কানে কম শোনা বা বধিরতা কি?
কানে কম শোনা হল শব্দ শোনার ক্ষমতা কমে যাওয়া যা এক বা উভয় কানকে প্রভাবিত করতে পারে। না শোনার অক্ষমতার উপর নির্ভর করে, কানে কম শোনাকে মৃদু, মাঝারি এবং তীব্র হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। খুব কম থেকে না শোনাকে বধিরতা বলে। এই অবস্থাটি কারণের উপর নির্ভর করে স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে।
কানে কম শোনা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটি প্রচলিত সমস্যা। এ সমস্যার সুদূরপ্রসারী কিছু প্রভাব রয়েছে। হঠাৎ করে কানে কম শোনা উচ্চ বা নিম্ন কম্পাংকের হতে পারে এবং এর ফলে কথা বুঝতে পারার ক্ষমতাও কমে যায়।
কানে কম শোনার সমস্যা এক বা উভয় কানেই হতে পারে। এর সাথে সাথে কানে শব্দ হওয়ার সমস্যাও হতে পারে। ঘুম থেকে উঠেই হয়ত কানে না শোনার অভিজ্ঞতা হতে পারে যা রাতে ঘুমানোর সময় ছিল না। অথবা কয়েকদিন যাবত কানে কম শোনার অভিজ্ঞতাও হতে পারে। তবে সময় মতো সেগুলো নির্ণয় করা হলে তাও নিরাময়যোগ্য।
কানে কম শোনা বা বধিরতার সাথে জড়িত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
কানে কম শোনা হল নিজেই একটি উপসর্গ। কানে কম শোনার দিকে ইঙ্গিত করা লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- সশব্দ পরিবেশে শুনতে গেলে কষ্ট হওয়া।
- কথোপকথনের সময় কম প্রতিক্রিয়া।
- খুব জোরে গান শোনা বা টিভি দেখা।
- বারবার অন্যদেরকে এক কথা জিজ্ঞেস করা।
কানে কম শোনা বা বধিরতার প্রধান কারণগুলি কি কি?
কানে কম শোনা সাধারণত স্বাভাবিক বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার কারণে বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, যার ফলে কোষ নষ্ট হয়ে যায়। ৪০ বছর বয়সের শুরু থেকে আপনি শোনার অসুবিধা অনুভব করা শুরু করতে পারেন।
বিভিন্ন কারণে কানে বধিরতা হতে পারে। নিম্নে কারণ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- বংশগত কারণে
- জন্মগত কারণে
- ওয়াক্স বা কানে ময়লা জমা হলে
- কানে বহিরাগত কোন কিছু ঢুকে গেলে
- ইস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে
- শিশুদের বেলায় এডেনয়েড বড় হলে
- টিমপেনিক মেমব্রেনের আঘাত লাগলে বা ফেটে গেলে
- ভাইরাসের কারণে (মাম্স, পক্স্, ইনফ্লুয়েঞ্জা)
- মাথায় বড় কোন আঘাত পেলে
- কোলাহল বা তীব্র শব্দযুক্ত জায়গায় বসবাস
- কানের ভিতরে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধলে
- মধ্যকর্ণের প্রদাহ বা ইনফেকশন
- বার্ধক্যজনিত কারণে
- কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে
- বিকট শব্দে বোমা বিষ্ফোরণ ইত্যাদি।
শিশুদের মধ্যে কানে না শুনতে পাওয়ার অক্ষমতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন:
- জেনেটিক।
- গর্ভাবস্থার সময় সংক্রমণ।
- গর্ভাবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়া।
- জন্মের এক মাসের মধ্যে জণ্ডিস হওয়া।
- জন্মের সময় কম ওজন হওয়া।
- জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাব।
শ্রবণশক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে এমন অন্যন্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মেনিঞ্জাইটিস, মিসেল, মাম্পসের মত রোগ।
- কানে সংক্রমণ হওয়া।
- ওষুধ।
- মাথায় বা কানে ক্ষত।
- কানের খইল।
- কাজের জায়গায় বা বিনোদনমূলক পরিবেশে (কনসার্ট, নাইটক্লাব, পার্টি) আওয়াজের মধ্যে থাকা যার মধ্যে রয়েছে খুব জোর আওয়াজের হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার করা।
কানে কম শোনা বা বধিরতা কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
যদি আপনার মনে হয় যে আপনার শোনার সমস্যা আছে তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন (অডিওলজিস্ট)। আপনার ডাক্তার আপনার কানে কম শোনার কারণ খুঁজে বের করবেন এবং তা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিশ্চিত করবেন। যদি কানের খইল থাকাই কারণ হয় তাহলে কানের খইল সরিয়ে দিলে কানে কম শোনা ঠিক হতে সাহায্য করবে।
ডাক্তার প্রয়োজনে শ্রবণকারী উপকরণ বা ইমপ্লান্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। যদি কানে কম শোনা ঠিক না করা যায় তাহলে ঠোঁট পড়া এবং সাইন ভাষা শিখলে তা অন্যদের সাথে কথোপকথনে সাহায্য করতে পারে।
বাচ্চাদের মধ্যে কানে কম শোনা প্রতিরোধে করনিয়:
- মিসেল এবং মাম্পের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিনেশন করানো।
- ওটিটিস মিডিয়ার মত সংক্রমণের জন্য স্ক্রীনিং।
- বেশি জোরে আওয়াজ/গান না শোনা।
- বাচ্চারা যাতে কোন জিনিস তাদের কানে ঢুকিয়ে না ফেলে তার জন্য খেয়াল রাখা।
- প্রাপ্তবয়স্কদের উচ্চশব্দকারী কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সময় কানের সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত।