গ্রোথ হরমোনের অভাব বা গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি (জিএইচডি/GHD) কি?
গ্রোথ হরমোনের অভাব হল একটি ব্যাধি যেখানে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত পিটুইটারি নামক হরমোন গ্রন্থি স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রোথ হরমোনের (জিএইচ/GH) ক্ষরণ করেনা। ছোটকাল থেকে এই হরমোনটির আধিক্য হলে কেউ মাত্রাতিরিক্ত লম্বা হয় আর হরমোনটির কমতি হলে শিশু খর্বকায় বা বেঁটে হয়ে থাকে। এছাড়াও জাতিগত বৈশিষ্ট্য, মা-বাবার উচ্চতা, পুষ্টিজনিত সমস্যা, বংশগত রোগ ইত্যাদি কারণে কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কম বা বেশি হতে পারে।

গ্রোথ হরমোনের অভাবজনিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
বাচ্চাদের মধ্যে জিএইচডি-র সাথে যুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:

  • বৃদ্ধির মাত্রা লক্ষণীয়ভাবে কমে যাওয়া।
  • লম্বা হাড়ের দীর্ঘ হওয়ায় বিলম্ব।
  • মাথার খুলির সন্ধি এবং ফন্টানেলসের বিলম্বিত অবসান।
  • পুরুষদের মধ্যে ছোট পেনিস বা যৌনাঙ্গ (মাইক্রোপেনিস)।
  • মুখের হাড়ের বিকাশের বিলম্বিত হার।
  • দাঁত উঠতে দেরি হওয়া।
  • নখের কম বৃদ্ধি হওয়া।
  • চুল পাতলা হওয়া।
  • নবজাতকের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কম)।
  • উচ্চ মাত্রায় গলার স্বর।


পরবর্তীতে জিএইচডি-র সঙ্গে যুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি:

  • চর্বির বৃদ্ধি (পেটে এবং অন্ত্রে)।
  • পেশীর ভর এবং কর্মশক্তির মাত্রা কমে যাওয়া।
  • উদ্বেগ এবং/অথবা বিষণ্নতা।
  • লিপিডের মাত্রা বৃদ্ধি (এলডিএল-কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর)।


গ্রোথ হরমোনের অভাবের প্রধান কারণগুলি কি কি?
জিএইচডি-র প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • জিনগত ত্রুটি বা মস্তিষ্কের কাঠামোগত ত্রুটিগুলির কারণে সহজাত জিএইচডি হয়।
  • লব্ধ জিএইচডি বিভিন্ন কারণের ফলে হতে পারে, যেমন:
  1. হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারির (জারমিনোমা, পিটুইটারি অ্যাডিনোমা, গ্লিওমা, ক্রানিওফ্যারেনজিওমা, রাথকেস ক্লেফট সিস্ট) টিউমার
  2. মস্তিষ্কে মানসিক আঘাত (পেরিনেটাল বা পোস্টনেটাল)
  3. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ
  4. ইনফিল্ট্রেটিভ রোগ (যক্ষ্মারোগ, লাঙ্গারহান কোষের হিস্টিওসাইটোসিস, সার্কইডোসিস)
  5. রেডিয়েশন থেরাপি
  6. ইডিওপ্যাথিক (অজানা কারণের)


গ্রোথ হরমোনের অভাব কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
প্রাথমিকভাবে, শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় এবং ব্যক্তির বয়স অনুযায়ী এর নির্ণয় প্রক্রিয়া গঠন করা হয়। জিএইচডির কারণে বৃদ্ধির কমতি ঘটছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক নিচে দেওয়া পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দেবেন:

  • আই-ডোপা, আর্জিনাইন, ইন্সুলিন এবং ক্লোনিডিনের মত এজেন্টগুলির ব্যবহার করে পিটুইটারির দ্বারা জিএইচ-এর ক্ষরণকে উদ্দীপ্ত করার জন্য পরীক্ষা, এর সঙ্গে নিয়মিত জিএইচের মাত্রা পরীক্ষা করা।
  • অন্যান্য রক্তপরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্রি টি৪ (T4), টিএসএইচ (TSH), করটিসল এবং সিলিয়াক অ্যান্টিবডিস।
  • জিএইচডি (GHD) স্ক্রিন করার জন্য এবং জিএইচ থেরাপি মনিটর করার জন্য ইন্সুলিনের মত গ্রোথ ফ্যাক্টর ১ (আইজিএফ-1) ব্যবহার করা হয়।


এটির নির্ণয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করা হয়, যেমন:
কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে খর্বাকৃতির শিশুদের চিকিৎসা বেশ কঠিন ছিল। কেননা তখন মৃতদেহের পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন নির্যাস সংগ্রহ করা হতো এবং এতে প্রায়ই প্রতিক্রিয়া ও নানা রোগের আশঙ্কা থাকত।

বর্তমানে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন সোমাটোট্রোপিন বা নরডিট্রোপিন দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে বামনত্ব বা উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সমস্যার চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত শিশু, যার গ্রোথ হরমোন অপর্যাপ্ত, টার্নার সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু, কম ওজন ও ছোট আকার নিয়ে ভূমিষ্ঠ শিশু এবং কিডনি জটিলতাসংক্রান্ত কারণে যাদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে—তাদের ক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোনথেরাপি ব্যাহত হয়।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট মাত্রার গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয় ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ছাড়া বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্য কারণ থাকলে সঠিক কারণটি নির্ণয় করে সে অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হয়। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও পরামর্শ নেওয়া এবং যত কম বয়সে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো ফল পাওয়া যায়।


Share with your friends