চোখে ব্যথা কি?
চোখে ব্যথা, যা অপথ্যালম্যালজিয়া নামেও পরিচিত, হল চোখে অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়া। চোখে ব্যথা বা অস্বস্তিভাব চক্ষুগত (চোখের উপরিভাগে) হতে পারে বা অক্ষিকোটরগত (চোখের মণির ভিতরে) হতে পারে। কোনওরকম আঘাত অথবা অ্যালার্জির কারণে বা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, কিংবা আরো কোন গুরুতর সমস্যা থাকলে চোখের যন্ত্রণা তীব্র আকার নিতে পারে। দৃষ্টিশক্তি হারানোর যেহেতু সম্ভাবনা থেকেই যায়, তাই চোখে কোনওরকম ব্যথা হলে একজন ভালো চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে তাঁর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শুধু যে চোখ ব্যথা হলেই চোখের অসুখ তা কিন্তু নয়, চোখ ব্যথা চোখের রোগ থেকেও হতে পারে আবার শারীরিক অন্য রোগ থেকেও হতে পারে। চোখ এবং এর আশপাশে বহু কারণে ব্যথা হতে পারে। চোখ বা চোখের আশপাশে কোনো ব্যথা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চোখ ব্যথাকে মাথা ব্যথা থেকে পার্থক্য করতে হবে।
চোখে ব্যথার সাথে সম্পর্কিত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
চোখে ব্যথা যেহেতু নিজেই একটা উপসর্গ আর এর সঙ্গে প্রায়ই আরও নানান লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:
- দেখতে অসুবিধা হওয়া।
- প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলে শিশুরা কান্নাকাটি পর্যন্ত করে।
- জ্বর।
- চোখ ফোলা।
- দৃষ্টিশক্তিতে স্বচ্ছতা কমে যাওয়া।
- বমি।
- কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া।
- চোখে পিচুটি হওয়া।
- চোখের ভেতরে কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করা।
- চোখে চুলকানি।
- মুখমণ্ডলে ব্যথা।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেনঃ
পুরুষদের মধ্যে এ লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগে যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, তাঁদের সংক্রমণ ও প্রদাহ বেশি হয়।
চোখে ব্যথার প্রধান কারণগুলি কি কি?
সাধারণত, কোনওরকম চোট-আঘাত এবং সংক্রমণের কারণে চোখে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া আর যেসব কারণে চোখে ব্যথা হতে পারে:
- অ্যালার্জি।
- অশ্রুরন্ধ কোনও ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে।
- মাথাব্যথা।
- চোখের আইরিশ বা কনীনিকায় প্রদাহ বা ব্যথা।
- চোখের সাদা অংশে প্রদাহ।
- আঞ্জনি।
- কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা।
- গ্লুকোমা – চোখে চাপ বাড়ে এতে।
- কর্নিয়াতে প্রদাহ বা ব্যথা।
চোখে ব্যথা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
প্রথমেই জেনে নিতে হবে ঠিক কী কারণে ব্যথা হচ্ছে। তাই উপরে যে সমস্ত উপসর্গগুলি উল্লেখ করা হলো তার মধ্যে যদি কোনও একটি সমস্যা উপলব্ধি করেন, তাহলে অবিলম্বে কোনও ভালো চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
কার্যকরভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য, ডাক্তার আপনার চোখ পরীক্ষা করে দেখবেন যে কেন ব্যথা হচ্ছে। চোখের প্রেশার, স্নায়ু ও রেটিনা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে স্লিট ল্যাম্প চক্ষু পরীক্ষার সাহায্য নিতে পারেন ডাক্তার, এতে চোখের মধ্যেকার অবস্থা ঠিক কি রকম, তা যন্ত্রের মাধ্যমে চোখের আকার বড় ভাবে দেখে বুঝতে পারেন ডাক্তার। রোগ নির্ণয়ে অহেতুক দেরি হলে চিকিৎসা জটিল হতে পারে। দৃষ্টি পর্যন্ত হারাতে হতে পারে।
চোখে সংক্রমণ বা চোখে ব্যথার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে, ডাক্তার চোখে ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং নানারকম ভাবে চোখের যত্নের পরামর্শ দিতে পারেন। তার মধ্যে কিছু হল-
- একানাগাড়ে হওয়া যন্ত্রণা কমাতে ব্যথা উপশমকারী ওষুধ দিতে পারেন।
- চোখের সিলিয়ারি পেশীর আড়ষ্ঠভাব কাটাতে চোখের ড্রপ দিতে পারেন। তাতে চোখের লালভাব ও ব্যথা কমে।
- চোখে সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল আই ড্রপ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।
- চোখের প্রদাহ বা ব্যথাকে আয়ত্তে আনতে স্টেরোয়েড আই ড্রপ ব্যবহার করার পরমর্শ দেন ডাক্তার।