা।


ব্যাকটেরিয়াল কেরাটিটিস:

  • ব্যথা।
  • লালচে ভাব।
  • স্রাব পরা।
  • আলোক সংবেদনশীলতা বা আলো সহ্য করতে না পারা।
  • চোখ থেকে পানি পরা।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং অস্পষ্ট দৃষ্টি।
  • কর্নিয়ার আলসার।


হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস কেরাটিটিস:

  • ব্যথা।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং অস্পষ্ট দৃষ্টি।
  • চোখ থেকে পানি পরা।
  • স্রাব পরা।
  • আলসার।
  • চুলকানি।
  • আলোক সংবেদনশীলতা বা আলো সহ্য করতে না পারা।


এন্ডোফথালমাইটিস:

  • ব্যথা।
  • দৃষ্টিশক্তির হ্রাস।
  • লালচে ভাব।


আঞ্জনি:

  • ব্যথা।
  • ডেলার উপস্থিতি যা পূঁযে ভর্তি হতে পারে।
  • লাল এবং পানিপূর্ণ চোখ।


চোখের সংক্রমণের প্রধান কারণগুলি কি কি?
চোখের সংক্রমণের কারণগুলি প্রত্যেক সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয় এবং এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

  • কনজাংটিভাইটিস: এটি প্রায়ই কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগের দ্বারা হয়।
  • ব্যাকটেরিয়াল কেরাটিটিস: এটি প্রায়ই কন্ট্যাক্ট লেন্স পরা বা আঘাতের ফলে হয়।
  • হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস কেরাটিটিস: এর কারণ হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস।
  • এন্ডোফথালমাইটিস: এটি একটি জ্বালা করা বা ফুলে যাওয়া যা মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়। এটা প্রায়ই চোখের সার্জারি, আঘাত এবং ইন্ট্রাভিট্রিয়াল (চোখের ভিতরে) ইনজেকশনের পরে হয়।


চোখের সংক্রমণ কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চোখের সংক্রমণ নির্ণয় করা হয় মেডিকেল বিবরণ এবং সতর্কভাবে শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে।

একজন অপথালমোলজিস্ট (চোখের ডাক্তার) স্লিট-ল্যাম্প মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে আপনার চোখের পরীক্ষা করতে পারেন।

চিকিৎসা সংক্রমণের ধরন, উপসর্গ এবং প্রবলতার উপর নির্ভর করে। যেমন:

  • ডাক্তার ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ড্রপ বা জেল নির্ধারণ করতে পারেন। ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসের জন্য ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্টের প্রয়োজন হবে।
  • ব্যাকটেরিয়াল কেরাটিটিসের জন্য ক্লোরামফেনিকোল হল সর্বাধিক নির্দেশিত ওষুধ।
  • হার্পিস সিমপ্লেক্স কেরাটিটিসে ওরাল (মৌখিক) অ্যান্টিভাইরাস এজেন্ট এবং সাময়িক স্টেরয়েডগুলি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
  • এন্ডোফথালমাইটিসে ওরাল (মৌখিক) অ্যান্টিবায়োটিকগুলির সাথে ভ্যাট্রিয়াল ইনজেকশন বা ইন্ট্রাভেনাস (শিরার ভিতরে) ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • প্যারাসিটামল বা অন্যান্য অ্যানালজেসিক্সের (ব্যথা উপশমকারী) সাথে অঞ্জনির চিকিৎসার ঔপসর্গিক উপশম জড়িত। কয়েক মিনিটের জন্য চোখের উপর একটি উষ্ণ কাপড় ধরে রাখলে তা ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
  • চোখের ডাক্তার সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কন্ট্যাক্ট লেন্স এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেবেন।


চোখের সংক্রমণ কমাতে ঘরোয়াভাবে বিশেষ যত্নঃ

  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন।
  • খুব ঘন ঘন চোখ সম্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। চোখের জন্য উপকারী শাকসবজি, ফল খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ তরল খাবার গ্রহণ করুন।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করুন।
  • বাইরে বের হবার সময় ধুলা, ময়লা এবং ক্ষতিকারক সূর্যের রশ্মি থেকে চোখ সুরক্ষিত রাখতে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
  • চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভালো ঘুম ও বিশ্রাম প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সচেষ্ট হোন।
  • কনজাংটিভাইটিসের মতো সাধারণ সমস্যা দেখা দিলে দিনে বেশ কয়েক বার হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে চোখ ধুতে পারেন। চোখে পানি দিয়ে ঝাপটা দিন। খুব জোরে দেবেন না। এ সময় বারবার চোখ ডলবেন না। প্রয়োজন মতো গরম পানিতে তুলা ভিজিয়ে সেটা দিয়ে বার বার চোখ মুছতে পারেন।
  • চোখের যেকোন ধরনের সমস্যায় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ ব্যবহার করবেন।
  • চোখের সমস্যা হলে টিভি দেখা বা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি কমান । কয়েকদিন চোখকে বিশ্রাম দিন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে