হাত কাঁপা কি?
কম্পন হল, কোনো বিশেষ পেশীসমূহের অনৈচ্ছিক নিয়মিত নড়াচড়া। হাত কাঁপা হল হাতের (কব্জি, আঙ্গুল, বুড়ো আঙ্গুল) পেশীসমূহের অনৈচ্ছিক নড়াচড়া, যাকে কম্পমান হাতও বলা হয়।

চাকরির সাক্ষাৎকার, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিংবা ‘নার্ভাস’ অবস্থায় কমবেশি সবারই হাত কাঁপে। মানুষ যখন কোনো ব্যাপারে প্রচণ্ড আতঙ্কিত কিংবা উৎসাহী থাকে তখন তার হাত কাঁপা স্বাভাবিক ঘটনা।

তবে কোনো কারণ ছাড়া প্রায়শই হাত কাঁপলে বিষয়টা শঙ্কার। চিকিৎসা-বিজ্ঞানে নানান কারণ উল্লেখ করা আছে। এর মধ্যে অন্যতম হতে পারে ‘পারকিনসন’স ডিজিজ’ নামক স্নায়বিক রোগের লক্ষণ।

এই অবস্থাটি বয়স্ক মানুষের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায় এবং এতে তাঁদের রোজের কাজ করতে খুবই অসুবিধা হয়। এটা প্রাণঘাতী অবস্থা নয়, কিন্তু এটা মস্তিষ্কের কোষে ঘটমান একটি পতন প্রক্রিয়ার দিকে নির্দেশ করতে পারে।

হাত কাঁপার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
হাত কাঁপার উপসর্গগুলো খুবই সাধারণ এবং হাতের অনৈচ্ছিক নড়াচড়া স্পষ্টরূপে দেখা যায়। কিন্তু, কখনো কখনো, হাত কাঁপা কিছু উপসর্গের সাথেও জড়িয়ে থাকে যেমন:

  • ধীরে ধীরে একপার্শ্বিক (একদিকে) কাঁপুনি শুরু হয় যেটা অন্য হাতেও ছড়িয়ে পড়ে (দুটো হাতকেই প্রভাবিত করে)।
  • হাতের নড়াচড়ার সাথে কাঁপুনির বৃদ্ধি হতে থাকে।
  • মানসিক চাপ, ক্লান্তি, উত্তেজক পদার্থের ব্যবহার, ইত্যাদির কারণে কাঁপুনির বৃদ্ধি হয়।
  • অ্যাটাক্সিয়ার সাধারণ উপসর্গগুলি (অস্থির গেইট)।
  • উপসর্গগুলি সমস্যাজনক হয়ে ওঠে যখন একজন রোজের কাজ করতে অসুবিধা বোধ করেন যেমন, কাপড় পরা, গ্লাস বা কাপ ধরা, খাওয়া বা দাড়ি কামানো। এমন কি লিখতেও অসুবিধা হয়।


হাত কাঁপার প্রধান কারণগুলো কি কি?
হাত কাঁপা সাধারণত অপরিহার্য কাঁপুনি (স্নায়ুতন্ত্রের পদ্ধতির রোগ) বা পার্কিনসন্স অসুখের কারণে হয়। উভয়ই জিনের রোগ যা জিনের পরিবর্তনের জন্য ঘটে। হাত কাঁপার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • হাইপারথাইরয়েডিজম।
  • মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস।
  • ডায়স্টোনিয়া।
  • বেশী বয়স।
  • পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি।
  • স্ট্রোক।


তবে হাত কাঁপলেই যে মারাত্বক রোগ হয়েছে ব্যাপারটা তেমন নয়। থাকতে পারে অনেক সাধারণ কারণ। যেমন:

  • ঘুমের অভাব
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
  • ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
  • অতিরিক্ত ধূমপান
  • ভিটামিন বি ১২ এর মাত্রা কম।


হাত কাঁপা কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
পারিবারিক ইতিহাসের সাথে বিশদ মেডিকেল ইতিহাস এবং সঠিক চিকিৎসাগত পরীক্ষা হাত কাঁপার নির্ণয় নিশ্চিত করে। কিছু রক্তপরীক্ষা যেমন, সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি), ভিটামিন বি১২ এর মাত্রা, এবং রুটিন অনুসন্ধান যেমন, মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে যা কাঁপুনির জন্য দায়ী অন্যান্য বিষয়গুলোকে শনাক্ত করে।

হাত কাঁপার চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:
হাতের কাঁপুনি সম্পূর্ণ ঠিক হয় না, কিন্তু কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যেগুলো উপসর্গগুলোকে কম করতে সাহায্য করতে পারে:

  • ওষুধ - খাবার ওষুধগুলি যেমন বিটা-ব্লকারস (উদাহরনস্বরূপ, প্রোপ্রানোলোল এবং প্রিমিডোন), অ্যান্টি-সিজার ওষুধ, বোটোক্স এবং দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে যা কাঁপুনির তীব্রতা কম করতে সাহায্য করে।
  • অস্ত্রোপচারগত চিকিৎসা - মস্তিষ্কের গভীর উত্তেজনা এবং থ্যালামোটমি কাঁপুনি কমাতে সাহায্য করে।
  • শারীরিক থেরাপি - ভর ব্যবহার করা, কব্জিতে স্ট্র্যাপ পরা (কব্জির ভর) এবং চাপমুক্ত বলের ব্যায়ামও কাঁপুনির তীব্রতা কম করতে সাহায্য করে।


পরিশেষে, যদি কখনও হাত কাঁপা সমস্যা অনুভূত হয়, তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারন সমস্যাটি একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিটা কাজে প্রতি মুহূর্তে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে